নাটোরের ঔষধী গ্রামের সাড়ে চার হাজার কৃষক বিপাকে

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৬, ২০২০; সময়: ১২:৫৮ অপরাহ্ণ |
নাটোরের ঔষধী গ্রামের সাড়ে চার হাজার কৃষক বিপাকে

নিজস্ব প্রতিবেদক, নাটোর : করোনার প্রভাবে দেশব্যাপী দীর্ঘমেয়াদী লকডাউনের কারণে ঔষধি গ্রাম খ্যাত নাটোরের লক্ষিপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়নে উৎপাদিত অ্যালোভেরা (ঘৃতকাঞ্চন) নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সাড়ে চার হাজার চাষী। ক্রেতা না থাকায় গত একমাসে প্রায় ৮ কোটি টাকার এলোভেরা সহ বিভিন্ন ভেষজ ঔষধ জমি থেকে উত্তোলনের পর ফেলে দিতে হয়েছে। উৎপাদনের ভরা এ মৌসুমে জমিতে চাষী ও শ্রমিকদের চিরাচরিত কর্মচাঞ্চল্য নেই। এতে প্রায় সাড়ে চার হাজার চাষী, ব্যবসায়ী, হকার ও শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। লোকসান পুষিয়ে নিতে কৃষি প্রণোদনা চেয়েছে ভেষজ চাষীদের সংগঠন।

এলাকাবাসী জানায়, ঔষধি গ্রাম খ্যাত নাটোর সদর উপজেলার লক্ষিপুর খোলাবাড়িয়ার ইউনিয়নের ১৬ গ্রাম জুড়ে চাষ হয় অ্যালোভেরা, শিমুল মূল, অর্জুন, বাসকপাতা, কালোমেঘ, লজ্জাবতী, অশ্বগন্ধাসহ ২২ প্রজাতির ভেষজ উদ্ভিদ। শুধু অ্যালোভেরা চাষ হয় এক হাজার ৫০ একর জমিতে চাষ হয়। প্রতিদিন সকালে ভেষজ চাষীরা জমি থেকে এসব গাছগাছড়া সংগ্রহ করে সমিতির মাধ্যমে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যেতেন। পাশাপাশি সেগুলো বিক্রি হতো স্থানীয় হাট-বাজারে। করোনার প্রভাবে এখন সারাদেশে যানচলাচল বন্ধ। কৃষিপণ্যবাহী যান চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও অ্যালোভেরার চাহিদা কমেছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। ফলে আসছে না পাইকার এবং ঔষধ কোমপানীর প্রতিনিধিরা। করোনায় লকডাউনের কারণে বন্ধ অ্যালোভেরার বেচাকেনা। স্থানীয় হাটবাজারও বন্ধ। পাইকারি আড়তের সামনে স্তপ করে রাখা ঘৃতকাঞ্চনে (অ্যালোভেরা) পচন ধরেছে। বড় হওয়ার পরও তুলতে না পারায় জমিতেই পচে যাচ্ছে অ্যালোভেরার পাতা। ফলে এসব তুলে ডোবা নালায় ফেলে দিচ্ছেন চাষীরা। পরিণত পাতাও ডালাভর্তি পড়ে থাকছে ভেষজ দোকানগুলোতে।

লক্ষীপুর ইউনিয়নের ইব্রাহিম পুর গ্রামের চাষী আব্দুস সাত্তার বলেন, লকডাউনের কারণে কোন বচা কেনা নাই। ক্রেতা নেই তাই জমি পরিচর্যা করছিনা। এতে জমিতে আগাছা জন্মে ঘৃতকুমারী (অ্যালোভেরা) পাতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অধিকাংশ চাষী তাদের জমিতে লাগানো অ্যালোভেরা গাছের পাতা কেটে ফেলে দিচ্ছেন।

অপর চাষী কামাল হোসেন বলেন, এই ঔষধী গ্রাম থেকে আগে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ টন অ্যালোভেরা দেশের বিভিন্ন স্থানের ক্রেতারা কিনে নিয়ে যেত। লকডাউনের পর থেকে এলাকায় কোন বেচা কেনা নেই। ফলে জমিতেই থেকে যাচ্ছে অ্যালোভেরার পাতা। জমি ঠিক রাখতে পাতাগুলো ভেঙ্গে ডোবা নালায় ফেলে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া শিমুল মূল, অর্জুন, বাসকপাতা, কালোমেঘ, লজ্জাবতী, অশ্বগন্ধাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ভেষজ উদ্ভিদও বিক্রি করতে পারছেন না এখানকার ভেষজ চাষীরা। এসব ভেষজ উদ্ভিজও পড়ে থেকে নষ্ট হওয়ায় তা ফেলে দিতে হচ্ছে। এতে করে গত এক মাসে ৫ থেকে ৮ কোটি টাকার অ্যালোভেরা সহ বিভিন্ন ভেষজ ঔষধ জমি থেকে ফেলে দিতে হয়েছে।

ইউনিয়নের বরবরিয়া গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, তিনি দশ বিঘা জমিতে ঘৃতকাঞ্চন (অ্যালোভেরা) চাষ করেছেন। লকডাউনের জন্য সেগুলো বিক্রি করতে পারছেননা। কামলা দিয়ে পাতা কেটে জমির পাশের নালায় তা ফেলে দিচ্ছেন। এতে করে তিনি ক্ষতির মুখে পড়েছেন। নগদ টাকা না থাকায় কামলাদেরও নিয়মিত মজুরি দিতে পারছেননা। কামদেরও গালমন্দ শুনতে হচ্ছে। তিনি এখন ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। লকডাউনের এই এক মাসে তার যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবেনা।

জেলা প্রশাসক শাহরিয়াজ বলেন, চাষীরা চাইলে তাদের অ্যালোভেরা বাজারজাতকরণে সহায়তার করা হবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে