অতি বৃষ্টিতে দুশ্চিন্তায় বরেন্দ্রের কৃষক

প্রকাশিত: জুলাই ২৫, ২০২০; সময়: ৯:৫৮ অপরাহ্ণ |
অতি বৃষ্টিতে দুশ্চিন্তায় বরেন্দ্রের কৃষক

আসাদুজ্জামান মিঠু : সবে মাত্র আমন রোপন শেষ হয়েছে বরেন্দ্র অঞ্চলে। আমন রোপনের ১৫ থেকে ৩০ দিন না পেরোতেই ক্ষেতে পচন দেখা দিয়েছে। শুরু হয়েছে পোকার আক্রমণ।

আমনে প্রথম সার প্রয়োগ না করতেই ক্ষেতের রোপনকৃত ধান কেটে সাবার করে দিচ্ছে মাজড়া পোকা। এবার শুরুতেই আমনের গোড়াই পচন দেখা দিয়েছে। কোথাও কোথাও অতিরিক্ত বৃষ্টির পানিতে গলে গেছে আমনের রোপা। আমনের শুরুতেই এমন পচন ও পোকার আক্রমণে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকেরা।

অগ্রিম পোকার লাগার কারণ হিসাবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে অতিরিক্ত বৃষ্টিকে দায়ী করেছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা।

কৃষি কর্মকর্তরা বলছেন, গত এক মাসের বেশি সময় যাবত বৃষ্টি ঝরছে,তাপমাত্রা নেই। তাই নিচু এলাকার ক্ষেতেগুলোতে রোগবালাই অন্যসব বছর গুলোর চেয়ে চলতি মৌসুমে বেশি হচ্ছে। কয়েক দিন তাপমাত্র পেলে সেরে যাবে ক্ষেতের রোপা।

আর কৃষকেরা বলছেন, চলতি বছর আমনের শুরুতেই মাজরাসহ নানা ব্যাধি যে ভাবে দেখা দিয়েছেন যা গত ২০ বছরেও তারা দেখেনি। বাজারে অনেক রকম কীটনাশক প্রয়োগ করে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছেনা। তাই শেষ পর্যন্ত এবছর পোকা আক্রমণে কষ্টের ধান ঘরে তুলতে পারবেন কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে কৃষকেরা।

তবে সব চেয়ে রাজশাহীর তানোর ও গোদাগাড়ী উপজেলায় আমন ক্ষেত বেশি ক্ষতিগস্থ হয়েছে। এ দুই উপজেলায় উচুঁ মাত্রার ক্ষেত কিছুটা রক্ষা পেলেও নিচু (কান্দর-ডাঙ্গা) ক্ষেতের আমন ধান গুলো বেশি ক্ষতিগস্থ হয়েছে। অতিরিক্ত বৃষ্টির পানির কারণে অনেক স্থানে গোড়ায় পচন ধরে গলে গেছে রোপা। কোথাও আবার রোপায় দেখা দিয়ে নানান রোগ- ব্যাধি।

গত বছরের আমন ধানের মাঝা মাঝি সময়ে এসে পাতামরা রোগ ও কারেন্ট পোকার আক্রমণের কারণে ধানে ফলন কম হওয়াই লোকসান গুনতে হয়েছিল বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকদের। সেই লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়েই চলতি মৌসুমে আবারও আমন চাষে মাঠে নেমে পড়েছে এই অঞ্চলের কৃষকেরা।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় আমনের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ৭৩ হাজার ৩৩৫ হেক্টর জমিতে।

এছাড়াও রাজশাহী অঞ্চলের,রাজশাহী, নঁওগা, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় আমন চাষাবাদ হবে আরো ৩ লক্ষ্য ৫০ হাজার হেক্টরের উপরে।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা পাকড়ি ইউপির মতুজাপুর গ্রামের কৃষক জুনায়েত আলী জানান, চলতি মৌসুমে ১২ বিঘা জমিতে একান্ন জাতের ধান চাষাবাদ করেছেন। এর মধ্যে প্রায় তিন বিঘা জমির ধান পচন ধরে গলে গেছে। পুনোরাই ধান রোপন করতে হলে আবারও নতুন করে কৃষিশ্রমিক খরচ হবে।
শুধু তার আমন ক্ষেত একাই নয়, এ গ্রামের আরো অর্ধশত কৃষকের ক্ষেতে গোড়া পচা ও মাজড়া পোকার আক্রমণ দেয়া দিয়েছে। বিভিন্ন রকম কীটনাশক ব্যবহার করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না । এ অবস্থায় তারা আমন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে।

রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাঁচন্দর গ্রামের কৃষক আলাউদ্দিন জানান, গত বছর আমন চাষ পাতামরা রোগ ও কারেন্ট পোকার আক্রমণে ধানের ফলন অনেক কম হওয়াই লোকসান গুনতে হয়েছিল।
তবুও চলতি মৌসুমে গত বছরের লোকসান মাথায় নিয়ে ৮ বিঘা জমিতে আমন চাষাবাদ করেছেন তিনি। তার পুরো ৮ বিঘা জমির ধানের রোপা পানিতে পচে গলে গেছে। পুনোরাই আবার নতুন রোপা গাহা লাগবে।

শনিবার সরেজমিন বরেন্দ্র অঞ্চল বলে পরিচিত রাজশাহীর গোদাগাড়ী, তানোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলায় কিছু কিছু এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় কৃষক এবার একান্ন ও সুমন স্বর্না জাতের ধান চাষাবাদ করেছেন। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে রোপা গলে গিয়ে বেশি ক্ষতিগস্থ হয়েছে বলে কৃষকেরা জানিয়েছেন।

তানোর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সমসের আলী জানান, চলতি বছর আবহাওয়ার বিরূপ আচরণ ও এলাকায় স্বর্না জাতের ধান বেশি আবাদ হওয়াই মাজরা পোকাসহ নানা ব্যাধি প্রভাব বাড়ছে। কয়েক দিনটানা রোদ পেলে সেরে যাবে রোপা। এখনও অনেক সময় আছে ঠিক মত কীটনাশক প্রয়োগ করলেই ধান সেরে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।

গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে বন্যা হয়না। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে এবার নিচু এলাকার আমন ক্ষেতগুলোতে ক্ষতি হয়েছে। তবে পোকা আক্রমন কম আছে। তবু ক্ষতিগস্থ কৃষকদের তালিকা করে প্রনোদনা দেয়া হবে।

তিনি আরো জানান, আমনে পোকা দমনে কৃষকদে অগ্রিম সচেতন করতে নানা মুখি পরামর্শ দিয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের মাঝে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। লিফলেট বিতারণ করা হচ্ছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে