ধানের পর সরিষা, মসুরেও মুখে হাসি বরেন্দ্রের কৃষকের

প্রকাশিত: মার্চ ১৩, ২০২১; সময়: ২:৪৮ অপরাহ্ণ |
ধানের পর সরিষা, মসুরেও মুখে হাসি বরেন্দ্রের কৃষকের

আসাদুজ্জামান মিঠু : গত বছর থেকে আমন ও বোরো ধানের ভাল দাম পাচ্ছেন কৃষকেরা। খড়ের দামও ভাল। ফসলের দাম ভাল পেয়ে বেশ খুশিতে আছেন বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকেরা।

তাই আমন উঠার পতিত জমিতেই (রবিশস্য) সরিষা-মসুর বোপন করেছিলেন তারা। আর বোপন করা সরিষা ও মসুরই ধানের পর এবার কৃষকের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন। চলতি বছর বরেন্দ্র অঞ্চলে সরিষার ও মসুরের বাম্পার ফলন হচ্ছে। সেসাথে বাজারে দামও ভাল।

রাজশাহীসহ বরেন্দ্র অঞ্চলে এখন মাঠে মাঠে ক্ষেত থেকে এখন সরিষা ও মুসুর(ডাল)তুলতে ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। অনেক এলাকায় ইতিমধ্যে সরিষা ও মসুর মাড়াই শেষ করে বোরো রোপন করছেন।

কৃষকেরা জানান, আমন ধান ওঠার পর বোরো ধান লাগানোর আগ পর্যন্ত জমি ফাঁকা থাকে। সে সময় রবিসশ্য মৌসুম ধরা হয়ে থাকে। অন্যান্য শাক সবজি পাশাপাশি বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে সরিষার,মসুর আবাদ করে থাকেন কৃষকেরা। এবছর একদিকে আবহাওয়া অনুকূল, চাষে কম খরচ এবং বাজার মূল্য ভালো থাকায় কৃষকেরা গত বছরের ন্যায় এবারও বেশিরভাগ জমিতে সরিষার, মসুর আবাদ করেছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে রাজশাহীতে চলতি মৌসুমে ২১ হাজার ২৫২ হেক্টর জমিতে সরিষা ও ২৩ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে মসুর (ডাল) চাষ হয়েছে।

কৃষকরা বিভিন্ন জাতের সরিষা উৎপাদন করে থাকে। এর মধ্যে টরি-৭, বারি-৯ এবং হাইব্রিড সরিষা ও মসুর অন্যতম। অনুকূল আবহাওয়া, চাষে কম খরচ এবং বাজার মূল্য ভালো থাকায় কয়েক বছর থেকে কৃষকরা সরিষা ও মসুর চাষের দিকে ঝুঁকছেন।

রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাঁচন্দর স্কুল পাড়া গ্রামের কৃষক রয়েল জানান, তিনি ৮ বিঘা অন্যের জমি বর্গা নিয়ে কয়েক বছর যাবত ধান চাষাবাদ করে আসছেন। তবে আগে কয়েক বছর মাহজনকে ধান পরিশোধ করার পরে তার ঘরে একছটাক ঘরে তুলতে পারেনি। ফলন কম ও ধানের দাম না থাকায় তার লোকসান গুণতে হয়েছিল।

কিন্তু গত বছর থেকে ধান চাষাবাদ করে ভাল লাভবান হচ্চে। খড়ের দামও ভাল। পাশাপাশি আমন উঠার পরে সে জমিতে চলতি মৌসুমে মসুর(ডাল) চাষাবাদ করেছেন। তার ৮ বিঘা জমিতে এবার মসুর ৪৮ মণ মসুর পেয়েছে। বর্তমানের প্রতিমণ(৪০)কেজি মসুরের বাজার মূল্য তিন হাজার টাকার উপরে। এতে করে তার কয়েক বছরের ধানের লোকসান কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে॥

গোদাগাড়ী উপজেলার পাকড়ি ইউপির মোত্তজাপুর গ্রামের কৃষক জুনায়েত আলী জানান, গতবছর তিনি ৩ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করে ভালো দামে তা বিক্রি করেছিলেন। চলতি বছরও দাম ভালো পাওয়া যাবে এই আশায় ৫ বিঘা জমিতে বারি-৭ জাতের সরিষা চাষ করেছিলেন। আবহাওয়া অনূকূলে থাকায় এবারো ভালো ফলন হয়েছে।

তিনি আরো জানান, ৫ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করতে বীজ, সার, চাষ, কৃষি শ্রমিক, সেচসহ সব মিলিয়ে ব্যয় হয়েছে ১১ হাজার ৫০০ টাকা। আর ৫ বিঘা সরিষা মাড়াই করে এবার ৩৩ মণ সরিষা ঘরে উঠেছে তার। বাজারে ভাল দাম থাকায় তার লাভের পাল্লা এবার ভারী থাকবে বলে জানান তিনি।

তানোর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সমশের আলী জানান, অনুকূল আবহাওয়া থাকায় চলতি বছর বরেন্দ্র অঞ্চলের জেলাগুলোতে সরিষার, মসুর, মটর ও আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। মাঠে মাঠে ক্ষেত থেকে এখন সরিষা,মসুর তুলতে ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। বাজারে ভাল দামেও আছে।

তিনি আরো জানান, সেচ খরচ কমে অধিক ফসল ও লাভ হয় এমন সব রবিসশ্য চাষাবাদে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে কৃষকদের। সে সঙ্গে এবার সরকারী ভাবে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সরিষা,মসুর,পিয়াজসহ অনেক বীজ,.সার প্রনোদনা হিসাবে বিতরণ করা হয়েছে।

এ কর্মকর্তা আরো জানান, সরিষায় চাষ লাভবান এবং উৎপাদিত সরিষায় স্থানীয়ভাবে ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটাতে সাহায্য করছে এবং মসুর (ডাল) আমদানী উপর নির্ভর ছিল,এখানে উৎপাদন শুরু হওয়াই সেটাই স্থানীয় ভাবে চাহিদা মিটাচ্ছে। সরিষার, মসুরের বাজার দর ভালো থাকলে কৃষকেরা অন্য ফসলের লোকসান কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে জানান এ কৃষি কর্মকর্তা।

  • 104
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে