বদলগাছীতে তক্ষক কেনাবেচার অভিযোগে এসআইসহ গ্রেপ্তার ৫

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২০; সময়: ৩:৪৪ অপরাহ্ণ |
বদলগাছীতে তক্ষক কেনাবেচার অভিযোগে এসআইসহ গ্রেপ্তার ৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, বদলগাছী : মূল্যবান তক্ষক কেনাবেচার সঙ্গে জড়িতথাকার অভিযোগে পুলিশের একজন উপপরিদর্শকসহ সংঘবদ্ধ একটি চক্রের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে একটি তক্ষক। নওগাঁর বদলগাছী থানা পুলিশ শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁদের গ্রেপ্তার ও তক্ষকটি জব্দ করে।

এ ঘটনায় বদলগাছী থানায় একটি প্রতারণার মামলা হয়েছে। শুক্রবার রাতেই বদলগাছী থানার সহকারী উপপরিদর্শক বাবর আলী বাদী হয়ে এই মামলাটি করেন।

বদলগাছী-মহাদেবপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সালেহ মো. আশরাফুল আলম এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এসআই গোলাম মোস্তফা ঢাকার রিজার্ভ পুলিশে কর্মরত আছেন। আগে তিনি বদলগাছী থানায় কর্মরত ছিলেন।

তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে ৬ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে এক নারীসহ ৫ জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের ভাষ্য মতে বদলগাছী সদরের আঃ আজিজ প্রামানিক এর ছেলে ওবাইদুল ইসলামের ভাড়া বাড়ি থেকে তক্ষকটি উদ্ধার করা হয়েছে।

আটককৃতরা হলেন, ঢাকা রিজার্ভ পুলিশের এসআই ও পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলার দেউভোগ গ্রামের আঃ সামাদের ছেলে গোলাম মোস্তফা (৪৬), তার ছেলে শফিউল কবির রকি (২৩), ছেলের বন্ধু ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দি উপজেলার বালিখা গ্রামের মৃত ইব্রাহিম এর ছেলে সোহাগ (২১), জামালপুর জেলার সদর উপজেলার পাকুল্যা গ্রামের খোরশেদ আলমের ছেলে পারভেজ (৩৬) ও নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার ভগবানপুর গ্রামের ওবাইদুল কবিরাজ(৫০) ও তার স্ত্রী পিয়ারা বেগম (৪৫)।

বদলগাছী থানা-পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের জানা যায়, এসআই গোলাম মোস্তফা ৭-৮ বছর আগে বদলগাছী থানায় কর্মরত ছিলেন। এ কারণে এলাকার অপরাধ জগতের লোকজনের সঙ্গে তাঁর পরিচিতি আছে। এসআই গোলাম মোস্তফা তাঁর ছেলে ও ছেলের দুই বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে শুক্রবার সকালে বদলগাছী উপজেলা সদরে যান। তাঁরা উপজেলা সদরের বিভিন্ন স্থানে ডিবি পুলিশ হিসাবে পরিচয় দিয়ে ঘোরাফেরা করেন। পরে এসআই গোলাম মোস্তফা তাঁর ছেলে ও ছেলের বন্ধুদের নিয়ে বদলগাছী থানায় যান।

তাঁরা থানায় অফিসার ইনর্চাজ চৌধুরী যোবায়ের আহাম্মেদের কাছে গিয়ে ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে একটি অভিযান পরিচালনার জন্য তাঁর সহায়তা চান। তাঁদের কথাবার্তায় ওসির সন্দেহ হয়। ওসি তাঁদের থানায় বসিয়ে রেখে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানান।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তাঁরা তক্ষক কেনাবেচা চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তাঁদের কাছে ডিবি পুলিশের একটি পোশাক ও একটি হাতকড়া পাওয়া যায়। তাঁদের তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলা সদরের খাদ্যগুদামের পেছনে বসবাসকারী ওবায়দুল কবিরাজের ভাড়া বাসায় অভিযান চালিয়ে একটি তক্ষক জব্দ করে। পুলিশের অভিযানের সময় ওবায়দুল কবিরাজ পালিয়ে যান। সেখান থেকে তাঁর স্ত্রী পিয়ারা বেগমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ বিষয়ে বদলগাছী থানার অফিসার ইনর্চাজ চৌধুরী যোবায়ের আহাম্মদ বলেন, গোলাম মোস্তফা ইতিপূর্বে নওগাঁ গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও বদলগাছী থানায় কিছু দিন দায়িত্ব পালন করেছেন। নওগাঁয় থাকাকালে স্থানীয়দের সাথে তার সখ্যতা গড়ে উঠে। সেই সূত্র ধরে ‘তক্ষক’ নামে একটি বিরল প্রজাতির প্রাণি বেচা কেনার প্রতারণা করতে আসে। আটকের পর গোলাম মোস্তাফা এমনটিই স্বীকার করেছে। তবে ‘তক্ষক প্রতারণা’ নাকি ডিবি পরিচয় দেয়ার পেছনে আরো অন্য কোন বিষয় লুকিয়ে আছে সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আটককৃতদের বিরূদ্ধে থানায় প্রতারণা এবং বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং উদ্ধারকৃত তক্ষকটি বনবিভাগে হস্তান্তর করা হবে। আটককৃতদের শনিবার জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

  • 91
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে