বাগাতিপাড়ায় কলেজ সভাপতির মেয়েকে পরীক্ষায় নির্বাচিত করার অভিযোগ

প্রকাশিত: মে ২৯, ২০২০; সময়: ৪:১৮ অপরাহ্ণ |
বাগাতিপাড়ায় কলেজ সভাপতির মেয়েকে পরীক্ষায় নির্বাচিত করার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, নাটোর : নাটোরের বাগাতিপাাড়া উপজেলার লোকমানপুর মহাবিদ্যালয়ে দুটি পদের নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে স্বচ্ছতার মাধ্যমে পরীক্ষাসহ নিয়োগ দেওয়ার দাবী জানিয়েছেন প্রার্থীসহ এলাকাবাসী। পরীক্ষায় ডিজি প্রতিনিধির যোগসাজসে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি শাহাবুদ্দিন তার মেয়ে ও এক আত্মীয়ের স্ত্রীকে নির্বাচিত করায় অন্যান্য প্রার্থী ও কলেজ শিক্ষকসহ অভিভাবক মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা নতুন করে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় পরীক্ষা গ্রহণসহ নিয়োগ প্রদানের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত পত্র দিয়েছেন। এদিকে এঘটনা নিয়ে অভিভাবক মহলে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করায় যে কোন সময় সহিংস ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশংকা এলাকাবাসীর।

বঞ্চিত প্রার্থীসহ স্থানীয়দের অভিযোগ, লোকমানপুর মহাবিদ্যালয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ল্যাব সহকারী এবং পদার্থ বিভাগের ল্যাব সহকারী দু’টি পদে মহাবিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি শাহাবুদ্দিনের ছেলে ও মেয়ে ওই দুইটি পদের নিয়োগপ্রার্থী। নির্ধারিত দিনে সভাপতির উপস্থিতিতেই লিখিত পরীক্ষার পর নিয়মমত নিয়োগবোর্ড না বসে পরীক্ষাহলেই মৌখিক পরীক্ষার প্রশ্ন করলেন ডিজি প্রতিনিধি নাটোর এনএস সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান। এরপর খাতা না দেখেই পরীক্ষার ফলাফলশীটে নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের স্বাক্ষর গ্রহণ। পরের দিন ফলাফল দেওয়ার কথা। কিন্তু মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ফারুক উদ্দিন বিশ্বাস ফলাফল শীট আনতে গিয়েও তা পাননি। অথচ অদৃশ্য শক্তির বলে ফলাফলশীট হাতে পান মহাবিদ্যালয়ের সভাপতি। এরপর এলাকায় গিয়ে ঘোষণা করেন তার নিজ মেয়ে ও তার আত্মীয়ের স্ত্রী পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে। তিনি অধ্যক্ষ ফারুক উদ্দিন বিশ্বাসকে বললেন কলেজে এসে নিয়োগপত্র প্রদানসহ প্রয়োজনীয় কাজ করতে। বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষোভ সৃষ্টি হওয়ায় পরীক্ষা বাতিলসহ পূণরায় পরীক্ষার দাবী তোলেন বঞ্চিত পরীক্ষার্থী ও কলেজ পরিচালনা পর্ষদের একাংশসহ অভিবাবকরা। তারা এই অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কলেজ অধ্যক্ষ, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি প্রেরণ করেন।

কলেজ সূত্রে জানা যায়, কলেজের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ল্যাব সহকারী এবং পদার্থ বিভাগের ল্যাব সহকারী পদে বিজ্ঞপ্তীর সূত্র ধরে আবেদন করেন ১৩ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি শাহাবুদ্দিনের ছেলে মোস্তাফিজুর ও মেয়ে নাসরিন এবং সভাপতির সমর্থক এক নিকট আত্মীয়ের স্ত্রী ফাতেমা খাতুনও পরীক্ষার্থী ছিলেন। গত ১৮ মে নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা কলেজে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় ডিজি প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ছিলেন সিরাজ-উদ-দৌলা কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ শামসুজ্জামান, কলেজের অপর এক প্রফেসর, লোকমানপুর কলেজের অধ্যক্ষ ফারুক উদ্দিন বিশ্বাস, কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি শাহাবুদ্দিন ও পরিচালনা পর্ষদের অভিভাবক সদস্য রফিকুল ইসলাম।

ওই দুটি পদের প্রার্থী বাগাতিপাড়া উপজেলার মাড়িয়া এলাকার মাছিদুল আলমের মেয়ে নিভা খাতুন একই এলাকার আসাদুজ্জামান মকুলের মেয়ে অনিকা সুলতানা ও স্বরাপপুরের করিমের মেয়ে মৌসুমী আক্তার জানান, লিখিত পরীক্ষা শেষে তাদের একে একে বোর্ডে ডেকে মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয়নি। বরং পরীক্ষা হলেই এনএস কলেজের অধ্যক্ষ তাদের মৌখিক প্রশ্ন করেছেন। এছাড়া তারা অনেক ভাল পরীক্ষা দিলেও ওই দিন ফলাফল ঘোষণা না করে পরের দিন কলেজ সভাপতি শাহাবুদ্দিন ফলাফলশীট নিয়ে গিয়ে এলাকায় ঘোষণা করেন তার নিজ মেয়ে ও তার অনুসারী একজনের স্ত্রী পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে। তারাই নিয়োগ পাবে। তারা অভিযোগ করে বলেন, ডিজি প্রতিনিধির যোগসাজসে সভাপতি প্রকৃত ফলাফল পরিবর্তন করে নিজ মেয়ে ও নিকট আত্মীয়র স্ত্রীকে পরীক্ষায় প্রথম দেখিয়েছে। তারা এই ফলাফল বাতিল ও পূণ:পরীক্ষার দাবী জানিয়ে কলেজ অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, সভাপতি তার মেয়ে ও নিকট আত্মীয়ের স্ত্রীকে নির্বাচিত করার জন্যই এমন কাজ করেছেন। তিনি পরীক্ষার্থীদের দাবীর সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে পরীক্ষা বাতিল ও পুনরায় স্বচ্ছ পরীক্ষার মাধ্যমে ওই দুই পদে নিয়োগের দাবী জানান।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে লোকমানপুর মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ফারুক উদ্দিন বিশ্বাস জানান, লিখিত পরীক্ষা শেষে ওই হলেই ডিজি প্রতিনিধি একাকী মৌখিক প্রশ্ন করলে তিনি প্রতিবাদ করেন। কিন্তু ডিজি প্রতিনিধি তাতে কর্ণপাত করেননি। আবার খাতার দেখার আগেই ফলাফল শীটে তাদের স্বাক্ষর নেন। নিজের শরীর খারাপের কথা বলে পরের দিন সকলকে যেতে বলেন। পরের দিন তিনটার দিকে সকলের সামনে ডিজি প্রতিনিধিকে ফোন করলে তিনি জানান, সভাপতি এসে বাগাতিপাড়া-লালপুরের এমপি শহিদুল ইসলাম বকুলকে নিয়ে তাকে চাপের মুখে ফলাফলশীটসহ কাগজপত্র নিয়ে গেছে। এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ দাবী করেন, এলাকায় নিজ মেয়ে নাসরিন ও ফাতেমা নির্বাচিত হওয়ার কথা প্রচারের পর সভাপতি তাকে ফোনে কলেজে এসে নিয়োগপত্রসহ প্রয়োজনীয় কাজ করতে বলেন। কিন্তু তিনি এখনও তা করেননি। তিনি পরীক্ষার্থী ও কমিটির একাংশের আবেদন পেয়েছেন দাবী করে জানান, দ্রুতই এব্যাপারে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

এদিকে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে সভাপতি শাহাবুদ্দিন সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অধ্যক্ষ নেতৃত্বে কমিটির কিছু সদস্য করিমের মেয়ে মৌসুমী ও মকুলের মেয়ে অনিকাকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য কয়েক লাখ টাকার চুক্তি করেছে। তাদের নিয়োগ দিতে না পেরে এখন এমন কথা বলছে। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে অনিকা ও মকুল জানান, তারা কোন টাকা দিয়ে চাকুরীর চুক্তি করেননি। বরং স্বচ্ছতার ভিত্তিতে পরীক্ষা চেয়েছেন মাত্র।

ডিজি প্রতিনিধি নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা কলেজের অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নিয়ম মেনেই পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। তবে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, পরীক্ষা গ্রহণের পরদিন লোকমানপুর মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ তাকে ফোন করে সভাপতির কাছে ওই সব কাগজ দিতে বলায় তিনি দিয়েছেন। তবে অধ্যক্ষ এমন দাবী অস্বীকার করে জানান, তিনিসহ নিয়োগ বোর্ডের সকলেই পরের দিন যাওয়ার কথা থাকলেও ডিজি প্রতিনিধি শাহাবুদ্দিনকে ডেকে সমস্ত কাগজ দিয়েছেন।

বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রিয়াঙ্কা দেবী পাল সাংবাদিকদের জানান, তিনি এখনও অভিযোগ পাননি। পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রমজান আলী আকন্দ জানান, নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষা গ্রহণের দিনই ফলাফল ঘোষণা করতে হবে। পরের দিন ফলাফল দেওয়ার বিধান নেই। এধরণের লিখিত অভিযোগ এখনও পাননি। তবে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। স্থানীয় সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলের সাথে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এবিষয়ে কিছুই জানেননা বলে জানান। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে কোন অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান তিনি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে