নিষেধাজ্ঞায় চৌহালী জুড়ে ইলিশ ধরতে জেলেদের জোড়ালো প্রস্তুুতি

প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০২০; সময়: ৭:১৬ অপরাহ্ণ |
নিষেধাজ্ঞায় চৌহালী জুড়ে ইলিশ ধরতে জেলেদের জোড়ালো প্রস্তুুতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিরাজগঞ্জ : মা ইলিশ ধরা নিষেধাজ্ঞা থাকলেও প্রজনন মৌসুমে প্রচুর ইলিশের লোভে সিরাজগঞ্জের চৌহালী-এনায়েতপুরে যমুনায় মাছ শিকারে জোড়ালো প্র¯‘তি নিয়েছে। অন্যান্য বছরের চেয়ে রেকর্ড পরিমান নতুন জাল ও নৌকা তৈরীতে দিন-রাত ব্যস্ত সময় পাড় করছে তারা। এজন্য অর্থের বিনিময়ে জেলেদের কৌশলে সুবিধা দেয়ার নামে এ এলাকার থানা পুলিশের তৎপরতা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

যমুনার চরাঞ্চল ঘেরা দুর্গম জনপদ নদী ভাঙ্গনে বিপর্যস্ত চৌহালী উপজেলার অধিকাংশ অভাবী মানুষের কৃষির পরেই প্রধান পেশা মাছ শিকার। নিবন্ধিত ১ হাজার ৩৩ জন জেলে সহ প্রায় ৫ সহস্রাদিক জেলে এ কাজে জড়িত। ইলিশ, বাইম, গোলশা, ঘাইড়া, আইড়, কাজলী সহ নদীর হরেক রকম সুস্বাদু মাছ ধরতে তাদের ঘের জাল ও নিষিদ্ধ ক্যারেন্ট জালই হচ্ছে প্রধান উপকরন।

চৌহালীর উমরপুর, বাঘুটিয়া, খাসকাউলিয়া, ঘোরজান, খাসপুকুরিয়া ও এনায়েতপুর থানার স্থল, সদিয়াচাঁদপুর, খুকনী ও জালালপুর ইউনিয়নের এসব জেলেরা তাদের ছোট-বড় ইঞ্জিন চালিত নৌকা করে দিন-রাত চালিয়ে আসছেন মাছ আহরনের কাজ। প্রতিবারের ন্যায় যমুনার চরাঞ্চল ঘেরা দুর্গম জনপদ নদী ভাঙ্গনে বিপর্যস্ত চৌহালী ও এনায়েতপুর থানার অধিকাংশ অভাবী মানুষের কৃষির পরেই অন্যতম পেশা যমুনায় মাছ শিকার। মাছ ধরতে নিষিদ্ধ ক্যারেন্ট জালই হচ্ছে এ অঞ্চলের প্রায় ২৫ কিলোমিটার যমুনা জুড়ে তাদের প্রধান উপকরন।

এসব জেলে তাদের ছোট-বড় ইঞ্জিন চালিত নৌকা করে দিন-রাত চালিয়ে আসছেন মাছ আহরনের কাজ। প্রতিবারের ন্যায় ইলিশের বংশ বিস্তারের জন্য আগামী ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছে সরকার। তবে এ মৌসুমে ব্যাপক ভাবে এই মাছ প্রজননের জন্য আসায় গত কয়েক বছর নিষেধাজ্ঞার মৌসুমে জেলেরা কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে ব্যাপক ইলিশ নিধন করে আসছে। এক্ষেত্রে থানা পুলিশ ও মৎস্য অফিসের এক শ্রেনীর অসাধু কর্মকর্তার যোগ সাজোশে অর্থের বিনিময়ে হয়ে আসছে ডিমওয়ালা মাছ নিধন। এবারো এর ব্যতিক্রম নেই। অন্যান্য বছরের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে কৌশলে দ্বিগুন ক্যারেন্ট জাল ও নৌকা তৈরী করেছে চৌহালী, এনায়েতপুর থানার যমুনা পাড়ের অসাধু জেলারা।

সরজমিনে বেতিল, চাঁনপুর, জালালপুর ও স্থলচর, ঘোরজান ও খাসকাউলিয়া আজিমুদ্দি মোড় এলাকা ও সলিমাবাদ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, উন্মুক্ত ভাবেই জেলেরা নতুন জাল বুনতে ব্যস্ত সময় পাড় করছে নদী পাড়ে। সংবাদকর্মীদের দেখে অধিকাংশ জেলেরা পালিয়ে গেলেও ইলিশ ধরা অবৈধ ক্যারেন্ট জাল তৈরীর সময় হাতে-নাতে দেখা মেলে খাসকাউলিয়া আজিমুদ্দি মোড় এলাকার কয়েকজন অভাবী জেলেদের। তখন জেলে শামীম হোসেন, আখতার আলী ও হায়দার হোসেন জানান, মাছ ধরেই তাদের জীবিকা। তবে সাড়া বছর তেমন ইলিশ পাওয়া যায়না। নিষেধাজ্ঞার মৌসুমেই মেলে প্রচুর ইলিশ। তাই অভাবের সংসার চালাতেই জাল তৈরী করছি।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জেলে জানান, নিজেদের পেটের কথা চিন্তা করে প্রশাসনের ভয়-ডর উপেক্ষা করে আমরা সবাই মাছ ধরছি। তবে অন্যান্য বছরের মত মাছ ধরতে যাতে সমস্যা না হয় পুলিশ ও মৎস্য অফিসের কারো-কারো সাথেও যোগাযোগ চলছে।

এ ব্যাপারে চৌহালী উপজেলা মৎস্যজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি রমজান আলী জানান, এবার অনেকেই গোপনে জাল তৈরী করেছে বলে শুনেছি। তবে সবাইকে মিটিং করে মাছ না ধরার জন্য অনুরোধ করেছি। না শুনলে আমি নিজেও অভিযানে শরীক হয়ে অসাধু জেলেদের ধরে দেব। তবে আমাদের বেকার জেলেদের যে প্রনদনা দেয়া হচ্ছে তা একেবারেই অপ্রতুল। আবার নিবন্ধিত ও অনিবদ্ধিত জেলেরাও পাচ্ছে না।

এ ব্যাপারে এনায়েতপুর থানার ওসি আতাউর রহমান ও চৌহালীর ওসি মোল্লা মাসুদ পারভেজ জানান, আমরা এবার অসাধু জেলেদের কোন ভাবেই ইলিশ শিকার করতে দেবোনা। কোরো সাথে আমাদের আপোশ নেই। জাল নৌকা দেখলেই ধরা হবে।

এদিকে মাছ ধরা বন্ধে সচেতনতার পাশাপাশি এবার নিবন্ধিত ১ হাজার ৩৩ জন জেলের মধ্যে ৯২৩ জন বেকার জেলেকে ২০ কেজি চাল বিতরন করা হবে বলে জানিয়েছেন চৌহালী উপজেলা মৎস্য অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মাসুম বিল্লাহ জানান।

ইলিশ রক্ষায় গনমাধ্যম কর্মীদের সহযোগীতা চেয়ে চৌহালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ আফসানা ইয়াসমিন জানান, আমরা ২ সপ্তাহ আগে থেকেই মা ইলিশ ধরা বন্ধে জেলে ও সচেতন ব্যক্তিদের সাথে নিয়ে বিভিন্ন প্রোগ্রাম করে আসছি। আসা করছি আমরা এবার সফল হবো। অসাধু জেলেদের কোন ভাবেই অপতৎপরতা মেনে নেয়া হবেনা।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে