করোনায় আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ঈদে ব্যস্ত সময় কাটছে কামার শিল্পীদের
এম এ আলিম রিপন, সুজানগর : অগামী ২১ জুলাই দেশে পালিত হবে পবিত্র ঈদ-উল আযহা। আর এই ঈদ-উল আযহাকে সামনে রেখে সুজানগর উপজেলায় এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কামার শিল্পীরা।
টুংটাং শব্দই বলছে ঈদ লেগেছে কামারের দোকানগুলোতে। দিন রাত চলছে চাপাতি, দা, বটি, ছুরি তৈরি ও শানের কাজ। নাওয়া খাওয়া ভুলে নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের। বছরে তো একটাই সময় কটা দিন মাত্র ব্যস্ত, কুরবানি ঈদের পর তো আর তেমন কোন কাজ থাকে না। তাইতো এই সময়টাকে বেশ উপভোগ করে কামার শিল্পীরা।
সুজানগর শহরের বা গ্রাম এলাকায় কামাররা এখন মহাব্যাস্ত সময় পার করছেন। লাল আগুনের লোহায় কামারদের পিটাপিটিতে মুখর হয়ে উঠেছে কামার দোকান গুলো। টুংটাং শব্দটি তাদের জন্য এক প্রকার ছন্দ। এ ছন্দের তালে চলছে স্বহস্তের জাদুময়ী হাতুড় আর ছেনীর কলা কৌশল।
বাজার থেকে লোহা কিনে সেগুলো আগুনে পুড়ে দা, বটি, চাকু, চাপাতিসহ বিভিন্ন জিনিস পত্র তৈরি করছেন কামাররা। বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রাংশের প্রভাবে কামার শিল্পের দুর্দিন চললেও ঈদ-উল আযহাকে সামনে রেখে জমে উঠে তাদের এই হস্ত শিল্প। সারা বছর এই কোনবানির ঈদের জন্য অপেক্ষায় থাকেন তারা।
সুজানগর উপজেলা মোড়ের আব্দুর রহিম নামে এক কামার শিল্পী বলেন, এমনিতেই করোনায় তেমন কোন কাজ করতে পারি নাই, তাই আশা করছি এ সময়টিতে কিছটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবো। আর যারা কোরবানির পশু জবাই করেন তারা প্রত্যেকে চাপাতি, দা, বটি, ছুরি তৈরি করেন। বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে এ সময়টিতে কাজ বেশি হওয়ার কারণে লাভও বেশি হয়।
কামার শিল্পিদের কাছে চাপাতি ক্রয় করতে আসা সুজানগর পৌরসভার কাচারীপাড়া এলাকার সবুর প্রাং বলেন, এই সময়টায় (ঈদ-উল আযহায়) কোরবানির পশু জবাই দেয়া হয়। যার কারণে কসাই পাওয়া অনেক মুশকিল হয়ে পড়ে। তাই নিজেরাই কোরবানির পশুর কাঁটাছিলা কাজে লেগে যাই। এ সময় দরকার পড়ে গোশত কাটার জন্য চাপাতি, দা ও ছুরির। আর সেগুলো তৈরি করেন কামাররা। তারা দেশীয় প্রযুক্তিতে লোহা আগুনে গরম করে পিটিয়ে তৈরি করেন দা, ছুরি ইত্যাদি। এখানে নিজেদের সুবিধা মত তৈরী করা যায়। এবং এগুলি খুব টেকশই হয়।
এদিকে স্থানীয় কামাররা বাপ-দাদার এ পেশাকে ধরে রাখতে কয়লা ও লোহার দাম নিয়ন্ত্রন ও সহজ শর্তে ঋনের দাবি জানিয়েছেন সরকারের কাছে।
স্থানীয় সোরহাব হোসেন নামক এক কামার জানান গ্রাহকের অর্ডার সামাল দিতে ইতোমধ্যে আমরা দোকানে বাড়তি কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছি। প্রতি কেজি প্রায় ১০০ টাকা দরে ৩ মণ কাঁচা লোহা কিনে এনেছি। শাণ দেওয়ার যন্ত্রে ব্যবহারের জন্য আনা হয়েছে বাড়তি কয়লা ও হাতল।
তিনি আরো জনান, মানভেদে নতুন চাপাতি-১২০০-২০০০টাকা,দা ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা, ছুরি ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা, বটি ৩০০ থেকে ৬০০টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মিন্টু হোসেন নামে এক কামার জানান এ পেশার ভবিষ্যত নিয়ে তারাঁ এখন চিন্তিত, কারণ এ কাজের সময় আওয়াজ হয় বলে সুজানগর পৌর শহরে তেমন কেউ তাদের দোকান ভাড়াও দিতে চায় না। সীমিত আয় দিয়ে তাদের সংসার চলে। যেমন পূঁজি নেই তেমনি আয়ও নেই। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। আগামীতে এ পেশা টিকিয়ে রাখা খুব কষ্ট হয়ে পড়বে বলেও মত প্রকাশ করেন তিনি।