জয়পুরহাটে গাছে বেঁধে নারীর শরীরে ছ্যাঁকা, গ্রেপ্তার ২

প্রকাশিত: মে ২৮, ২০২০; সময়: ৮:০০ অপরাহ্ণ |
জয়পুরহাটে গাছে বেঁধে নারীর শরীরে ছ্যাঁকা, গ্রেপ্তার ২

নিজস্ব প্রতিবেদক, জয়পুরহাট : জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌরসভা এলাকার শ্রীকৃষ্টপুর স্কুল পাড়ায় স্ত্রীর মুঠোফোনে মিসড কল আসার অভিযোগ তুলে মধ্যযুগীয় কায়দায় স্ত্রীকে লিচু গাছে বেঁধে রেখে নিড়ানি গরম করে ঘাড়ে মুখে পায়ে হাতে সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গৃহবধূর স্বামী ও ভাসুরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আহত গৃহবধূকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছেন এলাকাবাসী।

স্থানীয়রা জানান, পৌর এলাকার শ্রীকৃষ্টপুরের বাসিন্দা আব্দুস সালামের ছেলে শাকিল আহম্মেদের সাথে বগুড়া জেলার আদমদীঘী উপজেলার সান্তাহার নামাপোতা গ্রামের আইয়ুব আলীর মেয়ে খাদিজার সাথে তিন বছর আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই স্বামী যৌতুকের জন্য নানাভাবে নির্যাতন চালাতো।

নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর নাম খাদিজা খাতুন (২০)। গৃহবধূর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, শ্বশুর ও শ্বাশুড়ির চোখের সামনে পুত্রবধূকে এই নির্মম নির্যাতন চালালেও তাঁরা কেউই তাঁকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেননি। উল্টো পুত্রবধূকে নির্যাতন করার জন্য তাঁরা ছেলেকে মদদ দিয়েছিলেন। ওই গৃহবধুর স্বামী শাকিল হোসেন তাঁর স্ত্রীকে গাছে বেঁধে রেখে নিড়ানি গরম করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাঁকা দেওয়ার কথা অকপটে স্বীকার করেছেন।

নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ খাদিজা খাতুন বলেন, আমার আড়াই বছর আগে বিয়ে হয়েছে। আমার বাবা বাড়ি সান্তাহারের পোতা গ্রামে। আমার স্বামী শাকিল হোসেন রাজমিস্ত্রির কাজ করে। বিয়ের পর থেকেই শ্বশুর-শাশুড়ী আমাকে সহ্য করতে পারছিলেন না। আমার স্বামী ভালো ছিল। শ্বশুর-শাশুড়ীর কারণে সে বিভিন্ন সময় আমাকে মারধর করত। তাছাড়া সন্দেহের চোখে দেখত সে। একারণে মুঠোফোনও ব্যবহার করি না।

তিনি বলেন, রাতে বাড়িতে ফিরে কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাকে বাড়ির আঙিনায় লিচুর গাছে কাছে ডেকে নিয়ে যায় স্বামী। সে লিচুর গাছের সঙ্গে পিচমোড়া দিয়ে আমার হাত বেঁধে ফেলে। তখন আমার শ্বশুর-শাশুড়ী উঠানে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এরপর আমার স্বামী নিড়ানি গরম করে আমার দুই গালে, দুই হাতে, পায়ে ছ্যাঁকা দেয়। যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।

ওই গৃহবধূ আরও বলেন, স্বামী আমাকে নির্যাতন করে মেরেছে। তবুও স্বামী সংসার করতে চাই। একারণে মা-বাবাকে ঘটনাটি জানায়নি।

সাবেক ওর্য়াড কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম বলেন, গৃহবধূকে তাঁর স্বামী প্রায়ই নির্যাতন করতেন বলে শুনেছি। বুধবার রাতে বাড়ির মূল দরজা বন্ধ করে গৃহবধুকে লিচু গাছে বেঁধে রেখে শরীরে ছ্যাঁকা দিয়েছে তাঁর স্বামী। গৃহবধুর চিৎকারে প্রতিবেশীরা ঘটনাটি জানতে পারেন। তাঁরা মহল্লার লোকজনদের সঙ্গে নিয়ে দরজা ধাক্কা দিয়ে ভেঙে ভেতরে ঢুকে গৃহবধূকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক নাজমুল হক বলেন, গৃহবধুর দুই গালে, দুই হাতে ও পায়ে ছ্যাঁকা দেওয়ার চিহ্ন রয়েছে। স্বামী এ কাজটি করেছেন বলে গৃহবধূ আমাদের জানিয়েছেন। তাঁকে প্রথমে আক্কেলপুর উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় পরবর্তিতে নওঁগা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।

অভিযোগ স্বীকার করে গৃহবধূর স্বামী শাকিল হোসেন বলেন, দুই দিন আগে আমার মুঠোফোনে কল দিয়ে একজন ছেলে আমার বউয়ের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিল। আজকে আবার ওই নম্বর থেকে মিসড কল এসেছিল। তখন আমার ওপর ভূত ভর করেছিল। একারণে বউকে লিচুর গাছের সঙ্গে বেঁধে নিড়ানি গরম করে ছ্যাঁকা দিয়েছি।

গৃহবধূর শ্বশুর আব্দুস ছালাম বলেন, ছেলে তাঁর বউকে মারধর করত। আমরা রক্ষা করতে গেলে আমাদের ওপর চড়াও হয়। তারপরও ছ্যাঁকা দেওয়ার সময় বউকে রক্ষা করতে এগিয়ে গিয়েছিলাম। এরপর লোকজন দরজা ভেঙে বাড়ির ভেতর ঢুকে বউকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। আমরাও বউয়ের সঙ্গে হাসপাতালে এসেছি।

আক্কেলপুর থানার ওসি আবু ওবায়েদ জানান, গৃহবধূকে গাছে বেঁধে রেখে ছ্যাঁকা দেওয়ার ঘটনায় গৃহবধূর বাবা বাদি হয়ে স্বামীসহ চার জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলার পর গৃহবধূর স্বামী শাকিল ও ভাসুর আসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে