রাজশাহী বিএডিসির আমন বীজের ভর্তুকি নয়ছয়

প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২০; সময়: ১০:৫৪ অপরাহ্ণ |
রাজশাহী বিএডিসির আমন বীজের ভর্তুকি নয়ছয়

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাকালিন কৃষকের দুর্ভোগের কথা ভেবে এবারে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)’র আমন বীজেও সরকার ভর্তুকি দিয়েছে। কিন্তু প্রচারণা কম থাকায় ও সচেতনতার অভাবে এবং ওই বিভাগের যুতসই পদক্ষেপ ও কিছু অসাধু ডিলারদের অসততার কারণে চাষিরা সরকার কর্তৃক এই ভর্তুকির সুফল পাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ রাজশাহী অঞ্চলে বিএডিসি’র আমন বীজে সরকারকে প্রায় ৪০ লাখ টাকা ভর্তুকি গুণতে হয়েছে।

করোনা সংকট মোকাবেলায় সরকার নানা ধরণের পদক্ষেপ নিচ্ছে। সরকার জনসাধারণের দুর্ভোগ নিরসনে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে জনকল্যাণমূলক কাজ করছে। বিশেষ করে কৃষি ক্ষেত্রে সহজ শর্তে ঋণ এবং বিনামূল্যে সার-বীজ সরবরাহ করছে। এছাড়াও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)’র আমন বীজেও সরকার ভর্তুকি দিয়েছে। সেই হিসাবে বিএডিসি’র আমন ধানের বীজে প্রতিকেজি নির্ধারিত মূল্য থেকে ১০ টাকা ভূর্তকি পাবে কৃষক। এব্যাপারে প্রান্তিক কৃষকদের জানানোর প্রয়োজনই মনে করেননি বিএডিসির বীজ বিপনন কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও উপজেলার কৃষিবিভাগও কোন উদ্যোগ নিয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া যায়নি।

এ অঞ্চলে বোরো কাটা-মাড়াই একেবারে শেষ পর্যায়ে। শুরু হচ্ছে আমন মৌসুম। কৃষকেরা আমনের বীজতলা পরিচর্যাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আর আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আমন ধান রোপন শুরু হবে। বিশেষ করে বরেন্দ্র অঞ্চল তানোর ও গোদাগাড়ীতে আগাম ধানের চাষ হয়ে থাকে।

তবে, চলতি মৌসুমে আমন চাষে বাড়তি আগ্রহ আছে কৃষকের মধ্যে। গত কয়েক বছরের মধ্যে এ বছর বোরো ধানে ভাল দাম পেয়েছেন চাষিরা। ফলনও ভাল হয়েছে। তাই এবার ধান চাষ করে কৃষকেরা লাভের মুখ দেখেছেন। শুধু ধানেই নয়, চলতি বছর মুসুর, সরিষা, আলুসহ অন্যসব রবিসশ্য বাজার বেশ চড়া শুরু থেকেই। এখন সবজিতে ভাল দাম পাচ্ছেন তারা। এতে খুশি চাষিরা।

রাজশাহীসহ বরেন্দ্র অঞ্চলে চলতি মৌসুমে জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝা মাঝি সময় থেকে আমন চাষে প্রস্ততি শুরু করেছেন এ অঞ্চলের কৃষকেরা। আষাঢ় মাস শুরুর আগেই বৃষ্টি হতে শুরু হয়েছে এ অঞ্চলে। তাই বৃষ্টি পেয়েই জোরেশোরে বীজতলা পরিচর্যা ও সার প্রয়োগ শুরু করেছেন তারা। আষাঢ়ের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বীজতলা থেকে চারা তুলে আমন চারা রোপন শুরু করবেন ক্ষেতে।

তবে বেশীরভাগ চাষি করোনা পরিস্থিতিতে একটু দেরিতে এবারে আমন বীজ বুনছেন। পুরো আষাঢ় মাস জুড়েই আমন বীজ বুনবেন তারা। এবারে সরকার বিএডিসি’র আমন বীজের ওপর ভর্তুকি দিয়েছেন। প্রতি কেজি বীজে ১০ টাকা। কিন্তু প্রচারণার অভাবে ও অনেক ডিলারের অসততার কারণে চাষিদের বিএডিসি’র নির্ধারিত মূল্য গুণতে হচ্ছে। বিএডিসি’র বস্তায় বীজের আগের দাম লেখা আছে। এরপরেও অনেকে বেশী দামে বিক্রি করছে। অথচ সরকার বস্তায় নির্ধারিত প্রতিকেজি মূল্য থেকে ১০টাকা করে ভর্তুকি দিচ্ছে। কিন্তু অনেক ডিলার তা করছেন না। আবার সরকারের প্রতি কেজিতে ভর্তুকির বিষয়ে ডিলারের দোকানে ব্যানার টাঙ্গানোর কথা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না। এতে কৃষকরা এ ব্যাপারে অনেকটা অন্ধকারে রয়েছেন। এ সুযোগে অসাধু ডিলাররা বেশী মুনাফা করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কিছু অসাধু ডিলার বিএডিসি থেকে বীজ নিয়ে কৃষক পর্যায়ে না দিয়ে বেশী লাভে খুচরা দোকানে বিক্রি করেছেন। তবে অনেক ডিলার সরকারের ভুর্তকি দিয়েও বীজ বিক্রি করছেন। বর্তমানে বাজারে বিএডিসির বীজের দামের চেয়ে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বীজের দাম অনেক বেশী। ফলে কৃষকরা বস্তার গায়ে সাঁটানো দামকে প্রকৃত দাম মনে করে বীজ কিনছেন। রাজশাহী জেলায় মোট বিএডিসির ডিলার রয়েছে ১৭৭ জন।

বিএডিসি রাজশাহী অঞ্চল (বীজ বিপনন) থেকে জানা গেছে, এ অঞ্চলের চার জেলায় ৩৮৫ মেট্রিকটন আমন বীজ বরাদ্দ রয়েছে। যারমধ্যে রাজশাহী জেলায় ১৬৭ টন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৫৫ টন, নাটোর জেলায় ৮৩ টন ও নওগাঁ জেলায় ৮০ টন। প্রতি কেজিতে ১০ টাকা হিসাবে সরকার ভুর্তকি দিয়েছে ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর পুরো দেশে ১৯ কোটি ৫৩ লাখ ৩৪ হাজার ৮৩০ টাকা।

সরকার কর্তৃক ভর্তুকি কৃষক পর্যায়ে না পাওয়ার বিষয়ে বিএডিসি’র উপ-পরিচালক (বীজ বিপনন) আব্দুর রহমান বলেন, এমনটি হওয়ার কথা নয়। চাষিরা জাতীয় পরিচয় পত্র দিয়ে বিএডিসি’র নির্ধারিত মূল্য থেকে প্রতিকেজিতে ১০ টাকা কমে বীজ পাবেন। এখানে কোন অনিয়ম করার সুযোগ নাই। ডিলারের দোকানের সামনে ব্যানার টাঙ্গানোর কথা রয়েছে। এরপরেও শর্ত ও নিয়মের ব্যাত্যয় হলে তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রাসরণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় আমনের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ৭৩ হাজার ৩৩৫ হেক্টর জমিতে। তবে, ধানের দাম ভালো থাকায় লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে বেশি আমন আবাদ হবে বলে কৃষি কর্মকর্তারা আশা করছেন। এর জন্য জেলায় ইতিমধ্যে বীজতলা হয়েছে ৩ হাজার ৬৬৭ হেক্টর জমিতে। এখনো চাষিরা বীজ তলা তৈরী করছেন। রাজশাহী অঞ্চলে (রাজশাহী, নঁওগা, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা) এবার আমন আবাদের লক্ষমাত্রা ৩ লক্ষ্য ৫০ হাজার হেক্টরের উপরে। এই জন্য এ অঞ্চলে বর্তমানে বীজতলা হয়েছে ১৮ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে