রাজশাহীতে সাড়া ফেলেছে ‘ফাতেমা’ জাতের নতুন ধান

প্রকাশিত: মে ৭, ২০২২; সময়: ৯:৩৩ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীতে সাড়া ফেলেছে ‘ফাতেমা’ জাতের নতুন ধান

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে বোরো ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। এরমধ্যে জেলার পবা উপজেলা নওহাটার তেঘর-বসন্তপুর গ্রামের মাঠে সাংবাদিকের চাষ করা ‘ফাতেমা’ জাতের ধান ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এর প্রায় শীষে পাওয়া গেছে প্রায় ৯শো’টি ধান। দেশে উৎপাদিত প্রচলিত জাতের ধানের চেয়ে এই ধানের ফলন অনেক বেশী।

রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ ও পবা উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৌখিন কৃষক সাংবাদিক সরকার দুলাল মাহবুব চাষ করেছেন এই নতুন জাতের ধান। ওই ধান দেখতে এবং কিনতে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ ভিড় জমাচ্ছে তার ধান ক্ষেতে। সাংবাদিকতার পাশাপাশি নিজের জমিতে আধুনিক চাষাবাদে রয়েছে তার ব্যাপক আগ্রহ।

গতানুগতিক কৃষির পরিবর্তে নতুন জাতের এ ধান উৎপাদনে তিনি সাফলতার স্বপ্ন দেখছেন। লাভজনক হওয়ায় তার মতো এলাকার অনেকেই এখন নতুন এ জাতের ধান চাষের জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তবে কৃষিবিদদের উদ্ভাবিত এবং প্রচলিত এই ধানের জাত নয় বলে যত্নের পুরোটা নেয়া সম্ভব হয়নি বলে তিনি জানান। এরপরেও অন্যান্য ধানের চেয়ে প্রায় দ্বিগুন ফলন হবে বলে তিনি জানান।

দেখতে ব্রি-২৮ ধানের মতো এর জাতের বৈশিষ্ট্য বলে দুলাল মাহবুব জানান। অন্য ধানের মতোই এ ধানের চাষ পদ্ধতি। আউশ, আমন ও বোরো তিন মৌসুমেই এ ধানের চাষ করা যায়। তবে বোরো মৌসূমে এর উৎপাদন সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। গাছের উচ্চতা প্রায় ৫ফিট যা অন্য ধানের তুলনায় বেশি। গাছগুলো শক্ত হওয়ায় হেলে পড়ে না।

আর এক একটি ধানের শীষে ৫০০-১০০০টি করে ধান পাওয়া গেছে। অন্য সাধারণ ধানের ৫টি শীষের যে ধান হবে এ ধানের একটি শীষে তার সমান ধান হবে। ফলে সাধারণ ধানের তুলনায় ফলন অনেক বেশী হবে। চলতি মৌসূমে তিনি ৪৫ শতাংশ জমিতে এই ধান চাষ করেছেন। ধান অনেকটা পাকা শুরু হয়েছে। ধারণা করছেন ৬০ মণ ধান হবে। এধানে রোগ ও পোকামাকড়ের হার তুলনামূলক কম। এছাড়া চাল খুব চিকন ও ভাতও খেতে খুব সুস্বাদু।

তিনি জানান, বীজপাতা তৈরি করার পর ১৫০ থেকে ১৫৫ দিনের মধ্যে ধান কাটা যায়। এই ধান ঝড়, খড়া এবং লবণাক্ততা সহনীয়। ওই জাতের প্রতিটি ধানগাছের দৈর্ঘ্য ১১৫ থেকে ১৩০ সেন্টিমিটার, গুছি গড়ে আটটি, প্রতিটি ধানের ছড়ার দৈর্ঘ্য ৩৬ সেন্টিমিটার, গড়ে দানার সংখ্যা এক হাজারের ওপরে।

দুলাল মাহবুব বলেন, তিনি টিভি, পত্রপত্রিকা ইন্টারনেটে কৃষি প্রতিবেদনের খবর দেখে এই ধান চাষে উদ্বুদ্ধ হন। এর পর নওগাঁ জেলার মান্দার দুশোতিনা গ্রামের আশরাফুল ইসলামের কাছে থেকে ৫কেজি ধান সংগ্রহ করেন। যার প্রতি কেজি বীজ ধানের দাম নিয়েছিলেন ৪০০টাকা। এ ছাড়াও তিনি আরও বিভিন্ন জাতের ৪ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। যার এক বিঘা ব্রি-২৮, তিন বিঘা বায়ার কোম্পানীর তেজগোল্ড।

তিনি আশা করছেন অন্যজাতের চেয়ে এই ধানের ফলন বেশী হবে। তার ৪৫ শতকে ৬০ মণ ধাণ ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রথম এই জাতের ধান চাষ করছেন তাই উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা ও দক্ষ কৃষকের পরামর্শক্রমে খুব যত্ন সহকারে করেছেন।

তিনি আরও বলেন এই উচ্চ ফলনশীল ধান অত্র এলাকার কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চান। ইতোমধ্যে বেশ কিছু বীজের জন্য যোগাযোগ করেছেন। তিনি প্রতিকেজি বীজ ধান চারশো’ দরে কিনলেও কৃষকের সুবিধার্থে তিনি প্রতি কেজি ধানের দাম অনেক কম রাখবেন বলে জানান।

তিনি বলেন ঝড় বৃষ্টিতে মাঠের প্রায় সব ধান গাছ নুয়ে পরেছে অথচ এইধান গাছ গুলোএখনো শক্তভাবে দাঁড়িয়ে আছে। সামনে সপ্তাহে তিনি ধান কাটা শুরু করবেন। তানোর ও পবা উপজেলার উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা তার ধান ক্ষেত পরিদর্শন করেন। পবা উপসহকারী কৃষি অফিসার বলেন ধান ক্ষেত পরিদর্শন করেছি, ধানের গাছ ভাল হয়েছে ফলনও ভাল হবে আশা করা যাচ্ছে।

শেষে তিনি বলেন, এই জাতটি ২০১৬ সালে এক কৃষকের হাত ধরে আসলেও দেশের কৃষি অফিস তেমন কোন গুরুত্ব দেয়নি। যারা এই জাতের ধানচাষ করেছি তারা শুধু উৎপাদনের দিকটাই বিবেচনা করেছি। বর্তমান বাাজরে এমন অধিক উৎপাদনশীল জাতের ব্যাপারে কৃষিবিদ ও কৃষি অফিসাররা তেমন কিছুই জানেন না। প্রথম থেকে এই জাত নিয়ে গবেষণা করলে এখন অনেক কিছুই জানতে পারা যেত।

যেমন, ধানের আয়ুষ্কাল কত দিন, কোন মাসে এই রোপন করলে কাঙখিত ফলন পাওয়া যাবে, ধান ও ভাতের গুণাগুন ঠিক আছে কিনা, উৎপাদনকৃত ধান রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতি, ক্ষেতের যত্নে কি ব্যবহার করতে হবে, রোগবালাই দেখা দিলে কোন কীটনাশক স্প্রে করতে হবে-এমন অনেক কিছুই জানা যেত। তিনি কৃষি বিভাগের কাছে আবেদন জানান, এই জাতটি গবেষণা করার জন্য।

জানা গেছে, বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা ইউনিয়নের চাকুলিয়া গ্রামে লেবুয়াত শেখ (৪০) নিজেদের জমিতে ২০১৬ সালে প্রথম ওই ধান চাষ করেন। ওই বছর বোরো মৌসুমে তাঁর বাড়ির পাশে জমিতে হাইব্রিড আফতাব-৫ জাতের ধান কাটার সময় তিনটি ভিন্ন জাতের ধানের শীষ তিনি দেখতে পান।

ওই তিনটি শীষ অন্যগুলোর চেয়ে অনেক বড় এবং শীষে ধানের দানার পরিমাণও অনেক বেশি ছিল। এরপর ওই ধানের শীষ তিনটি বাড়িতে এনে শুকিয়ে বীজ হিসেবে ব্যবহার করে এ ধান চাষ শুরু করেন। তিনি তার মায়ের নামানুসারে নাম না জানা এই ধানের নাম রাখেন ‘ফাতেমা ধান’।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে