নিয়ামতপুরে বিনা-১৭ ধানচাষে কৃষকের মুখে হাসি

প্রকাশিত: অক্টোবর ২০, ২০২১; সময়: ৩:৩৩ অপরাহ্ণ |
খবর > কৃষি
নিয়ামতপুরে বিনা-১৭ ধানচাষে কৃষকের মুখে হাসি

নিজস্ব প্রতিবেদক, নিয়ামতপুর : নওগাঁর নিয়ামতপুরে বিনা-১৭ জাতের ধানচাষে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। নতুন জাতের এ ধানচাষে সার, পানি যেমন কম লাগছে তেমনি কাটাও যাচ্ছে বেশ আগেই। স্বল্পমেয়াদী জীবনকাল, সার-পানি সাশ্রয়ী, আলোক সংবেদনশীল, উন্নত গুণাগুণ সম্পন্ন ও খরাসহিষ্ণু হওয়ায় কৃষকের মাঝে আশার আলো জাগিয়েছে বিনা-১৭ জাতের ধান।

নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার শালাবাড়ি মাঠে ধান কাটার পর বটতলী হাটে ধান কর্তন কালে আলোচকরা এসব কথা বলেন। আলোচনা সভায় কৃষকদের বিনা-১৭ জাতের ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) উপকেন্দ্র চাঁপাইনবাবগঞ্জ পরিচালিত গবেষণা ও সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে ধান কর্তন দিবসে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ধান কর্তন দিবসে কৃষক ইব্রাহিম খলিলের জমির ২০ বর্গমিটার ধান কেটে ১৯ কেজি ৭০০ গ্রাম ধান পাওয়া যায়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় ১ লাখ ৯৭ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে এবার আমনের আবাদ হয়েছে। বিনা-১৭ জাতের ধান চাষ হয়েছে ১ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে রানীনগরে ৫২০ হেক্টর, ধামইরহাটে ১২৫ হেক্টর, নিয়ামতপুরে ৫ হেক্টর ও মান্দায় ২০ হেক্টরসহ অন্যান্য উপজেলায় কমবেশি এ জাতটির চাষ হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বিনা-১৭ জাতের ধানে পানি কম লাগার কারণে একে গ্রিন সুপার রাইস নামেও অভিহিত করেছেন অনেকে। এ জাতের ধানচাষে ইউরিয়া সার এক-তৃতীয়াংশ ও সেচ ৫০ শতাংশ কম লাগে। ধানের জীবনকাল ১১০-১১৫ দিন। এর প্রতি শীষে ২০০-২৫০টি দানা থাকে এবং ফলনও আশাব্যঞ্জক হওয়ায় কৃষকের জন্য এ জাতের ধান চাষ খুবই লাভজনক। প্রতি বিঘায় প্রায় ২২-২৫ মণ ফলন হয়ে থাকে। অন্যান্য ধানের তুলনায় আবাদে ২-৩ হাজার টাকা খরচ কম হয়। ধান কাটার পর একই জমিতে রবিশষ্য হিসেবে সরিষা, মসুর ডাল, আলু বা তিল চাষ করা যাবে। পরে ওই জমিতে বোরো ধান লাগানো যাবে।

শালবাড়ি গ্রামের কৃষক ইব্রাহিম খলিল বলেন, চার বিঘা জমিতে বিনা-১৭ জাতের ধান রোপণ করেছিলাম। এ জাতের ধানচাষে সেচ, সার, কীটনাশক খরচ অনেকটাই কম। একসঙ্গে রোপণ করার পর আমার জমির ধান কাটা হচ্ছে। আর পাশের জমিতে এখনো প্রায় ২০-২৫ দিন পর্যন্ত ৩-৪টি সেচ দিতে হবে। আগে স্বর্ণা-৫ জাতের আবাদ করতাম। সে তুলনায় বিঘাপ্রতি আমার ২-৩ হাজার টাকা খরচ কম পড়েছে। আমার মনে হচ্ছে, বিনা-১৭ জাতের ধান চাষ লাভজনক এবং কৃষকদের আশার আলো দেখাচ্ছে। অনেকেই এখন এ ধান চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।

ঘুলকুড়ি গ্রামের কৃষক মফিজ উদ্দিন বলেন, আমরা নতুন এ জাতের গুণাবলি বিষয়ে জানতাম না। পাশের জমির সঙ্গে ধান লাগিয়েও তার জমির ধান কাটা হচ্ছে। ফলনও ভালো হচ্ছে। আর আমার জমির ধান পাকতে এখনো ২০-২৫ দিন লাগবে। বিনা-১৭ জাতের ধান স্বল্পসময়ে পেকেছে। এ ধান কাটার পর রবিশষ্য রোপণ করা যাবে। যে জমিতে দুই ফসল হতো সেখানে এখন তিন ফসল করা সম্ভব। আগামীতে এ জাতের ধান নিজে লাগাবো এবং অন্যদেরও উদ্বুদ্ধ করবো।

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ উপকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. মো. হাসানুজ্জামান বলেন, বিনা-১৭ একটি স্বল্পমেয়াদী জাতের ধান। খরাসহিষ্ণু হওয়ায় ৩০ শতাংশ পানি কম প্রয়োজন হয়। ১১০-১১৫ দিনের মধ্যে কাটা যায়। যে জমিতে দুইটি ফসল হতো সেখানে এ জাতের ধানচাষে এখন তিনটি ফসল চাষ করা সম্ভব। বিনা-১৭ ধান কাটার পর ওই একই জমিতে কৃষকরা রবিশষ্য চাষ করতে পারবেন। পরে জমি তৈরি করে বোরো ধান লাগানো যাবে। এ জাতের ধানচাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

আলোচনা সভায় বিনার বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন, জুবায়ের আল ইসলাম, নওগাঁ জেলা কৃষি প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ কেএম মঞ্জুরে মওলা, নিয়ামতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমির আবদুল্লাহ মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান, শ্রীমন্তপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম, উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা সাফিউল হকসহ স্থানীয় কৃষকরা উপস্থিত ছিলেন।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে