ড্যান ড্যান, বাঁ বাঁ, যা যা, হুট হাট আর শোনা যায় না

প্রকাশিত: জুলাই ৪, ২০২০; সময়: ১:৩৩ অপরাহ্ণ |
ড্যান ড্যান, বাঁ বাঁ, যা যা, হুট হাট আর শোনা যায় না

মাসুদ রানা, পত্নীতলা : ড্যান ড্যান, বাঁ বাঁ, যা যা, হুট হাট আরে যা, বায়ে ঘোর ডানে যা, কৃষক আর গরুর সাথে কথা বলার এই শব্দ গুলো আর শোনা যায় না। এই বর্ষা মৌসুমে ভোরবেলা কৃষক লাঙ্গল জোয়াল মই কাঁধে ও হালের বলদ নিয়ে মাঠে ছুটতেন রিমঝিম বৃষ্টির সাধে মাথায় মাস্তুল বা গামছার পাগড়ী বেধে মনের সুখে ভাওইয়া বা ভাটিয়ালী বা পল্লীগিতী গাইতেন আর জমিতে লাঙগল চাষ দিতেন আর কখনো কখনো গরুর সাথে কথা বলতেন ডান বাঁ করে।

প্রথম যেদিন জমিতে আমণ চারা রোপণ করতেন সেই দিনটিকে বলা হতো ভিউ শুভক্ষন, যে শ্রমিক প্রথম চারা রোপণ করতো তাকে নতুন কাপড় দেওয়া হতো, সেদিন কৃষকের বাড়ী তে ভাল রান্না হতো হাসের মাংশ, খির পায়েশ ডাল কচুশাক, পাট শাক, ইত্যাদি প্রতিবেশী আত্বীয় স্বজনদের দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানো হতো। লাল শাড়ি পড়া কৃষানির মুখেও থাকতো হাসির ঝিলিক। আধুনিকতার ছোঁয়ায় কালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে সেইসব নিয়ম নিতী বা রিতি। বর্তমান প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা লাঙ্গল জোয়ল মই চিনেনা। এসব দেখতে যেতে হবে কৃষি জাদুঘরে।

গ্রাম বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য গরু দিয়ে জমি চাষ দেওয়া আর চোখে পড়ে না, কাঁধে লাঙ্গল-জোয়াল, হাতে জোড়া গরুর দড়ি-এই ছিল একসময় গ্রামবাংলার চিত্র। বর্তমানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও নতুন নতুন যন্ত্র আবিষ্কারের ফলে কৃষকদের জীবনেও এসেছে নানা পরিবর্তন। বদলে গেছে তাদের জীবন-যাত্রার মান। আর এই পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে পত্নীতলা উপজেলায়।

এক সময় পত্নীতলা উপজেলায় কৃষকেরা গবাদিপশু পালন করতেন হাল চাষের জন্য। আবার কিছু মানুষ নিজের জমিজমা না থাকলেও পেশা হিসেবে গরু দিয়ে হালচাষ করতেন। বিঘাপ্রতি চুক্তি করে অন্যের জমি চাষাবাদ করে নিজের পরিবারের ভরণ-পোষণ করতেন তারা। কিন্তু বর্তমানে লাঙ্গলের হাল চাষ আর চোখে পড়ে না।

উপজেলার নাদৌড় গ্রামের কৃষক মহাতাব আলী বলেন, গরু দিয়ে জমি চাষ করাই আমার পেশা ছিল। তবে এখন আর গরুর হাল দিয়ে জমি চাষাবাদ করেন না। ছোট বেলায় বাবার সাথে হাল চাষের কাজ করতাম। বাড়িতে হাল চাষের বলদ থাকত ২ জোড়া।

তিনি বলেন, গরু দিয়ে হাল চাষের অনেক উপকারিতা ছিল। লাঙ্গলের ফলা মাটির অনেক গভীরে যায় তাই জমির মাটি ভালো আলগা ও নরম হয়, ধান চাষের জন্য কাদাও অনেক ভালো হয়। গরু দিয়ে হাল চাষ করলে জমিতে ঘাসও কম হয়। আর ফলনও ভালো হতো। লাঙ্গল দিয়ে প্রতিদিন জমি চাষ করা সম্ভব হতোএক দেড় বিঘা। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে জমি চাষ করার পদ্ধতি এখন বদলে গেছে। নতুন নতুন মেশিনের সাহায্যে কৃষকরা কম সময়ে ও কম খরচে জমি চাষাবাদ করছেন। তাই কালের বিবর্তনে এখন হারিয়ে যেতে বসেছে গরু দিয়ে সেই হাল চাষ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলারসহ আধুনিক সব যন্ত্রপাতি দিয়ে চলছে জমি চাষাবাদের কাজ। এতে আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য লাঙ্গল দিয়ে হালচাষ প্রায় বিলুপ্তির পথে। কৃষিতে দেখা যাচ্ছে ব্যাপক পরিবর্তন।

পত্নীতলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলায় ১ টি পৌরসভা ও ১১ টি ইউনিয়নে আমণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ হাজার ১ শত ৬০ হেক্টর।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ প্রকাশ চন্দ্র সরকার জানান, কৃষি যান্ত্রিক উন্নয়ন হয়েছে, কৃষিতে এসেছে আমূল পরিবর্তন। গরু লঙ্গল দিয়ে ১ বিঘা জমি চাষ দিতে সারা দিন সময় লাগত আর এখন ১ বিঘা জমি চাষ করতে ১ ঘন্টা সময় লাগে বা তারও কম সময় লাগে। সময় কম লাগে, খরচ কম হয়, এজন্য কৃষকরা লাঙ্গল দিয়ে হাল চাষের পরিবর্তে ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষ করছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে