চোরকে সহযোগিতার অভিযোগে গ্রামবাসীর রোশানলে পুলিশ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২০; সময়: ৫:৩৪ অপরাহ্ণ |
চোরকে সহযোগিতার অভিযোগে গ্রামবাসীর রোশানলে পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার রূপবাটি ইউনিয়নের নতুন চয়ড়া গ্রামবাসী সোমবার মধ্যরাতে ৪ গরু চোরকে আটক করেছে। গরু চুরি ঠেকাতে দীর্ঘদিন রাত জেগে পাহাড়া দেওয়ার পর তারা এ দিন রাতে এ ৪ চোরকে হাতেনাতে আটক করতে সক্ষম হয়।

খবর পেয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে শাহজাদপুর থানার ৩ পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে ওই ৪ চোরকে জনতার হাত থেকে ছাড়িয়ে থানায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে গ্রামবাসী ওই ৩ পুলিশের বিরুদ্ধে আটক চোরদের গরুচুরির কাজে সহযোগীতা করার অভিযোগ করেন। ফলে ওই ৩ পুলিশ গ্রামবাসির রোশানলে পড়েন। এরা হলেন, শাহজাদপুর থানার এসআই খলিলুর রহমান, কন্সটেবল রতন মিয়া ও আব্দুর রাজ্জাক।

খবর পেয়ে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শাহজাদপুর থানা পুলিশের একটি দল তাদের উদ্ধার করেন ও আটক ৪ চোরকে থানায় নিয়ে যান। এ ৪ চোর হলো শাহজাদপুর উপজেলার পৌর সদরের রূপপুর পুরানপাড়া মহল্লার মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে মো: মোস্তফা কামাল ওরফে শামীম ওরফে তুষার ওরফে তুহিন(৪৫),একই উপজেলার হাবিবুল্লাহ নগর ইউনিয়নের রতনকান্দি উত্তরপাড়া গ্রামের মো: আব্দুর রহিমের ছেলে মো: সবুজ(২৭),একই গ্রামের নওশেদ আলীর ছেলে মো: আশিক(১৯) ও একই উপজেলার রূপবাটি ইউনিয়নের বাগধুনাইল গ্রামের মৃত আমীর মোল্লার ছেলে মো: সাদেকুল(২৮)।

এ বিষয়ে রূপবাটি ইউনিয়নের ১নং সংরক্ষিত মহিলা আসনের মেম্বর শিল্পী খাতুন জানান, গত ২ মাসে এ গ্রামের ৯টি সহ আশপাশের গ্রামের প্রায় কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ২৫টি গরু চুরি হয়। ফলে গ্রামবাসি দীর্ঘদিন ধরে গরু চুরি ঠেকাতে রাত জেগে গ্রাম পাহাড়া দিচ্ছে। এরই জের ধরে এ দিন মধ্য রাতে ইঞ্জিন চালিত শ্যালো নৌকা যোগে ৪ চোর এ গ্রামের আব্বাস আলী খাজার গোয়াল ঘর থেকে সাড়ে ১২ লাখ টাকা মূল্যের ৪টি গরু চুরি করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে তাদের ধাওয়া কওে আটক করে। এর কিছু সময় পর ওই ৩ পুলিশ গ্রামবাসির কাছে থেকে চোরদেও নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় গ্রামবাসি বাধা দিলে তারা গ্রামবাসির উপর চড়াও হয় এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।

এ ছাড়া পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অপরাধে গ্রামবাসিদের কয়েকজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এতে গ্রামবাসি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে তারা গ্রামবাসির রোশানলে পড়ে। খবর পেয়ে আমি ঘটনা স্থলে ছুটে এসে পরিস্থিতি শান্ত করি। এরপর থানা থেকে আরো পুলিশ এসে ওই ৩ পুলিশকে উদ্ধার ও চোরদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এর কিছু সময় পর শাহজাদপুর থানার ওসি শাহিদ মাহমুদ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে চোর আটক করে সাহসী ভুমিকা রাখায় কৃষক আব্বাস আলী খাজাকে নগদ ৫০০টাকা পুরষ্কার দেন।

এ বিষয়ে নতুন চয়ড়া গ্রামের গরু মালিক আব্বাস আলী খাজা,রবিউল ইসলাম,জয়নাল প্রাং,ইব্রাহিম হোসেন,আবু সালাম,শাকিল হোসেন, রোকন সরকার, শাহাদত হোসেন, আব্দুর রব ও আরতোষ আলী জানান,সোমবার রাত দেড়টার দিকে একটি ইঞ্জিন চালিত শ্যালো নৌকা নিয়ে ৪ গরু চোর আব্বাস আলী খাজার বাড়ির সামনে নৌকা ভিড়িয়ে তার গোয়ালঘর থেকে সাড়ে ১২ লাখ টাকা মূল্যের ৪টি গরু চুরি করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে ধাওয়া করে এ ৪ চোরকে আটক করে।

এর কিছু সময় পর ওই ৩ পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে চোরদের থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এতে গ্রামবাসি বাধা দিলে চোরদের মারধর ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে কয়েকজন গ্রামবাসির মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় ও তাদের ধরে থানায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ফলে ওই ৩ পুলিশ গ্রামবাসির রোশানলে পড়ে। এ সময় গ্রামবাসি ওই ৪ চোর সহ ৩ পুলিশকেও সারা রাত টয়ড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের বারান্দায় বসিয়ে ঘেরাও করে রাখে। খবর পেয়ে শাহজাদপুর থানা পুলিশের একটি দল উপযুক্ত বিচার দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ওই ৩ পুলিশকে উদ্ধার ও ৪ চোরকে আটক করেও থানায় নিয়ে যায়।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর থানার এসআই খলিলুর রহমান বলেন, ঘটনার সময় তিনি ৩ কন্সটেবল নিয়ে বিন্নাদাইর নামক স্থানে মহাসড়কে পেট্রোল ডিউটিতে ছিলাম। খবর পেয়ে পুলিশের গাড়ি নিয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়ার সময় রাস্তা ভাঙ্গা থাকার কারণে রামখারুয়া এলাকায় গাড়ি রেখে ড্রাইভার বিপুল ও কন্সটেবল ওয়াদুদকে গাড়িতে রেখে কন্সটেবল রতন ও আব্দুর রাজ্জাককে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে পৌছে গ্রামবাসির গণধোলাই থেকে চোরদেরও উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। এতে গ্রামবাসি বাধা দিয়ে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে। দূর্ঘটনা এড়াতে আমি চোরদের নিয়ে পাশের একটি স্কুলের বারান্দায় আশ্রয় নেই। এরপর এ ঘটনা জানিয়ে থানায় ফোন করি। খবর পেয়ে শাহজাদপুর থানা থেকে আরো পুলিশ গেলে চোরদের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি আরো বলেন, আমি আমার দায়ীত্ব যথাযথ ভাবে পালন করেছি। তা না হলে এলাকাবাসির গণধোলাইয়ে চোরদের প্রাণহানী ঘটার আশংকা ছিল। গ্রাণহানী ঘটলে তো গ্রামবাসিই উল্টো হত্যা মামলায় ফেঁসে যেতো।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর থানার ওসি শাহিদ মাহমুদ বলেন, গরু চুরির ঘটনায় এর আগে কেউ থানায় মামলা বা অভিযোগ করেনি। ফলে এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থাও নেওয়া সম্ভব হয়নি। এখন এ গরু চুরির সাথে যারাই জড়িত তাদেও বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া আটক চোরদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

  • 48
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে