নিয়ামতপুরে আমনের মাঠে মাঠে সোনালী ঝিলিক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩০, ২০২০; সময়: ১২:১৫ অপরাহ্ণ |
নিয়ামতপুরে আমনের মাঠে মাঠে সোনালী ঝিলিক

তোফাজ্জল হোসেন, নিয়ামতপুর : নওগাঁর নিয়ামতপুরে মাঠে মাঠে এখন হাওয়ায় দুলছে আমনের সোনালি শীষ। সবুজের মধ্যে সোনালি ধানের শীষে রঙ্গিন হয়ে উঠছে কৃষকের স্বপ্ন। মাঠজুড়ে ক্রমেই পেকে সোনালি বর্ণ ধারণ করছে আমন ধান। এরই মধ্যে আগাম জাতের কিছু কিছু ধান কাটা শুরু হয়েছে। আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে আমন কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছেন নিয়ামতপুর উপজেলার কৃষক।

প্রতি বছর হেমন্তের এই সময়ে নিয়ামতপুর উপজেলার কৃষকরা সোনালি ধান কাটা শুরু করেন। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। আগাম জাতের ধান কাটা শুরু হয়েছে এরই মধ্যে। অগ্রহায়ণে পুরোদমে আমন কাটা-মাড়াই শুরু করবেন নিয়ামতপুরের কৃষকরা। চলতি মৌসুমে সময়মতো পানি ও অনুকূল আবহাওয়া থাকায় অন্য সব বছরের চেয়ে আমন চাষাবাদ ভাল হয়েছে। আশানারূপ ফলনের চেয়েও বেশী ফলনের সম্ভাবনাও রয়েছে। কৃষকরা এখন সোনালি ধানের হাওয়ায় দোলানো শীষের মাঝেই বুনছে রঙ্গিন স্বপ্ন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় আমনের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ২৯ হাজার ৬শ ৬৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ২৯ হাজার ৭শ’ ৮৫ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে।

আবাদকৃত জাতের মধ্যে শ্বর্ণা ১৭ হাজার ৯শ ৪৫ হেক্টর, ব্রি- ৩৪ ২ হাজার ৫শ ১৫ হেক্টর, ব্রি-৪৯- ৪শ ৮০ হেক্টর, ব্রি-৫১- ৪ হাজার ২শ ২০ হেক্টর, ব্রি- ৫২- ২৫ হেক্টর, ব্রি- ৭১- ২ হেক্টর, ব্রি- ৭৫- ৩৩ হেক্টর, ব্রি-৮০- ২ হেক্টর, ব্রি ৮৭- ৪২ হেক্টর, বিআর ২২-১২ হেক্টর, বিনা-৭- ১২ হেক্টর, বিনা-১৭- ১৩ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের বিন্নাফুলী ৪ হাজার ৪শত ৯০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। এবারে উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৭ হাজার ৮শ ২০ মেঃটন। গড় ফলণ ৩.২৩ মেঃটন।

নিয়ামতপুর উপজেলার মাঠগুলোতে যতদূর চোখ যায় চারদিকে এখন সবুজের বুকে সোনালি ফসলের সমারোহ। নিয়ামতপুর উপজেলার হাজিনগর ইউপির উপরকুড়া শালবাড়ী গ্রামের কৃষক মিরাজুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে তিনি ১০ বিঘাতে আমন চাষাবাদ করেছেন। অন্যসব কৃষকের চেয়ে একটু অগ্রিম আমন রোপণ করেছিলেন তিনি। আগাম প্রস্তুতি এবং কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পোকার তেমন কোন আক্রমন হয়নি। তাই এবার খুব ভালো ফলনের আশা করছি। উপজেলার পাড়ইল ইউপির সেফায়েতপুর গ্রামের রবিউল ইসলামও ৩ বিঘা জমিতে আগাম জাতের আমন ধান চাষ করেছিলেন। ইতি মধ্যে কাটাও হয়ে গেছে। সে মোট ১২ বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছেন। উভয় কৃষকের বক্তব্য এবার ধানের গ্রোথ খুব ভালো। ভাবিচা ইউনিয়নের সিদাইন গ্রামের সিরাজুল ইসলাম জানান, এবার বিলের তলা পর্যন্ত আমন চাষ হয়েছে। সময় মত বৃষ্টি হওয়ায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর অনেক ভালো আমন ধান চাষ হয়েছে। এবার স্বর্ণ জাতের ধান বিঘা প্রতি ২২/২৫ মন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সময় মত বৃষ্টির কারণে কোন প্রকার বিলাই ও পোকা নেই। এ কারণে কৃষকের মাঝে বেশ আনন্দের বহিঃ প্রকাশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

গত ২৮ অক্টোবর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি বলেছেন এবারে সরকার ২৬ টাকা কেজি দরে আমন ধান এবং ৩৭ টাকা কেজি দরে চাল ক্রয় করবে। সম্ভাব্য আগামী ৭ নভেম্বর থেকে ধান এবং আগামী ১৫ নভেম্বর থেকে চাল ক্রয় করা শুরু হবে।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আমিনুল কবির বলেন, ধান এবং চাল ক্রয়ের সুনির্দিষ্ট কোন তারিখ সরকার নির্ধারণ করেনি। আমরা কোন চিঠি পাই নাই। তবে মন্ত্রী মহোদয় বলেছেন যে সম্ভাব্য আগামী ৭ নভেম্বর থেকে ধান এবং ১৫ নভেম্বর থেকে চার ক্রয় শুরু হতে পারে। সরকার দর নির্ধারণ করেছে। ধান ২৬ টাকা কেজি এবং চাল ৩৭ টাকা কেজি দরে কিনবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ আমির আবদুল্লাহ মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান জানান, এ বছর ২৯৭৮৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ হয়েছে যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। আমন ধানকে রোগ ও পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ সার্বক্ষণিক মাঠে থেকে কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করছেন। প্রতিদিন সন্ধ্যায় পোকার উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য বিভিন্ন মাঠে আলোক ফাদ স্থাপন করা হচ্ছে। এছাড়াও কৃষকগণের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দলীয় আলোচনা, উঠান বৈঠক, লিফলেট বিতরণ প্রভৃতি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আগামী এক সপ্তাহ পর থেকে পুরো দমে ধান কাটা শুরু হবে। এ বছর আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৭৮২০ টন (চাউলে), কিন্তু মাঠের অবস্থা দেখে আশা করা যায় ফলন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

নিয়ামতপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা সফিউল ইসলাম জানান, এবারে উপজেলার আমন চাষে কোথাও কোন সমস্যা হয়নি। সময় মত বৃষ্টি হওয়ায় কোন প্রকার পোকার আক্রমন হয়নি। আমরা আশা করছি এবারে বাম্পার ফলন হবে। কৃষকরা সুন্দরভাবে ধান ঘরে তুলতে পারবে।

  • 180
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে