নওগাঁর মহাদেবপুরে আদিবাসীদের ২৫ তম কারাম উৎসব উদযাপিত

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২, ২০২০; সময়: ৭:১৪ অপরাহ্ণ |
নওগাঁর মহাদেবপুরে আদিবাসীদের ২৫ তম কারাম উৎসব উদযাপিত

আইনুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিবেদক, মহাদেবপুর : আদিবাসীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব কারাম উৎসব বা ডাল পূজা। বংশপরম্পরায় যুগ যুগ ধরে প্রতিবছর উত্তরের সমতল ভূমির নওগাঁর আদিবাসীরা ডাল পূজা উদযাপন করে আসছে।

রাতভর পূজা-পার্বণের মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে ২ সেপ্টেম্বর বুধবার বিকেলে উপজেলার নাটশাল ফুটবল মাঠে উদযাপিত হয় আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কারাম। এ উপলক্ষে কয়েকটি জেলা থেকে আসা আদিবাসী বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন উৎসবে যোগ দিয়ে তাদের নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য তুলে ধরে দলবদ্ধ নৃত্য পরিবেশন করে।

এ উপলক্ষে বুধবার বিকেলে নাটশাল ফুটবল মাঠে এক আলোচনা সভায় কারাম মন্দিরের জমিদাতা কার্তিক উড়াও এর সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন বীরমুক্তিযোদ্ধা ও জাতীয় আদিবাসী পরিষদের উপদেষ্টা মোঃ ময়নুল হক মুকুল, বাংলাদেশ ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি ও জাতীয় আদিবাসী পরিষদের উপদেষ্টা শহীদ হাসান সিদ্দিকী স্বপন, বাসদ সমন্বয়ক ও জাতীয় আদিবাসী পরিষদের উপদেষ্টা মোঃ জয়নায় আবেদীন মুকুল, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক সবিন মুন্ডা, রাইগাঁ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আরিফুর রহমান, আরকোর নির্বাহী পরিচালক সজল কুমার চৌধুরী, বাসদ সমন্বয়ক খুলনার জনারর্দন দত্ত, সাংবাদিক, কবি-সাহিত্যিক ও জাতীয় চলচিত্র সমিতির সদস্য আজাদুল ইসলাম আজাদ, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য এ্যাডভোকেট বাবুল রবিদাস, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ সুধীর তির্কী, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, নওগাঁর সাবেক সভাপতি আমিন কুজুর, আদিবাসী যুব পরিষদ নওগাঁর উপদেষ্টা মোঃ মোশারফ হোসেন চৌধুরী, আদিবাসী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নুকুল পাহান, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ মহাদেবপুর শাখার আহবায়ক সুশীল কুজুর প্রমূখ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন আদিবাসী যুব পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নরেন পাহান ও আদিবাসী ছাত্র পরিষদ নওগাঁর সভাপতি সুধীর পাহান।

১৯৯৬ সাল থেকে নাটশাল মাঠে নিয়মিত উদযাপন করা হয় কারাম উৎসব। প্রতিবছর ভাদ্র মাসের পূর্ণিমার চন্দ্র তিথিতে উদযাপন করা হয় এই পূজা। এ উৎসবকে ঘিরে মুখরিত হয়ে নওগাঁর আদিবাসী বসবাসরত এলাকাগুলো। পূজার সময় আদিবাসী দুই ভাই ধর্মা ও কর্মার জীবনী তুলে ধরা হয়। আদিবাসীরা বিশ্বাস করে, ধর্ম পালন করায় ধর্মা রক্ষা পান সকল বিপদের হাত থেকে। আর কর্মা ধর্ম পালন না করায় তার ক্ষতি হয়। ভাদ্র মাসের প্রথম পূর্ণিমায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন উপবাস করে কারাম গাছের ডাল কেটে আনেন। এরপর সন্ধ্যায় পঞ্জিকা মতে পূর্ণিমা শুরু হলে কারাম ডাল কেটে অস্থায়ী মন্ডপে পুঁতে রেখে পূজা-অর্চনা আর নাচ-গান ও কিছু বলার মধ্য দিয়ে প্রতিবছর কারাম উৎসব উদযাপন করে।

এ সময় পুরো এলাকা আদিবাসীসহ সকল সম্প্রদায়ের মিলনমেলা হয়ে ওঠে। পূজা শেষে পরদিন কারাম ডাল উঠিয়ে গ্রামের তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সের নারী-পুরুষ নেচে গেয়ে গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে পুকুরের জলে বিসর্জন দেয়া হয় কারাম গাছের সেই ডাল। আদিবাসীরা এ কারাম উৎসবের জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় থাকে সারা বছর। এ উৎসবে এবার অংশগ্রহণ করেন আদমদিঘী বগুড়ার মিলন পাহানের দল শাপলা, উপজেলার বড় মহেষপুরের কমল পাহানের দল সূর্যমুখী, দেবীপুরের জবা দল, বিলশিকারীর অলোনা দল, লক্ষ্মীপুরের শাপলা দল, পত্নীতলা উপজেলার সাহাজাতপুরের শান্তি এক্কার দল শাপলা, জবা-বিথী দল, আকবরপুরের সিতামুনির দল শাপলা, সম্ভুপুরের স্বপনের দল সোনালী, হাসেনপুরের বুলবুলি তির্কীর দল বেলি, মান্দার দেলুয়াবাড়ির দল এবং ফুলেশ্বরী-কলিসফা, নোনাহার সাপাহারের জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, দিঘীর হাটের পরিমল কুজুর, ডাঙ্গাপাড়ার ফুলমুনির দল বেলি, লক্ষিপুরের আলতি দলসহ জেলার বিভিন্ন ১৬ টি সাংস্কৃতিক দল তাদের নাচ-গান পরিবেশন করেন।

  • 14
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে