চাঁপাইনবাবগঞ্জে বেড়েছে বজ্রপাতে মৃত্যু

প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২১; সময়: ২:০৮ অপরাহ্ণ |
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বেড়েছে বজ্রপাতে মৃত্যু
নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ : আমের রাজধানী খ্যাত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে দিন দিন বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা বেড়ে গেছে। গত ৩/৪ মাসে সদর উপজেলাসহ বরেন্দ্র ও আঞ্চলিক এলাকায় বজ্রপাতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। কয়েকদিন আগেই একই দিন ৩ জন মারা গেছে বজ্রপাতে। বজ্রপাত বেড়ে যাবার কারণ, মানুষের অসচেতনতা, গাছপালা নিধন, লম্বা তালগাছ, নারিকেল গাছ, সুপারিগাছসহ এ জাতীয় গাছ নিধনসহ প্রকৃতির নানা অনিয়মের বলি হচ্ছে  বজ্রপাতে মৃত্যু। এ ক্ষেত্রে বাড়ির অভিভাবকদের জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে বলে মনে করছেন সূধী মহল।
চলতি বছরের ৩ মাস এপ্রিল, মে ও জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ৭০ দিনে বজ্রাঘাতে ১৭৭ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এই সময়ে একই কারণে আহত হয়েছেন আরো ৪৭ জন। এর মধ্যে ১২২ জনেরই মৃত্যু হয়েছে কৃষি কাজ করতে গিয়ে। যা মোট মৃত্যুর ৬৯ শতাংশ। শুক্রবার সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম নামের একটি সংগঠনের প্রকাশিত পরিসংখ্যানে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। সংগঠনটি বলছে, বজ্রাঘাতে হতাহতের এই পরিসংখ্যান করা হয়েছে জাতীয় দৈনিক, স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টালের নিউজ ও টেলিভিশনের স্ক্রল পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৭৭ জনের মধ্যে ১২২ জনই মারা গেছেন কৃষি কাজ করতে গিয়ে। যা মোট মৃত্যুর ৬৯ শতাংশ। এক তৃতীয়াংশেরও বেশি। এছাড়া বজ্রপাত ও কাল বৈশাখী ঝড়ের মধ্যে আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রাঘাতে মারা গেছেন ১৫ জন, ঘরেই অবস্থানকালে মারা গেছেন ১০ জন, নৌকায় মাছ ধরার সময় ৬ জন, মাঠে গরু আনতে গিয়ে ৫ জন, মাঠে খেলা করার সময় ৩ জন ও বাড়ির আঙিনায়-উঠানে খেলা করার সময় ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এ ছাড়া ভ্যান, রিকশা চালানোর সময় ২ জন এবং গাড়ির ভেতরে অবস্থানকালে বজ্রপাতে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্য ৭ জনের অবস্থান নিশ্চিত হতে পারেনি সংগঠনটি। বজ্রাঘাতে মৃতদের লিঙ্গভিত্তিক (শিশুসহ) বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এদের মধ্যে পুরুষ মারা গেছে ১৪৯ এবং নারী ২৮ জন। নারী ও পুরুষের মধ্যে শিশুর সংখ্যা ১৩ জন; যাদের ৬ জন ছেলে ও মেয়ে ৩ জন। সংগঠনটি বলছে, চলতি বছর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাস, এমনকি মার্চ মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত দেশের কোথাও বজ্রাঘাতে মৃত্যুর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ৩১ মার্চ বজ্রাঘাতে মৃত্যুর ঘটনা শোনা যায়। এর পর থেকে চলতি জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত মারা যায় ১৭৭ জন। যার মধ্যে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই মারা গেছেন ৬৫ জন। মৃত্যুর পাশাপাশি এ বছর বজ্রাঘাতে আহত হয়েছেন ৪৭ জন। এর মধ্যে ৪০ জন পুরুষ ও ৭ জন নারী রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবছর বজ্রপাতের হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে সিরাজগঞ্জ জেলা। এই জেলায় চলতি বছরের মে এবং জুন মাসেই মারা গেছে ১৮ জন। এছাড়া, চলতি বছরের ৪ মাসে জামালপুরে ১৪ জন, নেত্রকোণায় ১৩ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৬ ও চট্টগ্রামে ১০ জন মারা গেছে। বজ্রাঘাতে মৃত্যু কমাতে কয়েকটি দাবি তুলে ধরেছে সংগঠনটি। দাবিগুলো হচ্ছে, বজ্রপাতের ১৫ মিনিট আগেই আবহাওয়া অধিদফতর জানতে পারে কোন কোন এলাকায় বজ্রপাত হবে। এই তথ্যকে মোবাইল ফোনে এসএমএসের এলার্টের মাধ্যমে মানুষকে জানানো। বজ্রাঘাতের হার অনেক বেশি। মানুষের জীবন রক্ষার্থে এই খাতে বরাদ্দ বাড়ানো। মাঠ, হাওর-বাঁওড় কিংবা ফাঁকা কৃষি কাজের এলাকায় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করতে হবে। যার ওপরে বজ্র নিরোধক দন্ড স্থাপন করতে হবে।
বিদেশ থেকে আমদানির ক্ষেত্রে থান্ডার প্রোটেকশন সিস্টেমের সকল পণ্যে শুল্ক মওকুফ ও সরকারিভাবে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি বজ্র নিরোধক দন্ড স্থাপন করতে হবে। বজ্র নিরোধক ব্যবস্থা বা থান্ডার প্রটেকশন সিস্টেম যুক্ত না থাকলে নতুন কোনো ভবনের নকশা অনুমোদন করা যাবে না।
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে