বদলগাছীতে প্রেমের ফাঁদে ফেলে নাজমুলকে হত্যা

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৩, ২০২০; সময়: ৪:০২ অপরাহ্ণ |
বদলগাছীতে প্রেমের ফাঁদে ফেলে নাজমুলকে হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বদলগাছী : নওগাঁর বদলগাছীতে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য প্রেমের ফাঁদে ফেলে শিশু নাজমুল (১৪) কে হত্যা করা হয়েছে। অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে বদলগাছী থানা পুলিশ। আসামীরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দিয়েছে।

বদলগাছী থানা ও প্রেস রিলিজ সূত্রে জানা যায়, গত ৬ নভেম্বর উপজেলার পূর্ব খাদাইল গ্রামের শিশু নাজমুল হোসেন তার পরিবারের সাথে প্রতিবেশী চাচার মেয়ের বিয়েতে যায়। খাওয়া-দাওয়া শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পরিবারের সদস্যরা নাজমুলকে দেখতে না পেয়ে তার মোবাইলে ফোন করে। কিন্তু মোবাইল ফোনটি বন্ধ পায়। পরবর্তীতে তাঁর পরিবার আত্মীয়-স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করেও কোনো খোঁজ না পাওয়ায় এলাকায় মাইকিং করে।

পরের দিন (৭ নভেম্বর) সকাল ১০ টার দিকে অপহরণকারীরা নাজমুলের ফোন থেকে তার বাবার মোবাইলে ফোনে ফোন করে ১৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। নাজমুলের বাবা মুক্তিপণের ঐ টাকা দিতে রাজি হয় এবং বিকাশ নম্বর চায়। অপহরণকারীরা পরে দিবে বলে ফোন কেটে দেয়। কিন্তু তারা আর যোগাযোগ করেনি।

পরবর্তীতে ৮ নভেম্বর নাজমুলের বাবা বাদী হয়ে বদলগাছী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৫। আসামীরা হলো বদলগাছী থানার খাদাইল গ্রামের আজম মন্ডলের ছেলে মো. মিশু মন্ডল(১৯), মিশুর বাবা মো. আজম মন্ডল(৪৮), মিশুর মা মোছা. রিনা বেগম এবং নওগাঁ সদর থানার রাইঝোড় গ্রামের মৃত উম্মত মন্ডলের ছেলে মো. সোহাগ হোসেন (৩৫) সহ অজ্ঞাতনামা আরো ৪/৫ জন। পুলিশ ঐ চারজন আসামীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে।

এমতাবস্থায় গত ১১ নভেম্বর সকাল সাড়ে নয় টার দিকে জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর থানার কেসের মোড়ের পশ্চিমে রেলগেটের পার্শ্বের একটি ডোবাতে নাজমুলের মৃতদেহ বস্তাবন্দি অবস্থায় উদ্ধার করে আক্কেলপুর থানা পুলিশ।

প্রযুক্তির সহায়তায় এবং বিভিন্নভাবে ব্যাপক তৎপরতার মাধ্যমে পুলিশ ঘটনার সাথে আসামী মিশু মন্ডলের সম্পৃক্ততা খুঁজে পায়। এবং এক পর্যায়ে মিশু মন্ডল অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের সাথে তার জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।

আসামী মিশু মন্ডল, পূর্ব খাদাইল গ্রামের শফিকুল ইসলামের স্ত্রী মোছা. পিংকি বেগম (৩০), একই গ্রামের কালাম হোসেনের ছেলে হুজাইফা (১৪) ও চকতাহের গ্রামের মিলন হোসেনের ছেলে সাজু আহম্মেদ ওরফে সবুজ (১৪) কে সাথে নিয়ে অপহরণপূর্বক মুক্তিপণ আদায়ের একটি গ্যাং গড়ে তোলে।

এই গ্যাং এর সদস্য পিংকি বেগম এর কাজ ছিলো মোবাইল ফোনে কাউকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে নির্জন স্থানে ডেকে নিয়ে আসতো। আর মিশু মন্ডল, হুজাইফা ও সাজু তাকে আঘাতপূর্বক অজ্ঞান করে গোপন স্থানে আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবী করতো।

নাজমুলকে পিংকি বেগম কৌশলে মোবাইল ফোনে প্রেমের ফাঁদে ফেলে গত ৬ নভেম্বর আনুমানিক বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নারিকেল বাড়ী রোডে ডেকে নিয়ে যায়। সেখান থেকে আবার মোবাইল ফোনে জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর থানার কেসের মোড়ে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকেই ওৎ পেতে ছিল মিশু মন্ডল, হুজাইফা ও সাজু। তারা তিনজন মিলে নাজমুলকে অজ্ঞান করার চেষ্টাকালে নাজমুল খুন হয়। নাজমুলের মৃতদেহ গোপন করার জন্য মিশু মন্ডল তার বাড়ী থেকে একটি প্লাস্টিকের বস্তা নিয়ে আসে। এরপর নাজমুলের মৃতদেহ ঐ বস্তায় ভরে জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর থানার কেসের মোড়ের পশ্চিমে রেলগেটের পাশের একটি ডোবাতে ফেলে দেয়।

রিমান্ডে থাকা মিশু মন্ডল, পিংকি বেগম, মো. হুজাইফা ও মো. সাজু আহম্মেদ ওরফে সবুজ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে