গোদাগাড়ীতে বিষমুক্ত সবজি গ্রাম

প্রকাশিত: মে ১৭, ২০২০; সময়: ২:৪৮ অপরাহ্ণ |
খবর > কৃষি
গোদাগাড়ীতে বিষমুক্ত সবজি গ্রাম

এম. আব্দুল বাতেন, গোদাগাড়ী : মুজিব বর্ষে যখন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন উদ্যোগে ভরপুর তখন রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার তিন গ্রামে নেওয়া হয়েছে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। বিশ্বের চলমান করোনা মহামারিও যোগ হয়েছে মুজিব বর্ষের সাথে। এই যখন অবস্থা তখন গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিস মুজিব বর্ষ ও করোনা হতে নিরাপদ থাকতে বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি গ্রাম গড়ে তুলেছেন।

এই ব্যাতিক্রমী উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে এলাকার লোকজন। নিজেদের বসত বাড়ীর সামনে কোন রকম কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই বিষমুক্ত এমন নিরাপদ সবজি বাগান গড়ে তুলেছে নারীরা। তা নিজের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে ও বিক্রয় করে পরিবারে স্বচ্ছলতা আনছেন তারা।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়নের কালিদিঘি, দেওপাড়া ইউনিয়নের ঈশ্বরীপুর ও রিশিকুল ইউনিয়নের চব্বিশনগর গ্রামে গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে এই তিনটি গ্রামকে মুজিব বর্ষের উপহার হিসেবে বিষমুক্ত ‘‘নিরাপদ সবজি গ্রাম’’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

বুধবার মাটিকাটা ইউনিয়নের কালিদিঘি গ্রামের ৫০টি পরিবারকে কোন রকম কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার ছাড়া সম্পন্ন বিষমুক্ত ভাবে নিরাপদ সবজি উৎপাদনে উদ্ধুদ্ধ করা হয়েছে।

গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শফিকুল ইসলাম গ্রামে ঘুরে ঘুরে নারীদেরকে বাড়ীর উঠানের সমানে বীজ সহায়তা ও সকল পরামর্শ দিয়ে সবজি বাগান গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তাতেই সারা দেন গ্রামের নারীরা। বসত বাড়ীর সামনে গড়ে তুলেছেন হরেক রকমের সবজি। দুই হতে তিন মাস আগে এই সবজি গাছ লাগানো হলে এখন তা ফল আসতে শুরু করেছে।

কালিদিঘি গ্রামের কৃষাণী নাসরিন বেগম জানান, দুই মাস আগে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমাদের বিনা পয়সায় কোরলা, পটল, লালশাক,ডাটাশাক, বেগুন, শসা, লাউ, কুমড়া, পেঁপে, লিচু, পেঁয়ারার বীজ সেই সাথে মাল্টা, লেবু ও বেদানার চারা দিয়ে বসত বাড়ীর সমানে বাগান করতে বললে আমরা তা গড়ে তুলি। এখন এসব সবজি আমরা নিজেরা পরিবারে খাই সেই সাথে বাজারে বিক্রয় করি। আমার স্বামী একজন কৃষক ছেলে মেয়ে নিয়ে সংসারের খরচ বহন করতে কষ্ট হতো। এখন আমরা এসব সবজি বিক্রয় করে সংসারের কষ্টটা অনেকটাই দূর করেছি বলে জানান।

একই গ্রামের কৃষাণী কাজল রেখা। তিনি জানান, আমার বাড়ীর সামনে কপি ও শাক লাগানো ছিলো। কৃষি অফিসার শফিকুল ইসলাম একদিন আমাকে দেখে বলে আমি বিভিন্ন সবজির বীজ দেব এবং পরামর্শ দেব সেই মোতাবেক সবজি উৎপাদন করতে হবে। আমার স্বামীর সাথে পরামর্শ করলে সে রাজি হয়। পরে লালশাক, কলমি শাক,শসা, পটল, কোরলাসহ বিভিন্ন সবজির বাগান গড়ে তুলি। এতো কোন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়নি। গোবরের ব্যবহার ও পোকা দমনে জৈব বালাই নাশকের ব্যবহার, সুষম সারের ব্যবস্থাপনা , ভর্মি ও ট্রাইকো কম্পোর্ট এর ব্যবহার সেক্স হরোমন ফাঁদ ও সাদা ও হলুদ ষ্টিকি ট্রাপ ব্যবহার করে নিরাপদ বিষ মুক্ত সবজি ব্যবহার করছি।

ওই গ্রামেটিতে ঘুরে দেখা যায় গ্রামের একটি মোড়ে ‘‘ মুজিব বর্ষ উপলক্ষে নিরাপদ সবজি গ্রাম’’ সাইনবোর্ড টাঙ্গানো আছে। সেই সাথে প্রযুক্তির ব্যবহারের উপদান ও ওই এলাকার উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তার নাম ও মোবাইল নং দেওয়া আছে যাতে করে যে কেউ কোন পরামর্শ সহজে নিতে পারে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি গ্রাম গড়ে তোলা প্রসঙ্গে বলেন, এটি ছিলো আমার মুজিব বর্ষ উপলক্ষে জনগণকে নিরপদ সবজি খাওয়ানো জন্য উদ্যোগ। এই গ্রামের ৫০ টি বাড়ীতে নারীরা বিষ মুক্ত সবজি বাগান গড়ে তুলেছে। আমরা তাদের বীনা মূল্যে বীজ সহায়তা ও কিভাবে কোন প্রকার কীটনাশক ও বিষ ব্যবহার না করে সবজি উৎপাদন করতে হয় তা পরামর্শ প্রদান করেছি। এখন এই গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়ীতে নিরাপদ সবজি উৎপাদন হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই উপজেলার প্রত্যেকটি ইউনিয়নে নিরাপদ সবজি উৎপাদনে আমরা কাজ করবো বলে জানান।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে