বরেন্দ্র অঞ্চলে ধানের খড়েই উঠছে চাষের খরচ, ধানের দামেও রেকর্ড

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩০, ২০২০; সময়: ১:০৬ অপরাহ্ণ |
বরেন্দ্র অঞ্চলে ধানের খড়েই উঠছে চাষের খরচ, ধানের দামেও রেকর্ড

মুক্তার হোসেন, গোদাগাড়ী : চলতি বছর এবার আমনের আবাদের সময় বরেন্দ্র অঞ্চলে বৃষ্টি ছিল ভালো থাকায়। সেচ খুব একটা লাগেনি। তাই খরচ হয়েছে কম। এখন আবাদ করা ধানের খড় বিক্রি করেই চাষের খরচ প্রায় উঠে যাচ্ছে। বর্তমানে এক হাজার আঁটি খড় বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার টাকা দামে। নতুন ধানও বিক্রি হচ্ছে রেকর্ড দামে।

বিগত কয়েক বছরের মধ্যে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকরা এবার আমন ধানে সর্বোচ্চ লাভ করছেন। এরই মধ্যে বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রায় ৭০ ভাগ জমির আমন ধান কাটা শেষ হয়েছে। এখনও কোথাও কোথাও শীতের সোনামাখা রোদ গায়ে মেখে আমন কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত কৃষাণ-কৃষাণীরা।

তারা জানান, আমনের মৌসুমে বরেন্দ্র অঞ্চলে মূলত স্বর্ণা ও গুটি স্বর্ণা জাতের ধান চাষ হয়ে থাকে। প্রতি বিঘায় এবার ফলন হয়েছে ১৮ থেকে ২২ মণ। ২০ দিন আগে যখন প্রথম ধান উঠতে শুরু করে তখন এক মণ ধানের দাম ছিল সর্বনিম্ন ১ হাজার ২৫০ টাকা। বর্তমানে দাম কিছুটা কমে ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। তবে এটিও রেকর্ড দাম। আমন ধানের এমন দাম তারা গত কয়েকবছর ধরে পাননি। এবার ভাল দাম পেয়ে তারা খুশি।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মহিষালবাড়ি এলাকার ধানচাষি শরিফুল ইসলাম জানান, এবার আমন ধান চাষের সময় পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়েছে। তাই বেশিরভাগ জমিতেই আলাদা সেচ দেয়ার প্রয়োজন হয়নি। খুব উঁচু কিছু জমিতে সামান্য সেচ লেগেছে। সেচ না লাগার কারণে কমেছে উৎপাদন খরচ। যাদের নিজের জমি রয়েছে তাদের শুধু শ্রমিক, সার আর কীটনাশকের পাঁচ হাজার টাকা খরচেই এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করা সম্ভব হয়েছে। এই টাকা খড় বিক্রিতেই উঠে যাচ্ছে।

এদিকে খড়ের ভাল দাম পেয়ে ধান চাষিরা খুশি হলেও খামারীরা পড়েছেন বিপাকে। গো-খাদ্যের জন্য খড় কিনতে গিয়ে তাদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে।

চাষিরা জানিয়েছেন, বাণিজ্যিকভাবে গরু পালন বৃদ্ধি পাওয়ায় খড়ের চাহিদা বেড়েছে। বর্তমানে রাজশাহী অঞ্চলে এক হাজার আঁটি খড় বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার টাকায়। এক বিঘা জমিতে দেড় থেকে দুই হাজার আঁটি খড় হয়ে থাকে। খড়ের টাকায় চাষের খরচ প্রায় উঠে যাওয়ায় ধানের টাকা পুরোপুরি লাভ থাকছে। বর্তমান বাজারে এক বিঘা জমি থেকে কমপক্ষে ১৮ হাজার টাকার ধান বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে। এক বিঘা ধান চাষে গড়ে কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকা লাভ করছেন চাষিরা।

রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, করোনার প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও প্রান্তিক কৃষকদের সার্বিক সহায়তা করায় ফলন ও দাম ভালো পাচ্ছেন। চাষিরা এখন ধান তুলে আড়ৎদারদের কাছে বিক্রি করছেন। এসব ধান চাতালে প্রক্রিয়াজাত শেষে উৎপাদিত চাল আবার আড়ৎদারের কাছে বিক্রি করা হবে।

কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, রাজশাহীতে এবার প্রতি হেক্টর জমিতে আমন ধানের ফলন হয়েছে ৩ দশমিক ৪ টন। জেলায় এবার সাড়ে ৭৭ হাজার হেক্টর জমিতে আমনের চাষ হয়েছে। চাল উৎপাদনের সম্ভাবনা ২ লাখ ৫৬ হাজার মেট্রিক টন। লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে বলেই কৃষি বিভাগের আশা।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে