বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষক

প্রকাশিত: জুলাই ১৬, ২০২০; সময়: ১:১১ অপরাহ্ণ |
খবর > কৃষি
বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষক

আমিরুল ইসলাম আমির : বিষয়টি নিয়ে লিখবার যোগ্যতা অর্জন করেছি কিনা জানি না। তাছাড়া এ প্রসঙ্গে মতামত দেবার জন্য অনেক যোগ্য কৃষিবিদ ও কৃষি অর্থনীতিবিদ রয়েছেন। নিয়মিত তারা লিখে চলেছেন এবং দিক নির্দেশ করে চলেছেন। একটি অতৃপ্তির বোধ থেকেই আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।

আমার কেন যেন মনে হয় বাংলাদেশে কৃষকরাই সবচেয়ে অবহেলিত এবং অসংগঠিত। তাই তাদের ক্ষতি হলে তারা হতাশায় কাঁদে, নিজের উপরই রাগ ঝাড়ে। অবরোধ বা হরতাল করার চিন্তা তারা মাথায়ও আনেন না। অথচ কৃষি এখনো আমাদের উন্নয়নের চালিকা শক্তি এবং কর্মসংস্থানের প্রধান ক্ষেত্র।

বলতে দ্বিধা নেই, কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণে অভূতপূর্ব অর্জনে কৃষির উৎপাদন বেড়েছে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় ব্যাপক ও ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বর্তমান সরকার কৃষি ও কৃষকবান্ধব সরকার। সমস্ত সাফল্য তাই সরকারকে দিতেই হবে। পাশাপাশি অগণিত কৃষিবিদ ও কৃষি সংশ্লিষ্ট কর্মীর শ্রম ও ঘামকে স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখতে হবে।

আর সবচেয়ে গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে কৃষকের আন্তরিকতা ও একাগ্রতা। নিয়মিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়েও পেশাকে তারা আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। আমি তাদের সালাম জানাই। তারাই আমাদের প্রেরণা।

আমরা কৃষি ক্ষেত্রে দুর্যোগ মোকাবেলায় অনেক সক্ষম হয়েছি। কিন্তু কৃষকের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তিতে কার্যকর কিছু করতে পারিনি। কেবল ধান ক্রয়ের সরকারি উদ্যোগ ছাড়া (যার বেশিরভাগ সুবিধা মিল মালিক ও মধ্যস্বত্ব ভোগীরাই পেয়ে থাকে) কৃষির অন্যান্য উৎপাদনে তেমন কার্যকর উদ্যোগ নেই। বিশেষ করে পচনশীল দ্রব্যের ক্ষেত্রে এ কথা শতভাগ সত্য।

আমরা তবে কী করতে পারি সংকট উত্তরণে?

সরকারিভাবে ধান ক্রয়-বিক্রয়ে মধ্যস্বত্ব ভোগীকে নির্মূল করতে আইসিটি ভিত্তিক ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। আমার মনে হয় সরকার চাইলে এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে পারে।

বিভিন্ন ফসলের বাম্পার ফলনের আগাম ধারণা নিয়ে মজুদ ও বাজার ব্যবস্থার (আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক) কথা চিন্তা করতে হবে। এগ্রোইকোলোজিকাল জোন বিবেচনা করে ফসল ও তার আওতাধীন জমির প্রাক্কলন করে কৃষকদের সেই মত উৎসাহ ও প্রণোদনা দিতে হবে।

কৃষিকে এমন অবস্থায় আনতে হবে যেন এক ক্ষেত্রে সংকট ও অন্য ক্ষেত্রে উদ্বৃত্ত না থাকে। এ বিষয়ে আমরা একটি গবেষণা করেছিলাম। ফার্মগেট প্রাইস সর্বোচ্চ করা এবং উৎপাদন খরচ সর্বনিম্ন করা এ দুটি উপায় নিয়ে সে গবেষণা ঢাকায় অনুষ্ঠিত একটি জাতীয় সম্মেলনে উপস্থাপিত হয়েছিল।

বলা বাহুল্য, এ ধরণের কাজে উপাত্তের সংকট প্রবল এবং কাজটি নিয়মিত ভাবেই করতে হয়। সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এ রকম উদ্যোগ নিতে পারে। আমরা ইলেকট্রনিকস ও পোশাকের অধিক মূল্য নিয়ে চিন্তিত হই না।

অথচ বিপরীতে যত সস্তায় কৃষি পণ্য ক্রয় করা যায় সে প্রচেষ্টা নেই। উত্তরবঙ্গ থেকে ফেরার পথে কম দামি সবজি ও ফল কিনে গাড়িতে ভরি। খুচরা কৃষিপণ্যের বাজারে যদি সর্বোচ্চ মূল্য তদারকির ব্যবস্থা থাকে, কৃষকের উৎপাদিত পণ্য বিক্রয়েরও সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারণ করা জরুরি।

আমার সৌভাগ্য হয়েছিলো জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এর পক্ষে ‘এসডিজি ইন্ডিকেটর ২.৪.১: সাসটেনেবল এগ্রিকালচার’ এর মেথোডলজি উন্নয়নে। রোমে উপস্থাপিত আমার প্রস্তাবে সায় দিয়েই নয়টি সাব-ইন্ডিকেটর থেকে বেড়ে বর্তমানে এগারোটি সাব-ইন্ডিকেটর হয়েছে। আমি গর্বিত যে পৃথিবীর সব দেশ ২০৩০ সাল পর্যন্ত ইন্ডিকেটরটি ব্যবহার করবে। উক্ত ইন্ডিকেটরে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশ তিনটি বিষয়কে সমন্বিত করা হয়েছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে গ্লোবাল মনিটরিং এ যদি তিনটি বিষয়কে বিবেচনায় রাখা হয় কৃষি উন্নয়ন পরিকল্পনায় তাদের কোনোটা বাদ থাকবে কেন?

মূলত এ দিকটিতে নজর দিয়ে উপযুক্ত পরিকল্পনা নিলেই কৃষি ও কৃষক উভয়ের উন্নয়ন হবে। কৃষিতে চাল, পেয়াজ, কাঁচামরিচ, ভোজ্যতেল ইত্যাদি কতিপয় শস্যকে রাজনৈতিক পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। কেননা এদের মূল্য বৃদ্ধি হলে ভোক্তা (মূলত ভোটার) সংক্ষুব্ধ হয়। তাই সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা চালায় মূল্য নিয়ন্ত্রণে।

কৃষক রাগে অভিমানে রাস্তায় সবজি ফেলে দিলে ঠিক সম পরিমান উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না। এ পরিস্থিতিতে ভোক্তা সচেনতার মাত্রাগত পরিবর্তন জরুরী। ন্যায্য মূল্যে কৃষিপণ্য ক্রয়ের প্রবণতা তৈ করতে হবে। তাছাড়া ভর্তুকি নির্ভর কৃষিকে বাজার নির্ভর ও ব্যবসাবান্ধব কৃষিতে রূপান্তর করা জরুরি। এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের কৃষককে দুর্ভাগ্যের দুষ্টচক্র থেকে স্থায়ী ভাবে বের করে আনতে হবে।

সূত্র : দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে