মাস্ক না পরায় শিবগঞ্জে দুদিনে ১২৩ জনকে জরিমানা

প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০২০; সময়: ২:৪৬ অপরাহ্ণ |
মাস্ক না পরায় শিবগঞ্জে দুদিনে ১২৩ জনকে জরিমানা

নিজস্ব প্রতিবেদক, শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) : দেশে করোনা সংক্রমণের বিপজ্জনক সময় পার করলেও ফেসিয়াল মাস্ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে এখনো মানুষের মধ্যে রয়েছে অনীহা। দিন যতই যাচ্ছে ততই যেন মানুষ মাস্ক ব্যবহারের প্রতি উদাসীন হয়ে পড়ছে। দীর্ঘ লকডাউন শেষে জীবনযাত্রা অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসায় সড়কে মানুষের উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের অনেকের মুখে থাকছে না স্বাস্থ্য সুরক্ষার অতিপ্রয়োজনীয় সামগ্রীটি।

বিশেষ করে তরুণদের পাড়া-মহল্লায় জট বেঁধে আড্ডা দেওয়ার সময়, বিভিন্ন পাবলিক স্থানে, বাজারে এবং বিনোদন কেন্দ্রে একসঙ্গে মাস্ক ছাড়া চলাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে। অথচ মাস্ক ছাড়া ঘর থেকে বের হলেই জরিমানার বিধান করা হয়েছে। মাস্ক পরে বের হওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমগুলোতেও বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র জানান, করোনা সংক্রমণ শুরুর প্রথম থেকে স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ করা ও মাস্ক ব্যবহারের ওপর জোর দিয়ে আসছে। সড়কের বড় বড় বিলবোর্ডে মাস্ক ব্যবহার সংক্রান্ত সচেতনমূলক বিজ্ঞাপন দিয়েছে। যাত্রীরা মাস্ক ব্যবহার করছে কিনা তা তদারকির জন্য গঠন করা হয়েছে মনিটরিং কমিটি।

সরকার ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহার না করলে ২০১৮ সালের সংক্রমণ আইনের ২৪ (১,২), ২৫(১-এর ক,খ) এবং ২৫(২) ধারায় ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান করেছে। এই ধারা অনুযায়ী মাস্ক ব্যবহার না করলে শাস্তি সর্বোচ্চ ছয় মাসের জেল এবং এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড হতে পারে। জেলা প্রশাসকদের সতর্কতার সঙ্গে আইনের যথাযথ প্রয়োগের জন্য বলা হয়েছে। এ ছাড়া মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সারা দেশে এখন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, কঠোর আইন করে বা জরিমানা দিয়ে মানুষজনকে মাস্ক ব্যবহারে বাধ্য করা সম্ভব না বরং এ জন্য সচেতনতার বিকল্প নেই। কিন্তু মানুষের মধ্যে যদি মাস্ক পরার প্রবণতা না থাকে তাহলে আমরা কত আর জোর করে তাদের মাস্ক পরাব। কানসাট আমবাজার ঘুরে দেখা যায়, অনেকে মাস্ক পরলেও তা সঠিকভাবে পরছেন না। নাকের নিচে থুতনিতে, গলায় বা কানে ঝুলিয়ে রাখছেন। কেউ আবার পকেটে বা ব্যাগে রেখে দিচ্ছেন। বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষ, রিকশাচালক, বাসচালক, ট্রাকচালক, গার্মেন্টকর্মী, হকার, হোটেল-রেস্টুরেন্টের কর্মচারী, বাসা-বাড়ির কাজের বুয়া, কাঁচাবাজারের বিক্রেতা ও ভিক্ষুকদের মাস্ক পরতে দেখা যাচ্ছে না।

কানসাট বাজার এলাকার কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারের অধিকাংশ বিক্রেতার মুখের মাস্ক হয় থুতনিতে নয়তো কানে ঝুলছে। কেউ কেউ আবার মাস্কই পরেননি। মাস্ক না পরার কারণ জানতে চাইলে হযরত আলী নামের এক দোকানী বলেন, ‘সারাক্ষণ মুখে মাস্ক পরে থাকলে গরম লাগে, মাথা ঝিমঝিম করে, হাঁসফাঁস লাগে। আর মাস্ক থাকলে ক্রেতারা আমার কথা কম শুনে।’ কানসাট বাজারের কয়েকজন শ্রমিকের মাস্ক না পরার কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, শুরুতে কয়দিন পরলেও এখন আর মাস্ক পরতে ইচ্ছা করে না। আমার সঙ্গের অনেক শ্রমিকই এখন আর মাস্ক পরে না। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ যতদিন বাঁচাবো ততদিনই বাঁচবো ইনশাল্লাহ্।’ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম আম বাজারে আম বিক্রী করতে আসা ফতেপুর কর্নখালী গ্রামের বাদশা, মনাকষা ইউনিয়নের সিংনগর গ্রামের হামিদুর রহামন,দূর্লভপুর ইউনয়িনের আজবুগী গ্রামের জেন্টুসহ শত শত আম ক্রেতা-বিক্রেতার মুখে কোন মাস্ক নেই। সরজেিমন ঘুরে যা দেখা গেছে- ভয়াবহ অবস্থা। আম বাজারে মানুষের উপচে পড়া ভীড়। নেই কোন দুরত্ব বজায়। নেই কোন স্বাস্থ্য সম্মত পরিবেশ। নেই কোন নিয়ন্ত্রন। অসচেতনতার যত ধরন থাকতে হয় তা সবই আছে। সাইকেল ও ভ্যান বাজারে দেখা গেছে- একজন অন্যজনের গা ঘেষে কথা বলছে। হাঁচি কাশি দেয়ার সময় কোন সাবধানতা নেই।

আড়তগুলোতে দেখা গেছে- করোনার প্রতিরোধে কোন স্বাস্থ্য বিধি না মেনেই আম প্যাকেটের কাজ চলছে। হাট ইজারাদাররা শুধু একটি ঘরে বসেই মাইকিং করাই শেষ দায়িত্ব বলে মনে করে মাঝে মাঝে মাইকিং করছে স্বাস্থ্য বিধি মানার জন্য। রাস্তাঘাটের অবস্থা আরো ভয়াবহ। সাধারণ জনগনের যাতায়াতের কোন উপায় নেই। আমের ভ্যান, সাইকেল ও ট্রাকে ভরপুর রাস্তা। সব মিলিয়ে করোনার যত ভয়াবহতা থাকতে তাই আছে কানসাট আম বাজারে। যদিও মাঝে মাঝে প্রশাসনের লোক বাজারে টহল দিচ্ছে। কানসাট আম আড়তদার ব্যবসা সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক উমর ফারুক টিপু জানান, কানসাট আম বাজারে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যাপকভাবে প্রচারণা চালাচ্ছি। স্থানীয় সংসদ সদস্যের পক্ষ থেকে ৩শটি পিপিই, হ্যান্ডসাইটিজার, হ্যান্ডগ্লোবসহ বিভিন্ন ধরনের উপকরাদি বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্যি যে তারা এগুলো ব্যবহার করছে না। তাই আমরাও যথেষ্ট ঝুঁকির মধ্যে আছি। তবে এ ঝুঁকি থেকে বাঁচতে আমরাা আরো বেশী তৎপর হবো। প্রয়োজনে প্রশাসনকে আরো কঠোর হওয়াার জন্য অনুরোধ করবো। এ বিষয়ে শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ শামসুল আলম শাহ বলেন- আমরা অভিযান শুরু করেছি। গত রবিবার ৬৩ ও সোমবার ৬০ জনকে মাস্ক ব্যবহার না করার জন্য আটক করেছি ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ১শ’ ও ৩শ’ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। প্রয়োজনে আমরা আরো কঠোরভাবে অভিযান চালাবো। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাকিব আল রাব্বী বলেন, করোনা প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধিতে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের অভিযান অব্যহত রয়েছে। তিনি আরো বলেন- কানসাট আম বাজারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে করোনা প্রতিরোধে শতভাগ জনসচেতনতা সৃষ্টি করবো ইনশাল্লাহ।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে