পাবনায় আ.লীগ নেতাদের মহড়া দেয়া সেই অস্ত্র জব্দ

প্রকাশিত: জুন ১৩, ২০২১; সময়: ৭:২৫ অপরাহ্ণ |
পাবনায় আ.লীগ নেতাদের মহড়া দেয়া সেই অস্ত্র জব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক, পাবনা : অস্ত্র নিয়ে পাবনা গণপূর্ত বিভাগে আওয়ামী লীগের একদল ঠিকাদার নেতার মহড়ার ঘটনায় জেলায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। অপরদিকে মহড়ায় ব্যবহৃত দুইটি অস্ত্র জব্দ করেছে পুলিশ।

শনিবার গভীররাতে বিলুপ্তকৃত পৌর আওয়ামী লীগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এ.আর.খান মামুন এবং যুবলীগ নেতা শেখ লালুর বাড়ি থেকে এই অস্ত্র জব্দ করা হয়। পাবনার পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ জানায়, পাবনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের বিলুপ্ত কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ফারুক হোসেন ও বিলুপ্তকৃত পৌর আওয়ামী লীগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এ.আর.খান মামুন ও পাবনা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শেখ লালু অস্ত্র নিয়ে গত ৬ জুন দুপুর ১২টার দিকে পাবনার গণপূর্ত অফিসে ঢুকে মহড়া দেন।

সেদিন অস্ত্র নিয়ে তারা গণপূর্ত কার্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষে ঢোকেন। সে সময় তাদের আরো কয়েকজন সঙ্গী বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন। দুপুর ১২টা ১২ মিনিটে তারা ফিরে যান। গত শনিবার ১২ জুন সিসিটিভি ফুটেজের বিষয়টি ভাইরাল হলে সারা শহরে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়।

ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পর সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশের পর শনিবার বিষয়টি জানাজানি হয়। শুরু হয় শহরজুড়ে আলোচনা-সমালেচনা। অজ্ঞাত কারণে গণপূর্ত বিভাগ বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে। তবে গতকাল শনিবার পাবনা পুলিশ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। ঐ এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

পাবনা সদর থানার ওসি মো. নাছিম আহমেদ জানান, গত ৬ জুন রোববার দুপুরে পাবনা সদর উপজেলা জেলা আওয়ামী লীগের বিলুপ্ত কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আলহাজ ফারুক হোসেন ওরফে হাজী ফারুক, পাবনা পৌর আওয়ামী লীগের স্থগিত করা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এ আর খান মামুন ও পাবনা জেলা যুবলীগ আহবায়ক কমিটির সদস্য শেখ লালুর নেতৃত্বে ৮ থেকে ৯ জনের একদল ব্যক্তি কমান্ডো স্টাইলে শহরের ছাতিয়ানীতে অবস্থিত পাবনা গণপূর্ত অফিসে ঢোকেন। এদের মধ্যে মামুনের হাতে একটি শটগান এবং অপর একজনের হাতে আরেকটি অস্ত্র ছিল। তবে বিষয়টি নিয়ে গণপূর্ত বিভাগ কোন অভিযোগ না করায় কোন ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে পাবনা সদর থানায় একটি জিডি করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণপূর্ত বিভাগের এক কর্মচারী জানান, ঐ ঘটনার পর থেকে আমাদের মধ্যে চরম আতংক বিরাজ করছে। সে দিনের ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, এমন কমান্ডো স্টাইলে ওনারা ঢুকেছেন তাতে সবাই ভয় পেয়েছেন। দুই-একজন বাদে ঢোকার সময় সবার মুখে মাস্ক এবং কয়েকজনের হাতে আগ্নেয়ায়াস্ত্র ছিল। তারা সবাই নির্বাহী প্রকৌশলীর খোঁজ করেন এবং অফিসের অপর এক প্রকৌশলীর টেবিলে অস্ত্র রেখে নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে ঢোকেন। এ সময় নির্বাহী প্রকৌশলী অফিসের বাইরে ছিলেন। যারা রোববার অস্ত্র নিয়ে অফিসে এসেছিল তারা কেষ্টপুর মহল্লার লোক এবং ঠিকাদারী করে। এছাড়া অধিকাংশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে তিনি জানান।

পাবনা গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনার দিন আমি অফিসে ছিলাম, প্রথমে তারা আমার কাছে আসেন এবং আমার টেবিলে অস্ত্র রেখে নির্বাহী প্রকৌশলীর খোঁজ করেন। তবে তারা কারো সঙ্গে কোন খারাপ আচরণ করেননি। এর চেয়ে আর বেশী কিছু বলতে তিনি অপরাগতা প্রকাশ করেন। তিনি নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।

এ ব্যাপারে গণপূর্ত বিভাগ পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনোয়ারুল আজিম বলেন, ৬ জুন আমি অফিসের বাইরে ছিলাম। পরে অফিসে এসে সিসিটিভি ফুটেজে অস্ত্র হাতে ঐ সব ব্যক্তিকে দেখেছি। এছাড়া অফিসের লোকজনও আমাকে বিষয়টি সম্পর্কে বলেছেন। এই সশস্ত্র মহড়া ছাড়া পরবর্তিতে তারা কোন হুমকি ধামকি দেননি।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও গণপূর্ত বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলেও তিনি জানান।

পাবনার পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান বলেন, গণপূর্ত বিভাগ বিষয়টি নিয়ে কোন অভিযোগ করেনি বা জানায়নি। ফেসবুকে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে পুলিশ নিজ উদ্যোগে কাজ করছে। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।

পাবনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, বিষয় সম্পর্কে তাকে জানানো হলেও সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে প্রতিকার বা ব্যবস্থা নিতে বলা হয়নি।

এ ব্যাপারে পাবনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের স্থগিত কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আলহাজ্ব ফারুক হোসেন ওরফে হাজী ফারুক বলেন, তার কোন দোষ নেই। তিনি গণপূর্ত বিভাগে কোন কাজও করেন না। নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজনের কথা বলে মামুন ও শেখ লালু তাকে ডেকে নিয়ে গেছেন।

এ বিষয়ে জেলা যুবলীগ আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শেখ লালু বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে আমার লাইসেন্স করা অস্ত্র স্থানীয় থানায় জমা দিয়েছি।

পাবনা পৌর আওয়ামী লীগের স্থগিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এ.আর.খান মামুন বলেন, লাইসেন্স করা অস্ত্র তার কাছে সব সময় থাকে। পুলিশ চাওয়ায় আমি সেটি থানায় জমা দিয়েছি।

অপর একটি সূত্র জানায়, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের আবাসিক প্রকল্প গ্রীণ সিটিসহ নানা প্রকল্পে গণপূর্ত বিভাগের প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার কাজ চলছে। এ সব প্রকল্পের কাজের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে নিজেদের ক্ষমতাবান প্রমাণ করতেই এই মহড়া।

সূত্র আরও জানায়, গণপূর্ত বিভাগের বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনোয়ারুল আজিম ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে নানা অপকর্ম করছেন। এ ঘটনায় তারও ইন্ধন থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকেই। এত বড় ঘটনার পরও চেপে যাওয়ায় বিভিন্ন মহলে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে