তবুও এখানে জীবন চলে জীবনের প্রয়োজনে

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৪, ২০২০; সময়: ৮:৪৯ অপরাহ্ণ |
তবুও এখানে জীবন চলে জীবনের প্রয়োজনে

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : সকাল গড়িয়ে দুপুর হতে চলেছে জানা নেই আদৌ রান্না হবে কি না। তরকারি তো দূরের কথা এবেলার দু’মুঠো চালও ঘরে নেই।

দিনের আয়ে দিন চলে। কাজ না পেলে ধারদেনার বোঝা বাড়ে। তাই বাধ্য হয়ে কেউ দু’বেলা কিংবা একবেলা খেয়ে দিন কাটায়। পরিবার পরিজন নিয়ে এমন সংকট, দিন আনা-দিন খাওয়া মানুষগুলোর নিত্য দিনের সঙ্গী। কষ্টের দিনগুলো কিছুতেই শেষ হতে চায় না তাদের। তাই কাজ করলে খাবার জোটে আর না করলে আধপেটে থাকতে হয় ভোলার চরাঞ্চল আর বেড়ি বাঁধের মানুষগুলোর।

চরমনোহর, চরলিউলিন, চর মোতাহার, ধলারচর, ঢালচর, চরপাতিলা, কলাতলীর চর, চরনিজাম, চর কুকরী মুকরী, শিকদারের চরের মত এমন আরো অনেক চরের মেঠোপথ পাড়ি দিতে হয় পায়ে হেঁটে। নেই কোন যানবাহন। তবুও এখানে জীবন চলে জীবনের প্রয়োজনে। এখানে দিনে পর দিন বেঁচে থাকে অভাবী মানুষের অনাহার আর অর্ধাহারের গল্প।

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন চরাঞ্চল আর বেড়িবাঁধ ঘুরে সেখানকার মানুষের সঙ্গে আলাপকালে উঠে আসে এমন সব জীবন চালিয়ে নেয়া কষ্টের কথা। এসময় কথা হয় চরফ্যাশন উপজেলার বকসীঘাটের খেয়া নৌকার মাঝি মোঃ জামালের সাথে। দিনভর তেতুলিয়ার বুকে খেয়া পারাপারে যাত্রীর অপেক্ষায় সময় কাটে তার। দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থেকে যে যাত্রীর দেখা মিলে তা পার করেই সংসার চলে। এপারে বকসীঘাট ওপারে বাংলাবাজার। চার-পাঁচজন যাত্রী হলেই ছোট নৌকাটি এপার থেকে ওপারে নিয়ে যান মোহাম্মদ আলী। দিনভর নৌকার দাঁড় টেনে দুশ’ থেকে তিনশ টাকা মেলে। এ দিয়েই কোনোমতে চালিয়ে নিতে হয় সংসার।

বেড়িবাঁধের ওপরে একটি দোকানের সামনে মানুষের আড্ডা চলছে। তাদের সেই আড্ডায় সামিল হতেই বেরিয়ে আসে আরো কিছু কষ্টের গল্প। কর্মহীন মানুষগুলো কেউ ছোটো ব্যবসা করে, কেউ নৌকা চালিয়ে, কেউ মাছ ধরে, কেউ কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। এলাকায় কোনো কাজ না থাকায় অনেকে পাড়ি জমিয়েছে ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলায়। শীত মৌসুম সামনে রেখে অনেকে দীর্ঘ সময়ের জন্য ইটভাটার কাজে ছুটেছে। এসময় কথা হয় চর-মোতাহারের বাসিন্দা নূরে আলম, জাবির হোসেন, মইনুল ইসলাম, মজিবুল্লাহ, হাবিবুর রহমান, মহিউদ্দিন, আবদুস সামাদসহ আরো অনেক শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে। তারা জানান, শীত মৌসুমে এলাকার মানুষের কষ্টটা আরো বেশি। একবেলা ভাত যোগাড়ের কষ্ট কতটা তীব্র এই এলাকার মানুষ তা হাড়ে হাড়ে টের পায়। তাই শীত নিয়ে চিন্তা ভাবনায় দিন কাটছে এসকল খেটে খাওয়া মানুষের। তবে এদেরকে পুনর্বাসন করার ব্যবস্থা নেবেন সরকার এবং দাতা গোষ্ঠীগুলো এমনটাই প্রত্যাশা এসব মানুষের।

এদিকে বেসরকারি এনজিও গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মোঃ জাকির হোসেন মহিন বলেন, গ্রামীণ উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ভোলার বিভিন্ন চরে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় তারা প্রশিক্ষণ ও উপকরণ সহায়তা দিয়ে ৫০ হাজার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। এছাড়া ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পের আওতায় আরো ১ লক্ষ ৭০ হাজার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হয়েছে। এ সকল প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষের জীবন মান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে তারা কাজ করে যাবেন বলে জানান সংস্থাটির প্রধান এই কর্মকর্তা।

ভোলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক জানান, চরাঞ্চলের প্রান্তিক মানুষের দারিদ্র দূরিকরণে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এরমধ্যে ভিজিডি প্রকল্প, ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ন প্রকল্প, গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ এবং ঋণদান কর্মসূচী রয়েছে। এছাড়া একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প গ্রামীণ প্রান্তিক মানুষের মধ্যে ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের মনোভাব গড়ে তুলছে। প্রতিটি এলাকায় এই প্রকল্প চালু করা হয়েছে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও এ কাজে সম্পৃক্ত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে