রক্তাক্ত জনপদের শান্তির বাহক ছিলেন সাংসদ ইসরাফিল

প্রকাশিত: জুলাই ২৭, ২০২০; সময়: ১০:১৮ পূর্বাহ্ণ |
রক্তাক্ত জনপদের শান্তির বাহক ছিলেন সাংসদ ইসরাফিল

নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই : নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ইসরাফিল আলম শ্বাসকষ্ট নিয়ে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৫৩ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও ২ মেয়েসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ইসরাফিল আলমকে শনিবার সন্ধ্যায় ফুসফুস ইনফেকশনে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। রোববার সকাল সোয়া ৬টার দিকে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করেছেন স্ত্রী সুলতানা পারভীন বিউটি।

ইসরাফিল আলমের স্ত্রী সুলতানা পারভীন বিউটি জানান, ৬জুলাই অসুস্থতা নিয়ে তিনি প্রথম এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তখন তার করোনা ধরা পড়ে। এখানে কিছু দিন চিকিৎসা নেয়ার পর তিনি বাড়ি চলে যান। পরে পরীক্ষা করে করোনা নেগেটিভ আসে। এ অবস্থায় গত ১৭ জুলাই আবারও অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত শুক্রবার রাত ১১টা দিকে তার প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাকে ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দেয়া হয়।

তিনি আরো বলেন, বাসায় আনার পর ১৭ জুলাই তার কাশির সঙ্গে রক্ত আসে। ওই দিন আমরা তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করি। এছাড়াও তিনি হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত ছিলেন।

এক সময়ের রক্তাক্ত জনপদ হিসেবে পরিচিত ছিলো জেলার রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলা। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় সর্বহারারা দিনে-দুপুরে প্রকাশ্যে এই জনপদে মানুষকে জবাই করে রাখতো। এরপর জেএমবির তান্ডব। অশান্তি আর হাহাকারের বাতাস বইতে শুরু করে এই অঞ্চলে। ঠিক তখনই আর্বিভাব ঘঠে শ্রমিক নেতা ইসরাফিল আলমের।

২০০১ সালের নির্বাচনে প্রথমে তার পরাজয় হয়। এরপর যখন সর্বহারা ও জেএমবির অত্যাচার মাত্রারিক্ত হয়ে গেলো তখন এই অঞ্চলের মানুষ ২০০৮ সালে নৌকা মার্কায় ৩৬ বছর পর ভোট দিয়ে ধানের শীষের মনোনীত প্রার্থী আলমগীর কবিরকে পরাজিত করে বিএনপির দুর্গ হিসেবে খ্যাত নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনটিতে বিজয়ী করেন শ্রমিক নেতা ইসরাফিল আলমকে।

এরপর ২০১৮ সালেও তিনি সেই আলমগীর কবীরকে পরাজিত করে ৩য়বারের আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ইসরাফিল আলম তার দেওয়া কথা রেখেছেন। তিনি এমপি হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় এই রক্তাক্ত জনপদ থেকে জবাই, হানাহানি, লুণ্ঠন, ছেলে ও স্বামী হারানোর কান্না থেকে রক্ষা করেছেন রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলার মানুষকে। বর্তমানে তার চৌকশ নেতৃত্বের কারণে এই অঞ্চলে শান্তির সুবাতাস বইছে। যার কারণে এই অঞ্চলের মানুষ কখনই তার বিকল্প খুঁজতে চাননি।

তিনি নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনে টানা তিনবার আওয়ামী লীগের এমপি হিসেবে নেতৃত্ব প্রদান করছেন। এই ক্ষনজন্মা ব্যক্তির জন্ম রাণীনগর উপজেলার গোনা ইউনিয়নের ঝিনা গ্রামে ১৯৬৭ সালে মরহুম আজিজুর রহমানের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। তিতাস গ্যাস কোম্পানিতে মিটার রিডার হিসেবে তিনি দীর্ঘদিন চাকরি করেছেন। তার রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু প্রয়াত আহসান উল্লাহ মাস্টার।

তিনি ঢাকা মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। এরপর চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে তিনি পুরোপুরি রাজনীতিতে আত্মনিয়োগ করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্বে আছেন। ইসরাফিল আলম অনেক গুনেগুনান্বিত। তিনি বর্তমানে টকশোর জগতে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। এছাড়াও তিনি একজন তারকা কণ্ঠশিল্পী ও লেখক।

সাংসদ ইসরাফিল আলমের সহধর্মিনী সুলতানা পারভীন বিউটি বলেন ইসরাফিল আলম আত্রাই-রাণীনগর উপজেলার মানুষদের জন্য নিজের জীবন বাজি রেখে এই অঞ্চলের মানুষদের সুখ আর শান্তির দায়ভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। দীর্ঘসময় তিনি এই অঞ্চলের মানুষদের সুখে-দু:খে পাশে থেকেছেন। নিজের এলাকার মানুষদের শান্তির কথা ভেবে তিনি সংসার, নিজের স্ত্রী ও সন্তানদের ভুলে থাকতেন।

করোনা ভাইরাসের এই সংকটময় সময়ে তিনি পরিবারকে ত্যাগ করে দীর্ঘ প্রায় ৩মাস তিনি এসে রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলার মানুষদের পাশে থেকে ত্রাণ সামগ্রী বিতরন করেছেন। তিনি আর আমাদের মাঝে নেই। আমাদের সকলকে কাদিয়ে তিনি না ফেরার দেশে চলে গেছেন। আপনারা স্বামীর জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন যেন আল্লাহ তাকে মাফ করে ক্ষমা করে দেন এবং জান্নাতবাসী করেন।

  • 449
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে