পাবনায় গণপূর্ত অফিসে আ.লীগ নেতাদের অস্ত্রের মহড়া

প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২১; সময়: ৭:৪৮ অপরাহ্ণ |
পাবনায় গণপূর্ত অফিসে আ.লীগ নেতাদের অস্ত্রের মহড়া

নিজস্ব প্রতিবেদক, পাবনা : পাবনা গণপূর্ত অফিসে দলবল নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের অস্ত্রের মহড়ার ঘটনাটি সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছে। সেই ভিডিও ফুটেজের বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় শহরজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। বিষয়টি টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে।

তবে আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, বৈধ অস্ত্র নিয়ে নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাবার পথে তারা নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে দেখা করতে যান। বিষয়টি ঠিক হয়নি বলেও তারা জানান।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, গণপূর্ত ভবনে ঢুকছেন পাবনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ফারুক হোসেন। তার পেছনে অস্ত্র হাতে পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ.আর. খান মামুন। সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে আরও দেখা যায়, পাবনা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শেখ লালুও তাদের সাথে ঢুকছেন গণপূর্ত কার্যালয়ে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাবনায় গণপূর্ত বিভাগে অস্ত্র নিয়ে আওয়ামী লীগের একদল ঠিকাদার নেতার মহড়ায় আতঙ্কিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন ওই কার্যালয়ের কর্মীরা। গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারা এনিয়ে পুলিশে কোনো অভিযোগ করেননি।

এদিকে, ক্ষমতাসীন দলের ওই নেতারা ঘটনার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তাদের ভাষ্যমতে, লাইসেন্স করা অস্ত্র নিয়ে ওই দপ্তরে গিয়েছেন তারা। এটা তাদের ‘ভুল’ হয়েছে বলে জানান তারা।

গত ৬ জুন এই ঘটনা ঘটলেও সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা একটি ভিডিও সম্প্রতি প্রকাশ হলে তা আলোচনায় আসে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, গত ৬ জুন দুপুর ১২টার দিকে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ফারুক হোসেন ওরফে হাজী ফরুক জামার হাতা গুটিয়ে দলবল নিয়ে পূর্ত ভবনে ঢুকছেন।

তার পেছনে শটগান হাতে পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ.আর খান মামুন এবং জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শেখ লালু। অস্ত্র নিয়েই তাদেরকে কার্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষে ঢুকতে দেখা গেছে। ওই সময় তাদের সঙ্গীরা বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন। দুপুর ১২টা ১২ মিনিটে তারা ফিরে যান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গণপূর্ত কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, এসব মহড়ায় তাদের আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রভাব বলয় তৈরি করে বিভিন্ন কাজের দরপত্র নিজেদের আয়ত্তে নিতে চেষ্টা করেন ক্ষমতাসীন দলের ঠিকাদার নেতারা। তাদের দাপটে অনেক ঠিকাদাররা দরপ্রস্তাব জমা দিতে পারছেন না।

কোনো অভিযোগ না দেওয়ার বিষয়ে কর্মকর্তারা বলেন, আওয়ামী লীগ নেতারা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এলেও তারা কোনো অসদাচরণ এবং হুমকি দেননি।

পাবনা গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, “ঠিকাদাররা আমার কক্ষে এসেছিলেন। নির্বাহী প্রকৌশলী স্যারের কাছে এসেছেন বলে জানান। অস্ত্র ছিল। খারাপ আচরণ বা গালাগালি করেননি।”

তিনি আরও বলেন, “আমার কাছে কোন কিছুই বলেন নাই। পাবনায় নতুন যোগ দিয়েছি। কোন বিষয়ে আমার জানা নেই।”

নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিম বলেন, “ঘটনার সময় আমি অফিসের বাইরে ছিলাম। তবে সিসিটিভি ফুটেজে অস্ত্র হাতে অনেকে এসেছে দেখেছি। তারা আমাকে সরাসরি বা ফোনে কোনো হুমকি দেয়নি। কথাও হয়নি। তাই আমরা লিখিত অভিযোগ করিনি।”

সদলবলে গণপূর্ত বিভাগে যাওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হোসেন বলেন, “আমি গণপূর্ত বিভাগের ঠিকাদার নই। বিল সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলতে মামুন ও লালু আমাকে সেখানে নিয়ে গিয়েছিল। তবে এভাবে যাওয়া আমাদের উচিত হয়নি”।

মামুন বলেন, “নিরাপত্তার স্বার্থে বৈধ অস্ত্র নিয়ে আমি ব্যবসায়িক কাজে ইটভাটায় যাচ্ছিলাম। পথে নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিমের সঙ্গে কথা বলতে গণপূর্ত বিভাগে যাই। কিন্তু তিনি না থাকায় আমরা ফিরে আসি। অন্য কোন উদ্দেশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন করা হয়নি। প্রতিপক্ষ ঠিকাদাররা বিষয়টিকে অন্যদিকে নেওয়ার চেষ্টা করছে।”

সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা যায়, পাবনা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শেখ লালু ঢুকছেন গণপূর্ত কার্যালয়ে। একই ধরনের কথা বলেছেন যুবলীগ নেতা শেখ লালু।

তিনি বলেন, “ভুলবশত আমরা অস্ত্র নিয়ে অফিসে ঢুকে পড়েছিলাম। প্রভাব দেখিয়ে বিভিন্ন কাজ নিজেদের আয়ত্ত্বে নেওয়ার প্রশ্নই ওঠেনা।” তিনি সব ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ।

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম জানান, “বিষয়টি শুনেছি। তদন্ত চলছে।

পাবনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ ঘটনা সম্পর্কে শুনেছেন বলে জানান। তিনি বলেন, “আমি ঘটনাটি শুনেছি। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী বিষয়টি তদন্ত করছে। তাদের সুপারিশ অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

 

  • 241
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে