বৃষ্টির পানিতে ডুবে আমনের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত

প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০২১; সময়: ১:১৩ অপরাহ্ণ |
খবর > কৃষি
বৃষ্টির পানিতে ডুবে আমনের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : খুলনা জেলায় আমনের আবাদ হয় বেশি উপকূলীয় দাকোপ উপজেলায়। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে এই উপজেলার অনেক এলাকায় আমনের বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক বীজতলা ক্ষতিগস্ত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অনেক চাষি নতুন করে বীজতলা তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত দাকোপ উপজেলা গঠিত। চলতি মৌসুমে এখানে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৯ হাজার ৪০০ হেক্টর জমি। এ জন্য ১ হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে বীজতলা করা হয়েছিল। সম্প্রতি অতিবৃষ্টিতে ৯৫ শতাংশ বীজতলা ডুবে যায়। অনেক স্থানের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১০০ হেক্টর জমির বীজতলা পুরো নষ্ট হয়েছে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অন্তত ২০ কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শ্রাবণের মাঝামাঝি (আগস্টের প্রথম সপ্তাহ) থেকে ভাদ্রের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আমনের চারা রোপণ করা হয়। বীজতলা করা হয় আষাঢ়ের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত। এবারও চাষিরা সময়মতো বীজতলা তৈরি করেছিলেন। তবে গত মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টানা বর্ষণ হয়। এতে উপকূলীয় এই নিচু এলাকার সব বীজতলা ডুবে যায়। উপজেলার যেসব এলাকার পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা তুলনামূলক ভালো, সেখান থেকে বৃষ্টি থামার দু–এক দিনের মধ্যে পানি নেমে গেছে। তবে সেসব বীজতলার চারার অবস্থাও ভালো নেই। আর এখনো অনেক এলাকার বীজতলা পুরোপুরি পানির নিচে।

কৃষকদের অভিযোগ, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সরকারের কাছ থেকে নামমাত্র ইজারা নিয়ে অথবা প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা ব্যক্তিরা অধিকাংশ খাল দখলে রেখেছেন। ইজারাদার আর তাঁদের প্রতিনিধিরা খালে জাল ও বেড়া দিয়ে মাছ শিকার করেন। এতে পানিনিষ্কাশনসহ নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে প্রয়োজনের সময় যেমন পানি সরছে না, তেমনি দিন দিন খালের নাব্যতা কমছে। এ ছাড়া এলাকার জলকপাট ব্যবস্থপনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা বেশির ভাগ সময় সব ধরনের কৃষকের কথা চিন্তা না করে পানি ওঠানামা করান। যখন প্রয়োজন নেই হয়তো তখন জলকপাট দিয়ে নদী থেকে পানি উঠিয়ে দেন। আবার প্রয়োজনের সময় পানি ঠিকমতো সরান না।

দাকোপের বানীশান্তা ইউনিয়নের পূর্ব খেজুরিয়া গ্রামের চাষি সঞ্জীব মণ্ডল এ বছর ১৬ বিঘা জমিতে আমন চাষের পরিকল্পনা করেছিলেন। ১৫ দিন আগে বীজতলা তৈরি করেন। চারা কিছুটা বড়ও হয়েছিল। এখন বীজতলায় এক হাত পানি থই থই করছে। সঞ্জীব মণ্ডল বলেন, অধিকাংশ চাষির বীজতলা পানির নিচে। চারার মাথায় পচন ধরেছে। এই চারা রোপণ করা যাবে। অনেকে নতুন করে বীজতলা তৈরির চেষ্টা করছেন। এতে খরচ বাড়বে। অনেকে ভালো বীজ জোগাড় করতে পারছেন না। নতুন বীজতলার চারা রোপণের উপযোগী হতে মৌসুমে শেষ দিকে চলে আসবে।

চুনকুড়ি গ্রামের কৃষক দেবাশীষ বৈদ্য বলেন, তাঁর বীজতলা পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে। আবার বীজতলা তৈরির জন্য বেশি দামে বীজধান সংগ্রহ করেছেন। এতে তাঁর ধান লাগানোর সময় অন্তত তিন সপ্তাহ পিছিয়ে যাবে। উপজেলার সুতারখালী এলাকার একমাত্র ফসল এই আমন। সেখানকার কৃষক গৌতম মণ্ডল বলেন, টানা বৃষ্টিতে ধানের চারা ডুবে ছিল। তখন চারার গায়ে শেওলা জমেছে। বীজতলা থেকে পানি নেমেছে, তবে চারা নেতিয়ে রয়েছে। কিছু চারা একবারে নষ্ট হয়ে গেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান খান বলেন, অনেক বীজতলা এখনো ডুবে আছে। আবার অনেক বীজতলার চারা নেতিয়ে পড়েছে। তবে কৃষি বিভাগের পরামর্শমতো পরিচর্যা করলে বীজতলার ক্ষতি কমবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে