নায্যমূল্য পাচ্ছেন না শিবগঞ্জের আমতা তৈরিকারকরা

প্রকাশিত: জুলাই ১৭, ২০২১; সময়: ৬:৪৪ অপরাহ্ণ |
নায্যমূল্য পাচ্ছেন না শিবগঞ্জের আমতা তৈরিকারকরা

আতিক ইসলাম সিকো, শিবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী আমতা বা আমসত্ব তৈরির ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় একদিকে যেমন কুটির শিল্পের মর্যাদা পাচ্ছেন না। অন্যদিকে তেমনি আমতা বা আমসত্বা তৈরিকারকরা নায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমের রাজধানী নামে খ্যাত শিবগঞ্জ উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামের নারীরা আম থেকে আম সত্বা বা আমতা তৈরি করে থাকে। কিন্তু তারা কোনদিনই নায্য মুল্য পাননি।

জানা গেছে, শিবগঞ্জের ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রায় ৩ হাজার নারী আম থেকে আমতা বা আমসত্বা তৈরি করে থাকে। মনাকষার মানুয়ারা বেগম, মোবারকপুরের বৃষ্টি বেগম, শ্যামপুরের সায়েরা বেগম সহ বিভিন্ন ইউনিয়নের ২০-২৫ জন নারী আঞ্চলিক ভাষায় জানান, আমাদের ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা আম বাগান থেকে আম কুড়িয়ে আনে। সেগুলো পানিতে ধোয়ার পর আগুনে গরম করে বাড়িতে ব্যবহার করা থালি-বাটিতে বা বোলের উল্টা দিকে রুটির মত পাতলা করে লাগিয়ে রোদে শুকাতে হয়। শুকিয়ে যাবার পর রুটির মত করে রাখি।

তারা আর জানান, এক কেজি পাঁকা আম থেকে প্রায় ৩শ’ থেকে ৪শ’ গ্রাম আমতা হয়। সেগুলো গ্রামে আসা ক্রেতার কাছে ৩৫ টাকা থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে থাকেন। সেই টাকা দিয়ে সন্তানদের পড়ার খরচ ও কিছু সংসারের কাজে যোগ করেন। কানসাটের সানুয়ারা বলেন, প্রশিক্ষণ পেলে তৈরি করা আমতাগুলো আরো উন্নতমানের হতো ও ভাল দাম পেতাম।

গ্রামে গ্রামে ফেরিওয়ালা হিসাবে আমতা ক্রয়কারী উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের চামাবাজার এলাকার হাবিবুর রহমান জানান, প্রায় ২৫ বছর ধরে আম মৌসুমে গ্রামে গ্রামে ঘুরে নারীদের নিকট হতে ৪০-৫০ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে ক্রয় করে কানসাটের বিভিন্ন আড়তে ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে থাকেন। এ ব্যবসায় কোনদিন ৫শ’ টাকা, আবার কোনদিন ১ হাজার টাকা উপার্জন হয়।

একই ধরনের কথা জানালেন শ্যামপুরের মতিউর রহমান, কানসাটের মশিউর রহমান, মোবারকপুরের এমালি হোসেন সহ আরো ১৫-২০ জন ফেরিওয়ালা। তারা জানায়, উপজেলায় প্রায় ৩শ’ জন ফেরিওয়ালা শুধু শিবগঞ্জ নয়, পাশর্^বর্তী ভোলাহাট, গোমস্তাপুর ও নাচোল উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ঘুরে আমতা ক্রয় করা হয়। টানা ৪ মাসের এ মৌসুমী ব্যবসা করে সারা বছরের খরচ যোগায়।

তারা আরো জানায়, কানসাট গোপালনগর মোড়ে আমতার আড়তে ক্রয়কৃত আমতা বিক্রি করে থাকেন। সেখানে প্রায় ২০-২৫ টি আড়ত আছে। কুমিল্লার চাঁদপুর থেকে আসা হাবিবুর রহমান জানান, প্রায় ২০ বছর থেকে আম মৌসুমে কানসাটে আমতার আড়ত দিয়ে আমতার ব্যবসা করে আসছেন। প্রতিবছরই প্রায় ২৫ লাখ টাকা আমতা ক্রয় করে ঢাকা, কুমিল্লা, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ সহ বিভিন্ন বড় বড় শহরে বিক্রি করা হয়। সমস্ত খরচ বাদে কেজি প্রতি ৫ টাকা করে লাভ থাকে।

তিনি জানান, এখানে প্রায় ৩০টি আমতার আড়ত আছে। এই ৩০টি আড়তের মালিকরা প্রায় এক ধরনের ব্যবসা করে থাকে। আমতা তৈরিকারক নারীদের প্রশিক্ষণ ও এটিকে কুটির শিল্পের মর্যাদা দেয়ার জন্য জেলা পরিষদের মহিলা সদস্য ও মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী শাহিদা আখতার রেখা সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা কাঞ্চন কুমার জানান, উপজেলা মাসিক উন্নয়ন কমিটির সভায় এ বিষযে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব দেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাকিব আল রাব্বী বলেন, বঙ্গবন্ধু লাইফ ম্যাংগো মিউজিয়ামের আওতায় এনে আমতা তৈরিকারক নারীদের উন্নত প্রশিক্ষণ ও এটিকে কুটির শিল্পের মর্যাদা প্রদান সহ আমতা সংরক্ষণ ও বিদেশে রপ্তানী করার জন্য জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল বলেন, বাংলাদেশের মধ্যে একমাত্র শিবগঞ্জ উপজেলায় আম থেকে আমতা তৈরিকারক নারীদের উন্নত প্রশিক্ষণ ও আমতা তৈরিকে কুটির শিল্পের মর্যাদা প্রদানের মাধ্যমে আমতার নায্য মূল্য পাবার নিশ্চয়তা প্রদানের নারীদের উৎসাহে প্রণোদনা দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে