কিশোরগঞ্জ থেকে স্বামীর খোঁজে জয়পুরহাটে এসে বিপাকে মল্লিকা!

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২০; সময়: ৮:৫৮ অপরাহ্ণ |
কিশোরগঞ্জ থেকে স্বামীর খোঁজে জয়পুরহাটে এসে বিপাকে মল্লিকা!

নিজস্ব প্রতিবেদক, জয়পুরহাট : কিশোরগঞ্জের এক তরুণী তাঁর স্বামীর খোঁজে জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে এসে বিপাকে পড়েছেন। তিনি যাকে স্বামীর হিসেবে দাবি করছেন সুরুজ মিয়া নামের ওই যুবক তাঁকে স্ত্রী হিসেবে স্বীকার করেননি। উল্টো সুরুজ মিয়া ও তাঁর সহযোগীরা তাঁকে নানান ভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। বাধ্য হয়ে তিনি আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সংরক্ষিত নারী ওর্য়াডের সদস্য হেলেনা বেওয়ার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি তিন ধরে সেখানেই অবস্থান করছেন। এঘটনায় থানায় একটি অভিযোগও দিয়েছেন। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা হয়নি।

মল্লিকাকে আশ্রয় দেওয়ায় সুরুজ মিয়া ও তার সহযোগীরা ইউপি সদস্যে হেলানা বেওয়াকে গালিগলাজ করছেন। এখন তিনিও মল্লিকাকে তাঁর কাছে রাখতে চাচ্ছেন না। বাড়ি করার জন্য জায়গা কেনা বাবদ এক লাখ টাকা স্বামীকে দেওয়া টাকা ফেরত না পেলে মল্লিকাকে বাবার বাড়িতে যেতেও বারণ করা হয়েছে। মল্লিকা এখন যাবেন কোথায়?

মল্লিকা জানান, তাঁর বাড়ি কিশোরগঞ্জের যশোদল গ্রামে। তাঁর বাবার নাম আফাজ আলী। তিনি মোরাব্বা ব্যবসায়ী। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে তিনিই সবার বড়। তিন বছর আগে কিশোরগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে থাকার সময় তাঁর মুঠোফোনে একটি ছেলে কল করে। সেই মুঠোফোনে তাঁদের নিয়মিত কথা হতো। এক পর্যায়ে তাঁদের মধ্যে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে ওঠে। মল্লিকা তাঁর প্রেমিকের নাম ঠিকানা নেন। ঠিকানা অনুযায়ী তিনি দুই বছর আগে ঢাকার সাভারে গ্যারেজ এলাকায় প্রেমিক সুরুজ মিয়ার কাছে চলে আসেন। সেখানে সুরুজ মিয়া একটি রিকশার গ্যারেজে কাজ করতেন।

তাঁরা দুই জন বিয়ে করে গ্যারেজ এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করছিলেন। এরমধ্যে স্বামীর সঙ্গে গ্রামের বাড়িতেও এসেছিলেন। কিন্তু সুরুজ তাঁকে বাড়িতে নিয়ে যাননি। সুরুজ তাঁকে তাঁর এক বন্ধুর বাড়িতে রেখেছিলেন। আবারও তাঁরা সাভার গ্যারেজ এলাকায় চলে যান। স্বামীর বাড়ি কোন গ্রামে সেটি জানতেন না। মল্লিকা তাঁর স্বামীকে নিয়ে বাবার বাড়ি কিশোরগঞ্জে চলে যান। সেখানে তাঁরা স্বামী-স্ত্রী ছিলেন। হঠাৎ করেই সুরুজ সেখান বাড়ি চলে আসেন। এরপর থেকে সুরুজকে মুঠোফোনে পাচ্ছিলেন না। মাস দুয়েক পর সুরুজকে মুঠোফোনে পান।

সুরুজ তাঁকে জানান, বাড়িতে কেউ তাঁকে মেনে নেবে না। একারণে বাড়ি করার জন্য জায়গা কিনতে হবে। বাড়ির জায়গা কেনার জন্য এক লাখ টাকা চান। সুরুজ মিয়া তাঁকে মুঠোফোনে জায়গার মালিকের সঙ্গে কথা বলায়। মল্লিকা স্বামীর কথায় বিশ্বাস করে প্রথমে বিশ হাজার টাকা দেন। গত ৭ আগষ্ট তিনি বাবার বাড়ি থেকে আরও আশি হাজার টাকা নিয়ে আসেন। সুরুজ মিয়া তাঁর কাছ থেকে জমি কেনার আশি হাজার টাকা নিয়ে মর্তুজাপুর গ্রামের এক আত্বীয় বাড়িতে রাখেন। একদিন পর জানাজানি হওয়ার পর সুরুজ তাঁর বন্ধু সম্রাট ও লিটনসহ তাঁকে আবারও সাভারে নিয়ে ভাড়ার বাসায় যান। সেখানে তাঁকে একা রেখে তাঁরা চলে আসেন।

তিনি মুঠোফোনে সুরুজের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁকে আবারও গোপীনাথপুর এলাকায় আসতে বলেন। তিনি গত ২৮ আগষ্ট (শুক্রবার) রাত নয়টার দিকে গোপীনাথপুর কড়ইতলা এসে নামেন। সেখানে তাঁর স্বামী সুরুজ মিয়া, সম্রাট ও লিটন থাকার কথা ছিল। কিন্তু বাস থেকে নামার পর তাঁদের কেউ সেখানে ছিলেন না। মুঠোফোনে সুরুজের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর সম্রাটের কথা বলে। এরপর সেখানে থানা পুলিশ এসে তাঁকে ইউপি সদস্য হেলানার জিম্মায় দেন।

মল্লিকা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, পরদিন শনিবার থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছি। রোববার থানার একজন এসআই এসে আমার সঙ্গে কথা বলে চলে যান। এরপর আমার স্বামী সুরুজ তাঁর বন্ধু সম্রাট ও লিটন এসে আমাকে গালিগলাজ করে চলে যান। সে আমাকে স্ত্রী হিসেবে স্বীকার করছে না। স্বামীকে দেওয়া টাকা ফেরত না পেলে বাবার বাড়িও যেতে পারছি না। আমার জন্য ইউপি সদস্য হেলেনা বেওয়া অপদস্ত হচ্ছে। থানা পুলিশও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এখন আমার আত্নহত্যা ছাড়া কোনো উপায় দেখছি না।

গোপীনাথপুর ইউপির সংরক্ষিত সদস্য হেলেনা বেওয়া বলেন, সুরুজ মিয়ার বাড়ি পাশের জোয়ালমাঠা গ্রামে। সে আমাদের গ্রামে নানান বাড়িতে রয়েছেন। সুরুজের স্ত্রী-সন্তান রয়েছে। মল্লিকা রাতে এসে কোথাও যেতে পারছিল না। একারণে থানা টহল পুলিশ আমাকে ডেকে আমার জিম্মায় দিয়েছে। তিন দিন ধরে আমার কাছে রয়েছে সে। মল্লিকাকে আশ্রয় দেওয়ায় সুরুজ, সম্রাট ও লিটন বাড়িতে এসে আমাকে গালিগলাজ করছে। আমি আর মল্লিকা রাখতে চাচ্ছি না। সোমবার মল্লিকাকে নিয়ে থানা গিয়ে ওসির সঙ্গে দেখা করেছি। ওসি সাহেব মল্লিকাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে বলেছেন।

সুরুজ মিয়া ও সম্রাট কে এলাকায় গিয়ে পাওয়া যায়নি। তাঁদের মুঠোফোনও বন্ধ রয়েছে। একারণে তাঁদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভভ যায়নি আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ খাঁন বলেন, মল্লিকার অভিযোগটি তদন্ত করা হচ্ছে। যেহেতু এখানে তাঁর কেউ নেই তাই বাবার বাড়িতে যেতে বলেছি।

 

  • 9
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে