বস্তা ভর্তি ধান নিয়ে ঘরে ফিরতে শুরু করেছে শ্রমিকেরা!

প্রকাশিত: মে ১৮, ২০২০; সময়: ৯:২৩ অপরাহ্ণ |
খবর > কৃষি
বস্তা ভর্তি ধান নিয়ে ঘরে ফিরতে শুরু করেছে শ্রমিকেরা!

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঘা : বাইরের উপজেলা থেকে বস্তাভর্তি ধান নিয়ে নিজ ঘরে ফিরতে শুরু করেছে শ্রমিকেররা। স্থানীয় কৃষি অফিসের প্রত্যয়নপত্র নিয়ে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে নিজ উপজেলার বাইরে এবার ধান কাটতে যান, রাজশাহীর বাঘা-চারঘাট উপজেলার ১৯ হাজার ৫০০ শ্রমিক। এর মধ্যে বাঘা উপজেলা থেকে ১২ হাজার ৫০০ শ্রমিক ও চারঘাট উপজেলা থেকে ৭ হাজার শ্রমিক এলাকার বাইরে গিয়েছে ধান কাটতে।

শ্রমের মজুরির সেই ধান নিয়ে এলাকায় ফিরে আসছেন শ্রমিকেরা। কৃষি বিভাগের প্রত্যাশা, পারিশ্রমিক হিসেবে তারা যে ধান নিয়ে আসবেন, তার চালের মূল্য হবে প্রায় ৩০কোটি টাকা।

সোমবার (১৮ মে) বস্তা ভর্তি ধান নিয়ে নিজ এলাকায় ফিরেছেন উপজেলার আরিফপুর গ্রামের আনারুল ইসলাম। ৩সপ্তাহ আগে নাটোরের সিংড়া এলাকায় থেকে ধান কাটতে গিয়েছিলেন তিনিসহ ১৫ জন শ্রমিক। শ্রমের মূল্যে হিসেবে প্রত্যেকে ধান পাবেন প্রায় ১৮ মণ করে। ইতিমধ্যে আত্রাই থেকে ধান কেটে ফিরেছেন পীরগাছা গ্রামের ১৫ জন শ্রমিকের একটি দল।

এই দলের শ্রমিক আব্দুর রহিম বলেন, মাত্র পাঁচ মণ করে ধান নিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন। ধান কাটতে যাওয়ার সময় চেয়ারম্যানের কাছ থেকে সনদ নিতে ২০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, এবার শ্রমিকদের পাশাপাশি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনে ধান কেটে মাঠ সাফ করে দিয়েছে। এখন গাড়ি-মহিষ নিয়ে গিয়ে তারা ফিরে এলেন। কি করে চলবেন তাই নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

১৬ জনের একটি দল নিয়ে নাটোরের নলডাঙ্গা থানায় ধান কাটতে গিয়েছিলেন, বাঘার শ্রমিক লালন প্রামাণিক। একেকজন ১৪/১৫ মণ করে ধান নিয়ে আসতে পেরেছেন। বাতাসে পড়ে যাওয়া ধান মেশিনে কাটা যায়নি। তারাই কেটেছেন। শাহজাহাল আলীসহ ৯ জন শ্রমিক নওগাঁর আত্রাই উপজেলা থেকে এলাকায় ফিরেছেন। পারিশ্রমিক হিসেবে তারা এবার প্রায় ১০ মণ করে ধান পাবেন।

তাদের একজন বলেন, তার মালিকের ২৫ বিঘা জমিতে জিরা ধান ছিল। ব্রি-২৯ জাতের ধান পরে পাকবে। ওই ধান মেশিনে কাটবে।

মাঠ পর্যায়ে খোজ নিয়ে জানা গেছে, ১৫ জন শ্রমিক নিয়ে নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় রয়েছেন বাঘা উপজেলার শ্রমিক হেলাল উদ্দিন। তারা যে মালিকের ধান কাটছেন তার ৪৫ বিঘা ধান রয়েছে। গত সোমবার পর্যন্ত প্রায় ৩৫ বিঘা জমির ধান কেটেছেন। সব ধান কাটা হলে প্রায় ১৩ মণ করে পারিশ্রমিক পাবেন। একই এলাকায় ১৬ জনের দল নিয়ে ধান কাটছেন বাঘার শ্রমিক মফিদুল ইসলাম। তার মালিকের ধান রয়েছে ৫০ বিঘা । বৃষ্টিতে ধান পড়ে গেছে। কাটতে কষ্ট হচ্ছে। এই ধান মেশিনে কাটতে পারবে না। তারা ১৪ থেকে ১৫ মণ ধান পেতে পারেন বলে আশা করছেন। একই গ্রামের শ্রমিক রেজাউল করিম নওগাঁর রানিনগরে ১২ জন শ্রমিককে নিয়ে ধান কাটছেন। তার দাবি তারা এবার প্রায় ২০ মণ করে ধান নিয়ে আসতে পারবেন।

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ সুলতান দাবি করেছেন, একজন শ্রমিক ধান কাটার পারিশ্রমিক হিসেবে অন্তত ১৫ মণ ধান নিয়ে আসবেন। এতে ১০ মণ চাল হবে। ৪০ টাকা কেজি হিসেবে ধরলে একজনের চালের দাম হবে ১৬ হাজার টাকা। এই হিসেবে ১৯ হাজার ৫০০ শ্রমিকের চালের মূল্য হয় ৩১ কোটি ২০ লাখ টাকা।

এদিকে শ্রমিকদের পাশাপাশি এবার কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনও নামানো হয়েছে। এই মেশিন এক ঘণ্টায় এক একর জমির ধান কেটে বস্তায় ভরতে পারে। এতে সাড়ে আট লিটার ডিজেল ও চালকের পারিশ্রমিক মূল খরচ। মেশিনগুলো সরকারের খামার যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প থেকে ভর্তুকির মাধ্যমে কৃষকদের দেওয়া হয়েছে। ২৮ লাখ টাকার মেশিনে সরকার ১৪ লাখ টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। নিজের ধান কাটার পাশাপাশি কৃষকেরা এই মেশিন দিয়ে ভাড়ায় অন্যের ধান কাটছে। তবে মাঠ পর্যায়ে খবর নিয়ে জানা গেছে, কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন নামানোর কারণে এবার শ্রমিকেরা ওই পরিমান ধান কাটার সুযোগ পাচ্ছেন না।

বাঘা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ২টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রথমে নিজ এলাকায় শ্রমিকদের পাশাপাশি ২টি কম্বাইন্ড হারভেস্টারে ধান কাটা শুরু হয়েছে। তবে শুকনা ও সমতল জমিতে মেশিন দিয়ে যতটা ধান কাটা যাবে, নরম ও অসমতল জমিতে ওইভাবে কাটা যাবে না।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে