বিএমডিএ কর্মকর্তা-কর্মচারীর গণবদলীতে বোরো আবাদের ক্ষতির আশংকা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৪, ২০২০; সময়: ১২:৫৮ অপরাহ্ণ |
বিএমডিএ কর্মকর্তা-কর্মচারীর গণবদলীতে বোরো আবাদের ক্ষতির আশংকা

নিজস্ব প্রতিবেদক : বরেন্দ্র অঞ্চলে শুরু হয়েছে বোরো মৌসুম। চাষিরা বোরোর জমি ও বীজতলা তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এসময় বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা- কর্মচারিদের গণবদলীর আদেশ সকলকে হতভম্ব করেছে। এর প্রতিক্রিয়া বোরো আবাদে পড়তে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। আবার কোভিড-১৯ এর মধ্যে এই বদলী আদেশে কর্মকর্তা- কর্মচারিদের মধ্যে এক ধরণের হতাশা বিরাজ করছে।

এতে একদিকে যেমন বোরো মৌসুমে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে, অন্যদিকে কর্মরত ডিপ্লোমা প্রকৌশলীগণের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে এবং পরিপত্র বাতিলের দাবীতে কৃষিমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছেন বিএমডিএ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনীয়ার্স এসোসিয়েশন।

স্মারকলিপি থেকে জানা যায়, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দেশের এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা দেশের খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এই ভুমিকা বাস্তবায়নে ওতপ্রোতভাবে জড়িত কর্তৃপক্ষে কর্মরত ডিপ্লোমা প্রকৌশলীগণকে দ্বিধাবিভক্ত করার লক্ষ্যে গত ৯ ডিসেম্বর কর্তৃপক্ষের ২য় শ্রেণীর কর্মকর্তাদের নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দপ্তর হতে আন্তঃ জোন ও আন্তঃ রিজিয়ন বদলীর পরিপত্র জারী করা হয়।

জারীকৃত পরিপত্রটি কর্তৃপক্ষের চাকুরী বিধিমালাসহ দেশের অন্যান্য সরকারী প্রতিষ্ঠানে প্রচলিত বিধির সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ন ও সাংঘর্ষিক হওয়ায় এবং সর্বোপরি ২য় শ্রেণির কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে অবমাননাকর হওয়ায় অত্র সার্ভিস এসোসিয়েশন হতে পরিপত্রটি বাতিল বা সংশোধনের অনুরোধ জানিয়ে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান বরাবের পত্র দেন বিএমডিএ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ।

এছাড়াও পরিপত্রটি বাতিল বা সংশোধনের পক্ষে কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের সাথে একাধিকবার টেলিফোনে এবং নির্বাহী পরিচালকের সাথে সাক্ষাতে অত্র সংগঠনের যৌক্তিক বক্তব্য ও অবস্থান উপস্থাপন করা হয়। পরিপত্রটি বাতিলের নিমিত্তে কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান অত্র সংগঠনকে আশ্বাস প্রদানসহ নির্বাহী পরিচালক মহোদয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেন। তবে বর্ণিত পরিপত্রটি এখন পর্যন্ত বাতিল বা সংশোধন করা হয়নি।

ইতিমধ্যে উক্ত পরিপত্রের আলোকে মাঠ পর্যায়ে দুইটি আন্ত: জোন বদলী আদেশ জারী করা হয়। বিষয়টি কর্তৃপক্ষে কর্মরত সকল পর্যায়ের ২য় শ্রেণীর কর্মকর্তাদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি করে। সংগঠনের সদস্য প্রকৌশলীদের মধ্যে সৃষ্ট ক্ষোভ ও অসন্তোষ নিরসনে এতদবিষয়ে পূনরায় অনুরোধ ও আলোচনার জন্য এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ নির্বাহী পরিচালকের সাক্ষাত প্রার্থনা করে পত্র দেন। তবে সাক্ষাত প্রার্থনার বিপরীতে নির্বাহী পরিচালক কোন ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি এবং তিনি সাক্ষাত করেননি।

আবারো মাঠ পর্যায়ে কর্মরত ২য় শ্রেণির কর্মকর্তাদের বদলী করার ক্ষমতা অর্পণ সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট পরিপত্রটি অবিলম্বে বাতিল বা সংশোধনের জন্য পত্র প্রদান করা হয়। যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবরে উপর্যুপরি আবেদন জানানো হলেও এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে ৭ ডিসেম্বর গভীর রাতে বিএমডিএ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশন ও বিএমডিএ বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা প্রকৌশলী পরিষদের কার্য নির্বাহী কমিটির একাধিক সদস্যসহ ১ম ও ২য় শ্রেণীর ৩৮ জন কর্মকর্তাকে ষ্ট্যান্ড রিলিজ করে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে হয়রানিমূলক দুইটি বদলী আদেশ জারী করা হয়। কর্তৃপক্ষের প্রচলিত বিধিমালার বিপরীতে জারীকৃত ২য় শ্রেণির কর্মকর্তাদের অবমাননাকর পরিপত্রটির সুরাহা না করে হয়রানিমূলক বদলী আদেশ জারী করেন।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সৃষ্ট অসন্তোষ ও ক্ষোভের কারণে আসন্ন সেচ মৌসুম ব্যাহত হওয়াসহ কর্তৃপক্ষের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। ফলে মুজিব বর্ষে দেয়া সরকারের বিশেষ কর্মসূচি মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হবে। এছাড়াও বর্তমানে বিশ^ব্যাপী কোভিড-১৯ প্রাদূর্ভাবের ২য় ঢেউ প্রকট আকার ধারণ করেছে। এমন অবস্থায় হয়রানীমূলক বদলীর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও তার পরিবারবর্গকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের বিষয় বিবেচনা না করেই এমন হয়রানিমূলক পরিপত্র জারি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ আছে, ইতোমধ্যে অত্র সংগঠনের বেশ কয়েকজন সদস্য প্রকৌশলী কোভিড-১৯ আক্রান্ত এবং তন্মধ্যে দুইজন সদস্য প্রকৌশলী অকালে মৃত্যুবরণ করলেও কর্তৃপক্ষ হতে চিকিৎসা সংক্রান্ত কোন প্রকার সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। এছাড়াও বিএমডিএ’র পরিচালক শ্যাম কিশোর রায় করোনা সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত অফিসে আসেননি। তিনি বাড়িতে ফাইলপত্র নিয়ে দেখভাল করছেন। অথচ তিনি নিম্নপদের কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের হয়রানির উদ্দেশ্যে এমন বদলীর আদেশ দিয়েছেন।

জানা গেছে, অবিলম্বে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত ২য় শ্রেণীর কর্মকর্তাদের বদলী করার ক্ষমতা অর্পণ সংশ্লিষ্ট পরিপত্রটি বাতিল বা সংশোধনসহ হয়রানিমূলক ভাবে জারীকৃত বদলী আদেশ বাতিল না করলে বিএমডিএ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশন ও ইন্সটিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনীয়ার্স জোরালো ও বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচিতে যাবে। এতে মাঠ পর্যায়ে বোরো চাষসহ সকল ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবে। আর এর সকল দায় পড়বে বিএমডিএ ওপর।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে বিএমডিএ পরিচালক শ্যাম কিশোর রায়ের ব্যক্তিগত মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। এছাড়াও বিএমডিএ’র চেয়ারম্যান ড. আকরাম হোসেন চৌধুরীর ব্যবহারকৃত মোবাইলও বন্ধ পাওয়া যায়।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে