মান্দায় ক্লিনিকে অপচিকিৎসায় মাতৃত্ব হারালেন গৃহবধূ

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২০; সময়: ৩:৪৫ অপরাহ্ণ |
মান্দায় ক্লিনিকে অপচিকিৎসায় মাতৃত্ব হারালেন গৃহবধূ

নিজস্ব প্রতিবেদক, মান্দা : প্রসব বেদন নিয়ে ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছিলেন ইসমত আরা (২৫) নামে এক নারী। নরমাল ডেলিভারীর যাবতীয় উপসর্গও ছিল। এরপরও জোর করে সিজারিয়ান করে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ক্রটিযুক্ত অপারেশনে পেটের ভেতরে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ওই প্রসূতিকে দ্রুত পাঠিয়ে দেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। রামেক হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ড ওই প্রসূতিকে বাঁচাতে তার জরায়ু কেটে দেন। আর এতে চিরদিনের জন্য মাতৃত্ব হারান ওই নারী।

ঘটনাটি ঘটেছে গত ২৮ অক্টোবর সকাল ৮ টার দিকে নওগাঁর মান্দা উপজেলার প্রসাদপুর বাজারের ফয়সাল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। ঘটনার শিকার ইসমত আরা উপজেলার কাঁশোপাড়া ইউনিয়নের নাপিতপাড়া গ্রামের মোয়াজ্জেম হোসেনের স্ত্রী।

রামেক হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ড কর্তৃপক্ষের দেয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে অপারেশনের সময় প্রসূতির একটিভ ব্লিডিং পয়েন্ট বন্ধ করা হয়নি। ফলে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে ওই নারীর পেটে তা জমা হতে শুরু করে। এতে তার জীবন শঙ্কা দেখা দেয়। এ কারণে তাকে বাঁচাতে জরায়ু কেটে ফেলা হয়েছে। অনভিজ্ঞ চিকিৎসক ও ক্রটিপূর্ণ অপারেশন এর প্রধান কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী ওই নারীর স্বামী মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, স্ত্রী ইসমত আরার নরমাল ডেলিভারীর যাবতীয় লক্ষণ থাকলেও ক্লিনিক মালিক জিয়াউর রহমান জিয়া জোর করে তার অপারেশন করিয়েছেন। এসময় আমার স্ত্রী অপারেশন করাতে অনিহা প্রকাশ করলে তাকে চড়থাপ্পড় মারেন ওটিতে কর্মরত এক নারী। অপারেশনের পর আমার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে দুই ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়। পরবর্তীতে অবস্থার আরও অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

তিনি আরও জানান, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫দিন চিকিৎিসার পর আমার স্ত্রীকে রিলিজ দেয়া হয়েছে। এ কয়েকদিনের চিকিৎসায় ব্যয় হয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। বর্তমানে স্থানীয় এক চিকিৎসকের মাধ্যমে প্রতিদিন স্ত্রীর ড্রেসিং করাতে হচ্ছে। এতে ব্যয় হচ্ছে অর্থ। এ অবস্থায় স্ত্রী ও ১৯ দিনের শিশু কন্যাকে নিয়ে চরম বেকায়দার মধ্যে আমার দিন কাটছে। ক্লিনিকের এসব অপচিকিৎসা বন্ধের জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে ফয়সাল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক জিয়া ওই প্রসূতির সিজারিয়ান করার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, প্রেসার কমে যাওয়ার কারণে তাকে দ্রুত রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। বর্তমানে রোগিটি সুস্থ রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সিজারিয়ানে অংশ নেয়া চিকিৎসক এসএম হাবিবুল হাসান এ প্রসঙ্গে বলেন, সেলাই কেটে যাওয়ার কারণে একটিভ ব্লিডিং পয়েন্ট দিয়ে রক্তক্ষরণ হতে পারে। তিনি দাবি করেন কাজ করতে গিয়ে এ ধরণের ছোটখাটে দু’একটি দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

কোন মেডিকেল কলেজ থেকে লেখাপড়া করেছেন জানতে চাইলে এ চিকিৎসক বলেন, রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নবম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। সাধারণ চিকিৎসক হিসেবে পাশ করলেও তিনি এখন সবধরণের অপারেশন করছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মনের সাহস ও অভিজ্ঞতা থাকলে সবকিছুই সম্ভব।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বিজয় কুমার রায় বলেন, খোঁজ নিয়ে জেনেছি হাবিবুল হাসান একজন সাধারণ চিকিৎসক। তার অদক্ষ হাতে এ ধরণের অপারেশন করা উচিত নয়। উক্ত ঘটনার বিষয়ে এখন পর্যন্ত আমার দপ্তরে কেউ অভিযোগ দেননি। তবে এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

  • 8
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে