রাতে বীজতলায় পাখির হানা বিপাকে কৃষক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৪, ২০২১; সময়: ৩:২১ অপরাহ্ণ |
খবর > কৃষি
রাতে বীজতলায় পাখির হানা বিপাকে কৃষক

নিজস্ব প্রতিবেদক, মান্দা : নওগাঁর মান্দায় বোরো ধানের বীজতলায় রাতে হানা দিচ্ছে পাখির দল। কিচির-মিচির শব্দে দলবেঁধে নেমে সাবাড় করে দিচ্ছে বীজতলা। এরই মধ্যে কালীগ্রাম, চকভোলাই, চকদেবীরাম, নুরুল্লাবাদসহ কয়েকটি মাঠের বেশকিছু বীজতলা উজাড় করে দিয়েছে এসব পাখি।

কৃষকেরা বলছেন, চলতি মৌসুমে এসব মাঠে অন্তত এক হাজার বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হবে। এর বিপরীতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। পাখিতে বীজতলা নষ্ট হলে চারা সংকটে পড়বেন তাঁরা।

তাঁরা আরও বলেন, পাখির হানা ঠেকাতে বীজতলার চারিদিকে সুতলি দিয়ে ঘিরে পলিথিন টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে কাকতাড়ুয়া। রাত জেগে পাহারা বসিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না পাখিদের। রাত হওয়ায় কী জাতের পাখি বীজতলায় হানা দিচ্ছে সেটাও বোঝা যাচ্ছে না।

কালীগ্রাম মাঠের কৃষক তছির উদ্দিন সরদার জানান, চলতি মৌসুমে বোরো ধান রোপণে বিভিন্ন জাতের ৩৫ কেজি ধানের বীজতলা তৈরি করেন। সম্প্রতি ওই বীজতলায় গজানো চারা বপণ করা করা হয়েছে। হঠাৎ করেই বীজতলায় হানা দিয়েছে একদল পাখি। তাঁর বীজতলার সব ধান সাবাড় করে দিয়েছে পাখিরা।

একই মাঠের কৃষক মাহবুব আলম ধলু বলেন, বীজতলা রক্ষার জন্য এর চারিদিকে সুতলি দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। সুতলিতে বেঁধে দেওয়া হয়েছে পলিথিন। খড় দিয়ে তৈরি করা হয়েছে কাকতাড়ুয়া। তাতেও কাজ হচ্ছে না। উপায়ান্ত না থাকায় রাত জেগে বীজতলা পাহারা দিচ্ছেন কৃষকেরা।

বীজতলার পাশের বাসিন্দা শরিফা বিবি জানান, গভীর রাতে কিচির-মিচির শব্দে দলবেঁধে পাখিরা বীজতলা এসে পড়ে। এরপর বীজতলার ধান খেয়ে সাবাড় করে দেয়। রাতের কারণে কী জাতের পাখি তা চেনা যায় না।

নুরুল্লাবাদ গ্রামের কৃষক শাহজাহান আলী বলেন, চলতি মৌসুমে বোরো ধান রোপণের জন্য বীজতলায় ৪০ কেজি ব্রি ধান-৮১ জাতের ধানবীজ বপণ করেন। রাতে হঠাৎ করে সেখানে পাখি হানা দিয়ে ধান খেয়ে ফেলেছে। পরে আবারো নতুন বীজতলা তৈরি করেন। বৃহস্পতিবার সেখানে গজানো ধান ফেলা হয়েছে।

কালীগ্রাম শাহ্ কৃষি তথ্য ও পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা জাহাঙ্গীর আলম শাহ্ বলেন, চাহিদার অনুপাতে কৃষকেরা এ মৌসুমের জন্য বিভিন্ন জাতের বীজ সংগ্রহ করেন। পাখিরা বীজতলার ধান খেয়ে ফেলায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা।

তিনি আরও বলেন, ভালো ধানবীজ বাজার থেকে অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে ভালো জাতের ধানবীজ পাওয়া দুষ্কর। এ অবস্থায় বীজতলা নষ্ট হলে কৃষকেরা বিপাকে পড়বেন। চারার সংকটও দেখা দিতে পারে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন বলেন, ‘বিষয়টি আমি অবহিত নই। অতীতে এ ধরণের ঘটনা ঘটেনি। তাই বলা যাচ্ছে না কী ধরণের পাখি বীজতলা নষ্ট করছে। পলিথিন ও নেট জাল দিয়ে ঘিরে দিয়ে কৃষকেরা বীজতলা রক্ষা করতে পারেন।’

এ প্রসঙ্গে রাজশাহী বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির বলেন, পাখির হানা ঠেকাতে রাতে বীজতলায় আলো ও শব্দের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। নেট দিয়ে ঘিরে দিতে হবে চারিদিক। ফাঁদ পেতে দু’একটি পাখি ধরা গেলে এদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাবে। তখন সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দেওয়া যাবে কৃষকদের।

তিনি আরও বলেন, অতিথি পাখিরা তৃণভোজী। এরা কখনো দানাদার খাবার খায় না। রোগাক্রান্ত ও দুর্বল মাছসহ জলজ উদ্ভিদ খেয়ে এরা জীবন ধারণ করে। পাখিদের প্রতি মানুষের বিরুপ ধারণা তৈরি হয় এমন কোনো কাজ করা যাবে না।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে