আক্কেলপুর উপজেলায় উদ্ধারকৃত বিষ্ণু মূর্তি বদলগাছীর পাহাড়পুর জাদুঘরে হস্তান্তর

প্রকাশিত: নভেম্বর ৯, ২০২০; সময়: ৮:০৭ অপরাহ্ণ |
আক্কেলপুর উপজেলায় উদ্ধারকৃত বিষ্ণু মূর্তি বদলগাছীর পাহাড়পুর জাদুঘরে হস্তান্তর

নিজস্ব প্রতিবেদক, বদলগাছী : জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার দেওড়া গ্রামের ব্রজেন্দ্রনাথ সাহার বাড়িতে থাকা প্রাচীনকালের বিশাল আকারের বিষ্ণু মুর্তিটি বদলগাছীর ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার জাদুঘরে হস্তান্তর করা হয়েছে।

রোববার বিকেল সাড়ে তিনটায় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সহযোগীতায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন র‌্যাব-৫ জয়পুরহাট ক্যাম্পের সদস্যরা মূর্তিটি উদ্ধার করেন।

জয়পুরহাট র‌্যাব ক্যাম্প থেকে রোববার রাত সাড়ে নয়টায় পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মূর্তি উদ্ধারের এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে র‌্যাব দাবি করেছে, উদ্ধারকৃত বিষ্ণু মূর্তিটি কষ্টি পাথরের। মূর্তিটির ওজন ৩৮০ কেজি। মূর্তিটি ৯৯৫ থেকে ১০৪৩ খ্রীস্টাব্দে পাল বংশীয় প্রথম রাজা মহীপালের আমলের। এটি আক্কেলপুর উপজেলার দেওড়া গ্রাম এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। মূর্তিটির মূল্য ৭৫ কোটি টাকা। সোমবার বিকালে মূর্তিটি বদলগাছীর ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার জাদুঘরে হস্তান্তর করা হয়েছে।
আক্কেলপুর উপজেলা থেকে দক্ষিণে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে দেওড়া গ্রামের অবস্থান।

এ গ্রামের নামকরণ নিয়ে রয়েছে নানা কল্পকথা। হাজার বছর আগে এখানে পাল বংশের রাজা দেও পালের রাজধানী ছিল বলে স্থানীয়ভাবে প্রচলিত রয়েছে। সেই নামানুসারে গ্রামটির নাম দেওড়া হয়েছে। এক সময় গ্রামটি অনেক উঁচু ছিল। ধীরে ধীরে বসতি গড়ে ওঠায় এখন সমতলে পরিণত হয়েছে। এখনো গ্রামের ভিটামাটি অনেক উঁচু রয়েছে। এসব ভিটে মাটির নিচে অসংখ্য ইটের টুকরা রয়েছে। একারণে তেমন ফসল হয় না। ভিটেমাটিতে কোদালের কোপ দিলেই ইটের টুকরা ও ইটের গাঁথুনি বেড়িয়ে আসে। এসব ইটের টুকরা ও ইটের গাঁথুনি প্রাচীন আমলের। দেওড়া গ্রামের ব্রজেন্দ্রনাথ সাহার বাড়ির আঙিনায় পাথরের বিষ্ণু মূর্তি রয়েছে। অনেক বছর আগে গ্রামের একটি মন্দিরের পাশে মূর্তিটি পাওয়া গিয়েছিল। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া দাবি করে মূর্তিটি বজেন্দ্রনাথ সাহা তাঁর বাড়িতে রেখেছিলেন।

সম্প্রতি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা দেওড়া গ্রামটি পরির্দশন করেন। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা গ্রামটি থেকে প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশনের কিছু নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যান।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের বগুড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ে থেকে ব্রজেন্দ্রনাথ সাহাকে পত্র দিয়ে মূর্তিটি পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার জাদুঘরে হস্তান্তরের জন্য বলা হয়।

ওই চিঠিটির অনুলিপি আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এসএম হাবিবুল হাসানকে দেওয়া হয়।

এরপর স্থানীয় প্রশাসন মুর্তিটি উদ্ধারের প্রয়োজনীয় সহায়তা করতে সংশ্লিষ্টদের পত্র দিয়েছিল। এরপর মূর্তিটি উদ্ধার করে র‌্যাব। ইতিপূর্বে দুই দফায় মূর্তিটি চুরি হয়েছিল। তবে কেউ মুর্তিটি হজম করতে পারেনি। এরপর থেকেই ব্রজেন্দ্রনাথ সাহা তাঁর বাড়ির আঙিনায় মূর্তিটি সিমেন্টের ঢালাই দিয়ে রেখেছিলেন। স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের বাঁধার কারণে সেখান থেকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসন একাধিকবার চেষ্টা করে মূর্তিটি নিয়ে যেতে পারেনি।

ব্রজেন্দ্রনাথ সাহা বলেন, বিষ্ণু মূর্তিটি সিমেন্টের তৈরী। তাঁরা অনেক আগে মন্দিরের পাশে পেয়েছিলেন। বাপ-দাদার আমল থেকে মুর্তিটি তাঁদের কাছে রয়েছে। অনেক আগে মূতিটি চুরি হয়েছিল। এরপর তাঁর বাড়ির আঙিনায় সিমেন্টর ঢালাই দিয়ে মুর্তিটি রেখেছেন।

আক্কেলপুর উপজেলা ইউএনও এসএম হাবিুল হাসান বলেন, আমি ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের বগুড়ার আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক নাহিদ সুলতানা সম্প্রতি দেওড়া গ্রাম পরির্দশনে গিয়েছিলাম।

ওই গ্রামের ব্রজেন্দ্রনাথ সাহার বাড়িতে মূর্তিটি ছিল। মূর্তিটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ। তাই মূতিটি পাহাড়পুর জাদুঘরে হস্তান্তরের জন্য ব্রজেন্দ্রনাথ সাহাকে বলা হয়েছিল। কিন্তু ব্রজেন্দ্রনাথ সাহা মূরর্তিটি হস্তান্তর করেনি। এরপর র‌্যাব গিয়ে মূরর্তিটি উদ্ধার করেছে। র‌্যাব মূর্তিটি পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের জাদুঘরে হস্তান্তর করেছে বলে তিনি জানান।

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার জাদুঘরের কাস্টেডিয়ান ফজলুল করিম বলেন, দেওড়া গ্রামে ব্রজেন্দ্রনাথ সাহার বাড়িতে মুর্তিটি ছিল। সেটি র‌্যাব উদ্ধার করেছে এবং মূর্তিটি পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার জাদুঘরে হস্তান্তর করেছে।

  • 109
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে