সৌদির সাম্মাম চাষ হচ্ছে নওগাঁয়

প্রকাশিত: জুন ২৫, ২০২০; সময়: ৯:১৭ অপরাহ্ণ |
সৌদির সাম্মাম চাষ হচ্ছে নওগাঁয়

নিজস্ব প্রতিবেদক : সাম্মাম মূলত মরুভ’মির দেশ সৌদি আবর দেশেই চাষ হয়। মরুভ’মির বালি এই ফল চাষের জন্য প্রসিদ্ধ। কিন্তু এই প্রথম আমাদের দেশের মাটিতে চাষ হচ্ছে এই মরুর ফল সাম্মাম। দেখতে অনেকটা তরমুজের মতো। বিদেশী এই ফল দেশের মাটিতে উৎপাদন করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন নওগাঁর আত্রাই উপজেলার মিরাপুর গ্রামের সৌদি ফেরত সফল কৃষক রেজাউল ইসলাম। কৃষি বিভাগ বলছে বাংলাদেশে এই ফলের চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।

সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে উৎপাদিত ফলটি চাষাবাদ এখন হচ্ছে নওগাঁর আত্রাই উপজেলার মিরাপুর এলাকায়। সৌদি থেকে বীজ সংগ্রহ করে দেড় বিঘা পতিত জমিতে দুই জাতের সাম্মাম চাষ করে অভাবনীয় সফলতা পেয়েছেন তিনি। লাভও করেছেন লক্ষাধিক টাকা। অপরদিকে নতুন ফল হিসেবে বাজারে চাহিদাও রয়েছে অনেক। এক জাতের সাম্মামের বাহিরের অংশ সবুজ আর ভিতরে লাল এবং আরেক জাতের সাম্মামের বাহিরের অংশ হলুদ আর ভিতরের অংশ লাল। তবে দুটি ফলই খেতে মিষ্টি, সু-স্বাদু ও সুগন্ধযুক্ত।

রেজাউল ইসলামের রহস্য ঘেরা এই নতুন জাতের রসালো ফল উৎপাদনের খবরে প্রতিদিন তার ক্ষেত দেখতে আসছেন আশপাশের কৃষকরা। কেউ কেউ আগামীতে নতুন জাতের এই রসালো ফল উৎপাদনের জন্য পরামর্শও নিচ্ছেন রেজাউল ইসলামের কাছ থেকে।

বীজ বোপনের দেড় মাসের মধ্যেই ফল আসতে শুরু করে। তিন মাসের মধ্যেই পরিপক্ক হয় সাম্মাম ফল। এ ফলটি এলাকায় নতুন, খেতে খুবই মিষ্টি এবং রসালো হওয়ায় অনেকেই কিনছেন শখের বসতবর্তী হয়ে।

সৌদি ফেরত সৌখিন কৃষক রেজাউল ইসলাম বলেন, সাম্মাম ফলের তেমন একটা রোগবালাই নেই, গাছে খুব সামান্য সার ও কিটনাশক দিতে হয়। পতিত দেড় বিঘা জমিতে এগ্রো-ওয়ান বীজ কোম্পানির সহযোগিতায় প্রথমবারের মতো সাম্মাম চাষ করে ব্যাপক ফলন পেয়েছেন। ৪০শতাংশ জমিতে প্রায় এক টন ফল উৎপাদন হয়েছে। একেকটি সাম্মাম ফল ২থেকে আড়াই কেজি ওজন হয়। প্রতি কেজি সাম্মাম পাইকারী ১৫০ টাকা কেজি এবং খুচরা ২০০-২৫০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন তিনি। এগ্রো-ওয়ান কোম্পানি আমাকে টেকনিক্যালসহ ফলটি বাজারজাত করতে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন। তাই আমাকে আর ফলটি বাজারজাত করার জন্য আলঅদা করে ঝামেলা পোহাতে হয়নি।

তিনি আরো বলেন, তরমুজ জাতের সাম্মাম ফল উৎপাদনে তেমন কোন বেগ পেতে হয়নি। বীজ রোপন থেকে পরিচর্যা উপর গুরুত্ব দিতে হয়েছে। এছাড়া সময় মতো জৈব সার দেওয়া হয়। এভাবে তিন মাস যেতে না যেতেই সাম্মাম পরিপক্ক ফলে রূপ নেয়। এই ফলের বেশ চাহিদা রয়েছে। নতুন জাতের এই ফল চাষ করলে সবাই লাভবান হবে বলে আমি মনে করি।

স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন আমি নারায়নগঞ্জে একটি কোম্পানিতে চাকরী করতাম। কিন্তু বাড়ির পাশে এই বিদেশী ফল চাষ করে রেজাউল অনেক লাভবান হয়েছেন। পতিত জমিতে কম পরিশ্রম ও খরচে সহজেই এই ফলটি চাষ করা সম্ভব হচ্ছে। তাই আমিও এগ্রো-ওয়ান বীজ কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আমিও আমার কিছু জমি প্রস্তুত করেছি। অচিরেই আমিও সাম্মাম ফল চাষ শুরু করবো।

এগ্রো-ওয়ান কোম্পানির মূখপাত্র সামিউল ইসলাম বলেন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক করোনা ভাইরাসের মধ্যে কোন জমিই ফেলে না রেখে আমরা স্মার্ট কৃষিতে লক্ষপ্রতি প্রকল্পের মাধ্যমে রেজাউল ইসলামকে অনুপ্রানিত করে এই সাম্মাম ফল চাষ শুরু করা হয়েছে। আমরা কৃষককে সকল প্রকারের সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করছি। একজন কৃষক এই ফল চাষ করে আড়াই মাসের মধ্যে ২-৩লাখ টাকা আয় করতে পারেন। তাই বেকার বসে না থেকে আর পতিত জমি ফেলে না রেখে নতুন নতুন জাতের এই ফসলগুলো চাষ করে সহজেই বেকারত্বকে জয় করতে পারেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ ড. রুবীআহ নূর আহম্মেদ বলেন, বাংলাদেশে এই প্রথম মরুভ’মির তরমুজ জাতীয় ফল সাম্মাম চাষ করেছেন কৃষক রেজাউল ইসলাম। এই ফল চাষ করে তিনি অভাবনীয় সফলতা পেয়েছেন। তার দেখাদেখি অনেকেই এই ফল চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করে আসছি। বাংলাদেশে এই ফল চাষের সম্ভাবনা অনেক ভালো। তাই নতুন হিসেবে এই ফল চাষ করে খুব সহজেই লাভবান হওয়া সম্ভব। ‘সাম্মাম’ তরমুজের মতো অনেকটা সংকর জাতের এই ফল গাছে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম। ফলনও বেশ ভালো। খেতে সু-স্বাধু এই ফলের বেশ চাহিদাও রয়েছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে