৩ বছরে কিনেছেন কয়েক কোটি টাকার জমি, ফ্ল্যাট ও দামি গাড়ী কুষ্টিয়ার যুবলীগ নেতা সুজন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২০; সময়: ৮:০৪ অপরাহ্ণ |
৩ বছরে কিনেছেন কয়েক কোটি টাকার জমি, ফ্ল্যাট ও দামি গাড়ী কুষ্টিয়ার যুবলীগ নেতা সুজন

নিজস্ব প্রতিবেদক, কুষ্টিয়া : জালিয়াত আর প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক বনে গেছেন সদস্য বিলুপ্ত কুষ্টিয়া শহর যুবলীগের আহ্বায়ক আশরাফুজ্জামান সুজন। আহ্বায়ক হওয়ার পর গত তিন বছরে কুষ্টিয়া শহরের চারটি স্থানে তিনি কিনেছেন কয়েক কোটি টাকার জমি, ঢাকায় কিনেছেন একটি ফ্ল্যাট। সম্প্রতি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরী করে এক ব্যক্তির ৩ কোটি টাকার জমি ৭৭ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন এক জালিয়াতচক্র। এই চক্রের মাথা হিসেবে নাম উঠে আসে যুবলীগ নেতা সুজনের। ঘটনা প্রকাশ্যে আসলে কুষ্টিয়া শহর যুবলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

২০১৭ সালের ১৫ মে কুষ্টিয়া শহর যুবলীগের তৎকালিন কমিটি হঠাৎ করে ভেঙে দিয়ে ২১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক করা হয় সাবেক ছাত্রদল নেতা আশরাফুজ্জামান সুজনকে।

অভিযোগ আছে, সুজন কখনই আওয়ামী রাজনীতি করেননি, মোটা অংকের লেনদেনের মাধ্যমে তিনি এ পদ বাগিয়ে নেন। এদিকে, ৯০ দিনের মধ্যে আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি। ওই আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই প্রায় ৩ বছর ধরে চলছিল কুষ্টিয়া শহর যুবলীগ। তবে আহ্বায়ক হওয়ার পর আশরাফুজ্জামান সুজন নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। সংগঠনকে গতিশীল না করে তিনি অবৈধ পন্থায় টাকা কামানোর প্রতিযোগিতায় নামেন।

এ ক্ষেত্রে তিনি বেছে নেন জালিয়াতি ও প্রতারণার পথ। অভিযোগ আছে, তিনি শিক্ষামন্ত্রীর জামাই পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন মানুষের কাজ করে দেওয়ার নাম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আবার অনেকের কাছ থেকে ধার হিসেবে বিপুল অংকের টাকা নিয়ে ফেরত দেননি। দলীয় পদের প্রভাব খাটিয়ে তিনি এসব টাকা হজম করে ফেলেছেন।

জানা যায়, সুজন তার পূর্ব পরিচিত ঝিনাইদহ এলাকার সবুজ নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৭০ লাখ টাকা ধার নিয়ে আর ফেরত দেননি। সবুজ কুষ্টিয়া জেলা যুবলীগ সভাপতি রবিউল ইসলামের কাছে অভিযোগ করেও কোন ফল পাননি বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। সম্প্রতি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরী করে কুষ্টিয়া শহরের নবাব সিরাজদ্দৌলা (এনএস) সড়কের বাসিন্দা এমএম ওয়াদুদের প্রায় ৩ কোটি টাকার জমি ৭৭ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেয় এক জালিয়াতচক্র।

এই চক্রের মাথা হিসেবে নাম উঠে আসে যুবলীগ নেতা সুজনের। সুজন এখানেই থেমে থাকেনি, তিনি শহরের এনএস রোডে আব্দুল ওয়াদুদের দোতলা বাড়িসহ কয়েকটি টাকা মূল্যের সম্পত্তিও একই কৌশলে বিক্রির চেষ্টা করছিল। এছাড়া তিনি শহরের মজমপুর, চৌড়হাস ও বাহাদুরখালী মৌজার জমি জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া দলিল তৈরী করে আত্মসাতের চেষ্টা করে। সূত্র জানায়, এভাবে সুজন গত তিন বছরে বিপুল অর্থ কামিয়ে নেন। আর এই টাকায় কুষ্টিয়া শহরের উদিবাড়ি, হরিশংকরপুরসহ ৪টি স্থানে কয়েক কোটি টাকা দামের জমি কিনেছেন, কিনেছেন দামি গাড়ি।

এছাড়া ঢাকা শহরে তিনি একটি ফ্লাটও কিনেছেন বলে জানা যায়। আবার সুজন শহরের একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী হিসেবেও পরিচিত। বিশেষ করে যুবলীগের আহ্বায়ক হওয়ার আগে সুজনের একমাত্র পেশা ছিল মাদক ব্যবসা।

এদিকে, সুজনের অপকীর্তি ফাঁস হয়ে গেলে গত রোববার কুষ্টিয়া শহর যুবলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রিয় যুবলীগ। অন্যদিকে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরী করে জালিয়াতির মাধ্যমে অন্যের জমি বিক্রির অভিযোগে কুষ্টিয়া সদর থানায় আশরাফুজ্জমান সুজনসহ ১৭ জনকে আসামী করে একটি মামলা হয়েছে। মামলাটি করেছেন এই চক্রের প্রতারণার শিকার এমএম ওয়াদুদ। মামলার পর গাঢাকা দেন সুজন। তবে পুলিশ এ মামলার ৫ আসামীকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করেছে। কুষ্টিয়ার পুলিম সুপার এস এম তানভির আরাফাত বলেন, সুজনসহ প্রতারক চক্রের সব সদস্যকে অচিরেই গ্রেফতার করা হবে।

তবে কুষ্টিয়া জেলা যুবলীগ সভাপতি রবিউল ইসলাম বলেন, তাদের সাথে কোন পরামর্শ না করেই শহর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ছাত্রলীগ বা যুবলীগের রাজনীতি না করেলও ওই কমিটির আহ্বায়ক করা হয় আশরাফুজ্জামান সুজনকে। তিনি বলেন, আশরাফুজ্জামান সুজন একজন জাত প্রতারক। তিনি (রবিউল) নিজেও সুজনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। জেলা যুবলীগ নেতা নূরুল ইসলাম সুরুজ বলেন, ত্যাগি নেতাদের বাদ দিয়ে সুজনদের মত লোকদের নেতা করার কারণে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। আগামীতে এ বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার বলে তিনি অভিমত দেন।

 

  • 164
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে