মান্দায় সংখ্যালঘুর সাড়ে ৮ বিঘা জমি জবরদখলের অভিযোগ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২০; সময়: ১:২১ অপরাহ্ণ |
মান্দায় সংখ্যালঘুর সাড়ে ৮ বিঘা জমি জবরদখলের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, মান্দা : নওগাঁর মান্দায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সাড়ে ৮ বিঘা জমি জবরদখলের অভিযোগ উঠেছে তাঁরই এক সময়ের বর্গাচাষি খলিলুর রহমান খামারুর বিরুদ্ধে। উপজেলার মান্দা সদর ইউনিয়নের ঘাটকৈর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী সরকার বাড়ির সম্পত্তিগুলোর জাল দলিল সৃষ্টি করে বর্গাচাষি খলিল খামারু দীর্ঘদিন ধরে নিজের কব্জায় রেখেছেন। ওইসব সম্পত্তির ফসল ও বিভিন্ন প্রজাতির গাছ বিক্রি করে মোটা অংকের টাকাও আত্মসাত করছেন তিনি।

স্থানীয়রা জানান, ঘাটকৈর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী সরকার বাড়ির গৃহবধূ মৃত উমা রানী সরকারের ওয়ারিশগণ রীতিমতো খাজনা পরিশোধ করে এলেও জাল দলিল তৈরি করে খলিলুর রহমান খামারু জমির মালিকানা দাবি করছেন। ওইসব সম্পত্তিতে উৎপাদিত ফসলের অংশ দাবি করায় একবার হামলার শিকার হয়েছেন উমা রানীর ওয়ারিশগণ। তাদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে বর্গাচাষি খলিল খামারুর বিরুদ্ধে।

ঘাটকৈর গ্রামের মনছের আলী, ফছির উদ্দিন, খয়বর খামারুসহ আরও অনেকে জানান, গ্রামের অরবিন্দু-উমা রানী দম্পতি নিঃসন্তান। অরবিন্দু সরকারের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী উমা রানী সরকার স্বামীর বাড়িতেই বসবাস করতেন। বাড়ির বিশাল দুর্গা মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ আজও বিদ্যমান। তারা নিজেরাই উমা রানীকে দেখাশোনা ও পাহারা দিয়ে রাখতেন।

তারা আরও জানান, ঐতিহ্যবাহী সরকার বাড়িটি ঘাটকৈর গ্রামে মান্দা-নিয়ামতপুর সড়কের উত্তর পাশে মাঠের মধ্যে অবস্থিত। সেখানে আর কোনো পরিবারের বসতি ছিল না। এ কারণে ওই সময় সরকার বাড়িতে মাঝে-মধ্যেই চুরি ও ডাকাতির ঘটনা ঘটে আসছিল। অহরহ এ ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে অরবিন্দুর ভাই শৈলেন্দ্রনাথ সরকার মহাদেবপুর উপজেলার পাঁঠাকাটা গ্রামে গিয়ে বসবাস শুরু করেন। এসময় বিধবা উমা রানী একাই সরকার বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। পরবর্তীতে একই কারণে তিনিও পাঁঠাকাটায় দেবরের বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানে বসবাস অবস্থায় সাপের দংশনে মারা যান তিনি।

পরবর্তীতে অরবিন্দুর ভাতিজা শিবেন্দ্রনাথ সরকার গংরা ওয়ারিশ সুত্রে ওইসব সম্পত্তির মালিক হন। কিন্তু বর্গাচাষি খলিলুর রহমান খামারু জাল দলিল সৃষ্টি করে জমিগুলোর মালিকানা দাবি করায় তারা চরম বেকাদায় পড়েন।

স্থানীয় একাধিক সুত্র জানায়, একসময় সরকার বাড়ির ৩০ বিঘা সম্পত্তি শফিউদ্দিন প্রামানিক, খলিল খামারুসহ এলাকার আরও কয়েকব্যক্তি বর্গাচাষ করতেন। এসব সম্পত্তিতে উৎপাদিত ফসল হিস্যা অনুযায়ী সরকার পরিবারে পৌঁছে দিতেন বর্গাচাষিরা। এক পর্যায়ে সম্পত্তিগুলো দখলের পাঁয়তারা শুরু করেন তাঁরই বর্গাচাষি শফিউদ্দিন ও খলিল খামারু।

পরবর্তীতে জাল দলিল সৃষ্টি করে জমির মালিকানা দাবি করেন তারা। এ নিয়ে দুই বর্গাচাষি একে অপরের বিরুদ্ধে মামলায় জড়িয়ে পড়েন। নওগাঁ আদালতে দুইপক্ষের দায়েরকৃত মামলা ও জমির দাখিলকৃত দলিল সন্দেহজনক হওয়ায় আদালত সেগুলো হেফাজতে নেয়। একই সঙ্গে মামলাটিও ডিসমিস করে দেন আদালত। পরবর্তীতে উচ্চ আদালত ও সুপ্রিম কোর্টের আপিল শাখায় পরাজিত হয়ে বর্গাচাষি শফিউদ্দিনের হেফাজতে থাকা জমিগুলো প্রকৃত মালিককে ছেড়ে দেন।

কিন্তু অপর বর্গাচাষি খলিল খামারু এখনও সাড়ে ৮ বিঘা সম্পত্তি নিজের কব্জায় রেখে ভোগদখল করে আসছেন। এদিকে ভূমি আপিল বোর্ড প্রকৃত মালিকের অনুকুলে রায় প্রদান করলেও তা মানছেন না দখলবাজ খলিল খামারু। ক্ষমতা ও ভাড়াটিয়া বাহিনির দাপট দিয়ে তিনি এখনও জমিগুলো জবরদখল করে রেখেছেন।

এ বিষয়ে খলিলুর রহমান খামারু বলেন, জমিগুলো তিনি মৃত উমা রানী সরকারের নিকট থেকে কিনে নিয়েছেন। তবে এর বিপরীতে কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেননি তিনি।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে