নিয়ামতপুরে মন্দিরের নামে জোরপূর্বক জমি, পুকুর দখল

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২০; সময়: ১:০৪ অপরাহ্ণ |
নিয়ামতপুরে মন্দিরের নামে জোরপূর্বক জমি, পুকুর দখল

নিজস্ব প্রতিবেদক, নিয়ামতপুর : জোরপূর্বক জমি দখল আমাদের দেশের জন্য অনেক বড় একটি ইস্যু। ভূমি দখল, পুকুর দখল, নদী দখল আমাদের দেশের অনেক পুরানো একটি সমস্যা, বছরের পর বছর ধরে এই জোরপূর্বক জমি দখল চলে আসছে। বলাই বাহুল্য যে, দুর্নীতি, অপসংস্কৃতি, অবৈধ লেনদেন বা ক্ষমতার অপব্যবহারের মত অনাকাঙ্খিত ঘটনা হরহামেশাই ঘটে থাকে। তবে, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এমন একটি সিরিয়াস ইস্যু নিয়ে সে তুলনায় খুব কম আলোচনা হয়। হয়ত একারণেই এই ইস্যু এখনো প্রকটভাবে রয়েছে। তারই একটি ঘটনা নওগাঁর নিয়ামতপুরের রসুলপুর ইউনিয়নের নিমদীঘি মুকুপাড়ায়।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের নিমদীঘি মুকুপাড়ার (পূর্বপাড়া) মৃত মুকু মন্ডলের ছেলে কমির উদ্দিনের ওয়ারিশগণের ভোগ দখলীয় সম্পত্তি জমি ও পুকুর একই গ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মৃত- নরেশের ছেলে মিঠন গংরা কেবলমাত্র আদালতে লক্ষি মন্দিরের নামে জমি, পুকুর দাবী করে মামলা করেই জোরপূর্বক তীর ধনুক, লাঠির জোরে জমি ও পুকুর দখল করে নেয়।

জানা যায়, নিয়ামতপুর উপজেলার নিমদীঘি মৌজার ৭১ নম্বর খতিয়ানের ১৬০২ নম্বর দাগ পরিমান ৭৩ শতক, ১৫৯৯ নম্বর দাগে ১৬ শতক, ১৬০১ নম্বর দাগে ৭ শতক, ১৭১৮ নম্বর দাগে ৩১ শতক, ২৫১ নম্বর দাগে ৬১ শতক, ২৫২ নম্বর দাগে ৫৩ শতক সর্বমোট ২ একর ৪১ শতক জমি ও পুকুর ১৯৬২ সালের এসএ খতিয়ানে জমিদার শ্রীযুক্ত নবীন চন্দ্র সাহার নামে। তিনি পত্তনের শহরত দিলে উপজেলার নিমদীঘি গ্রামের মৃত- মুকু মন্ডলের ছেলে কমির উদ্দিন মন্ডলের নামে বাংলা ১৩৪৫ সালে চিরস্থায়ী বন্দবস্তের মাধ্যমে মালিকানা পান। ১৩৪৫ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত পাওয়ার পর মৃত শুকটার ছেলে শ্রী নরেশ এবং মৃত- জোনারামের ছেলে মঙ্গল সরকার বাদী হয়ে ১৯৭২ সালে মাঠ জরিপ এর অভিযোগ কেন্দ্রে মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় কমির উদ্দিনের পক্ষে রায় হয়। এরপর তৎকালীন রসুলপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহসিলদার বাদী হয়ে তৎকালীন রাজশাহী জেলা জজ কোর্টে মাঠ জরিপের উপর মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায়ও ২৩ জানুয়ারী ১৯৭৩ সালে কুমির উদ্দিনের পক্ষে রায় হয়। সেই রায়ের পরেই ১৯৭২ সালের আরএস খতিয়ানে কমির উদ্দিনের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত কমির উদ্দিনের ওয়ারিশগণ নালিশি জমি পুকুর ভোগ দখল করে আসছে। পরবর্তীতে কুমির উদ্দিনের পাঁচ পুত্রের নামে ১৩১ নম্বর প্রস্তাবিত খতিয়ানও অন্তর্ভুক্ত হয়।

হঠাৎ ৭৭ বছর পর কোন কু-চক্রি মহলের ইন্দনে প্রতিবেশী ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠির মৃতত- নরেশের ছেলে মিঠন, মৃত- পশুরামের ছেলে শ্রী রঞ্জন পাহান, মৃত- কান্তের ছেলে সুদেশ, কিনু পাহানের ছেলে কুমার তারজেন পাহান, মৃত- মিঠকুর ছেলে নহর বাদী হয়ে নওগাঁ সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে গত ২ জুলাই ২০২০ইং তারিখে মামলা দায়ের করে।

মামলার কোন সুরাহা না হতেই গত ৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ইং শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় ৫০/৬০ জনের এক সন্ত্রাসী বাহিনী মিঠন ও তার গংরা তীর ধনুক, লাঠি, বল্লম নিয়ে কৃমির উদ্দিনের ছেলে সাদেকুল ইসলামের বাড়ী ঘেরাও করে জোরপূর্বক জমি, পুকুর দখল করে নেই। শুধু তাই নয় রাতের অন্ধকারেই জমিতে থাকা ৪টি আমগাছ, ৩টি নিম গাছ, ১টি বরই গাছ কেটে রাস্তা নির্মান করে।

এ বিষয়ে কুমির উদ্দিনের ছেলে সাদেকুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা ৭৭ বছর যাবত এ সম্পত্তি ভোগ দখল করে আসছি। হঠাৎ মিঠুন গংরা লক্ষি মন্দিরের নামে ভূয়া দাবী করে জোরপূর্বক আমার ২ একর ৪১ শতক জমি ও পুকুর দখল করে নিয়ছে। রাতের অন্ধকারে রাস্তা তৈরী করে নিয়েছে। অথচ আমার বাড়ীর পশ্চিম দিকে আমি নিজেই আমার সম্পত্তির উপর দিয়ে তাদের রাস্তা দিয়ে রেখেছি। তারপরেও তারা আমার সম্পত্তিতে হামলা করে দখল করে নেয়। তারা আমাদের প্রাণ নাশের হুমকি পর্যন্ত দিচ্ছে এবং হুমকি দিয়ে বলছে আমার জমিদে তারা ফুটবল খেলার মাঠ তৈরী করবে। আমি এ প্রতিকার চিয়ে থানা এবং রাজনৈতিক মহলে আশ্রয় চাইলেও কোন প্রতিকার পাই নাই। এ বিষেয়ে আমি থানায় সাধারণ ডায়েরী করে রেখেছি। আমরা যাতে থানায় না যাই তারও হুমকি দিচ্ছে। আমরা এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

এ বিষয়ে মৃত- নরেশের ছেলে মিঠন বলেন, জমিদার শ্রীযুক্ত নবীন চন্দ্র সাহা উক্ত সম্পত্তি আমাদের লক্ষি মন্দিরের নামে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দিয়ে যান। এতদিন সম্পত্তি হারিয়ে ছিল আজ আমরা উদ্ধার করেছি। মন্দিরের নামে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কোন প্রমান মিঠন এ প্রতিবেদককে দেখাতে পারি নি।

এ বিষয়ে নিয়ামতপুর থানার অফিসার ইন চার্জ হুমায়ন কবির বলেন, আমাদের কাছে এখন কোন এ ধরনের কোন অভিযোগ পড়ে নাই। অভিযোগ আসলে তদন্ত করে দেখা হবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে