বরেন্দ্র অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে ভেষজ গুণসম্পন্ন বাসকের চাষাবাদ

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২০; সময়: ১:১৬ অপরাহ্ণ |
বরেন্দ্র অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে ভেষজ গুণসম্পন্ন বাসকের চাষাবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক : বরেন্দ্র অঞ্চলে এই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে ভেষজ উদ্ভিদ বাসকের চাষাবাদ শুরু হয়েছে।নওগাঁর মান্দা উপজেলার কালিগ্রামে জাহাঙ্গীর আলম শাহ নামের একজন ব্যক্তি তার কৃষি জমিতে বাসক চাষ শুরু করেছেন।ভেষজ গুণসম্পন্ন এই গাছের পাতা এসিআই, স্কয়ারসহ বিভিন্ন কোম্পানির কাছে চাহিদা রয়েছে।

জাহাঙ্গীর আলম শাহ রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের সহকারী শিক্ষক।করোনাকালীন পরিস্থিতিতে তিনি সপরিবারে তার পৈত্রিক বাড়ি কালিগ্রামে অবস্থান করছিলেন। তিনি জানান, লকডাউনের সময় যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিলেন, করোনা ভাইরাসের এই মহামারী পরিস্থিতি মোকাবেলায় কেউ একখণ্ড জমিও ফাঁকা রাখবেন না। তার এই ঘোষণার পরই তিনি সিদ্ধান্ত নেন তার জমিতে বাসক চারা গাছ রোপনের। জুলাই মাসে গাইবান্ধার রফিক নামের এক কৃষকের কাছ থেকে বাসকের চারা কিনে এনে লাগান তিনি।

জাহাঙ্গীর আলম জানান, তিনি তার সাড়ে সাত বিঘার জমিতে আম গাছের সাথে সাথী ফসল হিসেবে সাত হাজার বাসকের চারা গাছ লাগিয়েছেন।বাসকের প্রতিটি চারা গাছের দাম পড়েছে পাঁচ টাকা।বারি-৪, আম্রপালি ও খিরসাপাতসহ আমের গাছ রয়েছে ৪০০টি।বড় আমের বাগান কেটে আম গাছের চারা ও বাসকের চারা এক সাথে লাগানো হয়েছে।এক সাথে দুই ধরনের গাছ লাগানোতে কোনো সমস্যা হবে না বলে জানান তিনি।

বাসক গাছ লাগানোর বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম শাহ জানান, তিনি রাজশাহীতে থাকেন। গ্রামে মাঝেমধ্যে আসা যাওয়া করেন। যেহেতু বাসক গাছ গরু-ছাগলে খায়না, আবার পরিবেশবান্ধব, দেখভাল করতে সুবিধা তাই বাসক গাছ লাগানো হয়েছে।তবে উঁচু জমিতে বাসক গাছ লাগাতে হয়। কেননা জমিতে পানি জমে থাকলে বাসকের চারা মরে যায়। এইজন্য বরেন্দ্র অঞ্চলে বাসকের চাষাবাদ করা সহজ।

বাসকের বাণিজ্যিক মূল্যের বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম শাহ জানান, বাসক গাছের পাতা শুকিয়ে বিক্রি করা যায়। যারা ভেষজ গুণসম্পন্ন ওষুধ ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য তৈরি করেন তাদের কাছে বাসক গাছের বেশ চাহিদা।এসিআই, স্কয়ারসহ বিভিন্ন বড় কোম্পানিও বাসকের পাতা কিনে নেন।একটি গাছ থেকে বছরে তিনবার পাতা তোলা যায়।শুকানোর পর একটি গাছ থেকে এক কেজি পাতা পাওয়া যায়। এক কেজি শুকনো পাতার মূল্য ৪৫ থেকে ৫০ টাকা।একবার চারা গাছ লাগানো হলে বহুবছর পর্যন্ত সেই গাছ থেকে পাতা পাওয়া যায়।

কোনোরকম রাসায়নিক ছাড়াই সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছেন জাহাঙ্গীর আলম শাহ।তার একজন সহকারী তার আম বাগান ও ফসল দেখাশোনা করেন।

জাহাঙ্গীর শাহ বলেন, জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ করার ফলে কোন কোন পোকাকে দমন করা যায় সেটা দেখাও বাসক চাষের আরেক লক্ষ্য। যেহেতু আমি কৃষি বিষয়ক বইপত্র লেখি, কৃষি নিয়ে গবেষণা করি। বাণিজ্যিক সফলতার সাথে কৃষি বিষয়ক গবেষণাও আমার একটি উদ্দেশ্যে।জৈব পদ্ধতিতে পোকা দমন করার উদ্দেশ্যেও বাসক চাষ করা।

রাজশাহীর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকেও জানানো হয়েছে রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে এই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে বাসক চাষ করা হচ্ছে। তবে বাসাবাড়ির আঙিনায়, পতিত জমিতে ও পুকুর পাড়ে বিচ্ছিন্নভাবে অনেকে বাসক চাষ করেন।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শামসুল হক জানান, খুব কম খরচে বাসক চাষ করা যায় বলে বাসক চাষ লাভজনক। আবার পোকামাকড় হয়না বললেই চলে।সাথী ফসল হিসেবেও চাষাবাদ করা যায়।যেকেউ কম খরচে বাসক চাষ করে লাভবান হতে পারবেন।

সরকারি সংস্থা কৃষি বাতায়ন থেকে জানা যায়, আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বাসক পাতাকে নানা রোগ সারাতে ব্যবহার করা হয়। কাশি, কফ বা শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যায় বাসক পাতার ব্যবহার এর প্রচলন রয়েছে দেশে । বাসক এর বৈজ্ঞানিক নাম Adhatoda vasica। লোকালয়ের কাছেই আর্দ্র ও সমতলভূমিতে এটি বেশি জন্মে। বাসক অর্থ সুগন্ধকারক। গ্রামাঞ্চলে বসতবাড়ির আনাচে-কানাচে কিংবা ঝোপঝাড় এ বেড়ে ওঠে এই বাসক।

বাসকের পাতায় “ভাসিসিন” নামের ক্ষারীয় পদার্থ এবং তেল থাকে। শ্বাসনালীর লালাগ্রন্থিকে সক্রিয় করে বলে বাসক শ্লেষ্মানাশক হিসেবে প্রসিদ্ধ ।বাসক পাতার নির্যাস, রস বা সিরাপ শ্লেষ্মা তরল করে নির্গমে সুবিধা করে দেয় বলে সর্দি, কাশি এবং শ্বাসনালীর প্রদাহমূলক ব্যাধিতে বিশেষ উপকারী। বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি এ পাতা ব্যবহার করে তৈরি করছে কফ নিরাময়ের সিরাপ। এছাড়াও বিভিন্ন ভেষজ ওষুধ তৈরিতেও ব্যবহার হচ্ছে। তাই বেড়ে চলেছে এর চাহিদা।

  • 55
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে