পাবনায় পাটের বাম্পার আবাদ, দাম নিয়ে সংশয়ে কৃষক

প্রকাশিত: জুলাই ২৭, ২০২০; সময়: ৪:৪৩ অপরাহ্ণ |
খবর > কৃষি
পাবনায় পাটের বাম্পার আবাদ, দাম নিয়ে সংশয়ে কৃষক

রাজিউর রহমান রুমী, পাবনা : বিগত কয়েক বছর পাটের ফলন ভালো হইছিল, দামও ভালো ছিলো। তাই এবারও লাভের মুখ দ্যাখবের জন্যি আবাদের পরিমাণ বাড়াইছি। ফলনও মাশ্ল্লাহ্ ভালো হইছে। জানালেন মশিউল সরকার নামে এক পাট চাষি। এ বছর পাবনায় পাটের বাম্পার আবাদ হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) নিয়ন্ত্রিত পাটকলগুলোর উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় মৌসুমের শুরুতেই দাম নিয়ে সংশয়ে আছেন চাষীরা। অন্যদিকে বিগত কয়েক বছরে বিজেএমসি এর নিকট পাট সরবরাহ করে বকেয়ে কয়েক কোটি টাকা না পেয়ে ব্যবসা বন্ধ করে মানবেতর জীবন যাপন করছে পাবনার বহু পাট ব্যবসায়ী।

পাবনার কৃষকরা পাট কাটতে শুরু করেছে। তবে সরকারের পাটকলগুলো বন্ধ হওয়ায় এবার মৌসুমের শুরুতেই দাম নিয়ে সংশয়ে আছেন তারা। তাই পাট বিক্রি নিয়ে বেকায়দায় পড়তে হতে পারে এমন দুশ্চিতা রয়েছে কৃষকদের মাঝে। অপর দিকে কৃষি বিভাগের দাবী পাবনায় এবার লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি বছর পাবনায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪৪ হাজার ২’শ৫৪ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে তোষা জাত ৪৩ হাজার’৪শ, দেশী ১৭৪ হেক্টর এবং মেছতা ৬৮০ হেক্টর। আর আবাদ হয়েছে ৪৪ হাজার ২’৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের মতে লক্ষ্য মাত্রার শতভাগ আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে তোষা জাত ৪৩ হাজার ৭১০, দেশী জাত ২২৫ হেক্টর ও মেছতা জাত ৩১০ হেক্টর।

পাট চাষীদের সাথে কথা বলে জানাযায়, গেলো কয়েক বছর পাটের ফলন ও দাম ভালো ছিলো। তাই লাভের মুখ দেখতে এবছর অনেকেই আবাদের পরিমাণ বাড়িয়েছিল। পাট কাটার সময় আশানুরূপ বৃষ্টি হওয়ায় পাট জাগ দেওয়ায় কোন সমস্যা হচ্ছে না। তবে পাট আবাদের শুরুতে বৃষ্টি না হলে ফলন আরো ভাল হতো।

চাটমোহর উপজেলার মধ্যশালিখা গ্রামের পাট চাষী মোস্তফা বলেন, তিনি এক বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছে। সাধারনত এক বিঘায় ১২ থেকে ১৪ মণ করে পাটের ফলন হয়ে থাকে। এক বিঘা পাট আবাদে শুরু থেকে পাট জাগ দেওয়া ছাড়ানো পর্যন্ত যে খরচ হবে পাট বিক্রি করে সেই খরচ উঠবে কি না তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে। তারপরে আবার সরকারী পাট কল বন্ধ ঘোষনা করেছে। যদি বেসরকারি পাটকলগুলো সিন্ডিটেক করে পাটের দাম কমায়, তাহলে আরো বেকায়দায় পড়তে হবে তাদের।

ফরিদপুর উপজেলার পাঁচপুঙ্গলী গ্রামের কালু সরকার বলেন, তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছি। ফলন মোটামুটি হয়েছে। এাবার পাট বাজারে ওঠার আগেই যে অবস্থা তাতে মনে হচ্ছে দাম পাবো। আগামীতে আর পাট আবাদ করবো না বলে স্বিধান্ত নিয়েছি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আজাহার আলী জানান, চৈত্র মাসের শুরুতে পাটের বীজ রোপন করতে হয়। যারা সঠিক সময়ে পাট চাষ শুরু করেছিল তাদের পাট পরিপক্ক হয়েছে ফলে তাদের আবাদও ভাল হয়েছে। কিন্তু যারা সঠিক সময়ে আবাদ শুরু করতে পারে নাই পাট কাটার সময় এসে গেলেও তাদের পাট পরিপক্ক না হওয়ায় তাদের ফল কিছুটা খারাপ হয়েছে। দামের বিষয়ে তিনি বলেন, দাম নিয়ে কৃষকের দুঃচিন্তার কোন কারণ নাই কৃষকেরা ন্যায মূল্য পাবে।

এদিকে পাবনার বিভিন্ন উপজেলার প্রায় ৩৫ জন ক্ষুদ্র পাট ব্যবসায়ী বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) আওতাধীন বিভিন্ন পাট কলের কাছে ৩০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। যে টাকা না পেয়ে বহু ব্যবসায়ী তাদের পুঁজি হাড়িয়ে নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছে।

পাবনার চাটমোহর উপজেলার রেল বাজার এলাকার পাট ব্যবসায়ী আব্দুল কুদ্দুস সরকার জানান, পাট এখনো বাজারে উঠতে শুরু করেনি। পাট উঠলে বোঝা যাবে দাম কেমন হবে। কৃষকদের কাছ থেকে পাট কিনে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) আওতাধীন সিরাজগঞ্জস্থ জাতীয় জুটমিলের চাটমোহরস্থ ক্রয় কেদ্রে গেল ২০১৭-১৮ অর্থ বছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থ বছর পর্যন্ত তিনি পাট সরবরাহ করেছেন। তবে কোন টাকা পায়নি। জাতীয় জুটমিলের কাছে তিনি প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা পাওনা রয়েছেন। এ অবস্থায় পাট কল বন্ধ ঘোষনা করায় তিনি পাওনা টাকা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন যাপন করছেন। টাকা না পেলে এ বছর কৃষকদের কাছ থেকে পাট কিনতে পারবে না।

সাঁথিয়া উপজেলার অপর পাট ব্যবসায়ী শ্রী কার্তিক চন্দ্র সাহা বলেন, তারও একই অবস্থা তিনি ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ডেমরা লতিফ বাওয়ানী জুট মিলস লিমিটেড ও ইউএমসি জুট মিলে পাট সরবরাহ করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন টাকা পাইনী।

এই দুইটি জুট মিলের কাছে তার পাওনা রয়েছে দুই কোটি ১০ লাখ টাকা। এই বিপুল অংকের টাকা না পেয়ে বন্ধ হয়ে গেছে তার ব্যবসা। বর্তমানে তিনি পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

  • 27
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে