পাটের আঁশ ছাড়িয়ে ৪ কোটি টাকা আয়ের আশা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৩; সময়: ১:২৩ pm |
পাটের আঁশ ছাড়িয়ে ৪ কোটি টাকা আয়ের আশা

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : প্রতি বছর নড়াইলের নিম্ন আয়ের নারীরা পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজে অংশ নিয়ে বাড়তি উপার্জন করেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। চলতি মৌসুমে জেলায় পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজে ২৯ হাজার ৭৫০ জন নারী অংশগ্রহণ করেছেন। এ কাজে বাড়তি অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি ঘুচেছে বেকারত্ব। তাদের সংসারে এসেছে সচ্ছলতা। বলা যেতে পারে, এটি এখন তাদের মৌসুমি পেশা। প্রতি বছর জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাস এসব নারী পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজ করেন। চার মাসে ৪ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্য তাদের।

নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নড়াইলে চলতি বছর পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয় ২৩ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ২৩ হাজার ৬৪৫ হেক্টর জমিতে। ১৭৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ বেশি হয়েছে। জমি থেকে ৯০ শতাংশ পাট এরই মধ্যে কাটা হয়েছে। পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষাণ, কৃষাণী ও নারী শ্রমিকরা। এ কাজে মৌসুমি আয়ের সুযোগ হয়েছে ২৯ হাজার ৭৫০ জন নারীর। প্রত্যেকে দিনে আয় করছেন ৪০০-৬০০ টাকা। সাড়ে তিন থেকে চার মাস এ কাজ করে একজন নারী শ্রমিক আয় করবেন ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত। সে হিসাবে চার মাসে তাদের আয় হবে প্রায় ৪ কোটি টাকা।

নড়াইল সদর উপজেলার গোবরা সড়কের দুই পাশে পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজ করছিলেন শাপলা বেগম। তিনি বলেন, ‘৩০-৪০টি পাট দিয়ে একটি আঁটি বাঁধা হয়। এক কুড়ি (২০ আঁটি) পাটের আঁশ ছাড়িয়ে পাই ৮০-১০০ টাকা পর্যন্ত। দিনে ৮-৯ ঘণ্টা কাজ করে একজন পাঁচ-ছয় কুড়ি পাটের আঁশ ছাড়াতে পারে।’

আরেক নারী আকলিমা বেগম জানান, প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কাজ করে তার আয় হয় কোনোদিন ৫০০ আবার কোনোদিন একটু বেশি। মৌসুমের তিন থেকে সাড়ে তিন মাসে ৫০-৬০ হাজার টাকা তার আয় হয়।

সদর উপজেলার মুলিয়া সড়কের দুই পাশের চিত্রও একই। এখানে প্রতিদিন কয়েকশ নারী এ কাজে অংশ নেন। শহরের বেতবাড়িয়া গ্রামের শাহিদা বেগম (৫০) এসেছেন পাটের আঁশ ছাড়াতে। তিনি জানান, প্রতি মৌসুমে তিনি তিন-চার মাস এ কাজ করেন। এ বছরও প্রায় দুই মাস আগে পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজ শুরু করেছেন। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত প্রতিদিন তিনি এ কাজ করে রোজগার করেন ৪০০-৫০০ টাকা। সামনে আরো দুই মাস এ কাজ করবেন তিনি।

গন্ডব গ্রামের কৃষক খসরুল বলেন, ‘পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে। পাটের আবাদ বেশি হওয়ায় গ্রামের নারীরা কাজের সুযোগ পেয়েছেন বেশি। শিক্ষার্থী থেকে গৃহবধূরা এ কাজে অংশ নিচ্ছেন।’

নারী শ্রমিক চামেলী বেগম জানান, পাট থেকে তারা আঁশ ছাড়ান। আঁশ মালিকপক্ষ নিয়ে যায় এবং এ কাজে নিয়োজিত নারীরা পাটকাঠি নিয়ে যান। পরে সেগুলো তারা বিক্রি করেন।

লোহাগড়া-লাহুড়িয়া সড়কের দুই পাশে মৌসুমজুড়ে চলে পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজ। এখানে কাজ করেন নলদী গ্রামের ফজিলা বেগম। তিনি জানান, কৃষককে তারা আঁশ দিয়ে দেন, বিনিময়ে পাটকাঠি নিয়ে যান। সারা বছরের পাটকাঠি তিনি বিক্রি করেন। গত বছরের গোছানো পাটকাঠি তিনি ৫৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছিলেন।

ধোপাখোলা গ্রামের আফরোজা, সাজেদা বেগম, দুর্গা রানী জানান, প্রতি বছর জুলাই থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত অন্তত ৫০০ নারী নড়াইল-গোবরা সড়কের দুই পাশে পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজে অংশ নেন। প্রতিদিন পাটের আঁশ ছাড়িয়ে তাদের ৪০০-৬০০ টাকা আয় হয়। এ কাজ করে তাদের সংসারে কিছুটা সচ্ছলতা এসেছে।

নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক দীপক কুমার রায় বলেন, ‘চলতি বছর জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পাটের আবাদ বেশি হয়েছে। পাট মৌসুমকে কেন্দ্র করে তিনটি উপজেলার গ্রামের নারীদের অর্থ উপার্জনের সুযোগ হয়েছে। অনেক নারী সারা দিন পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজ করছেন। আবার অনেকে সাংসারিক কাজের পাশাপাশি আঁশ ছাড়িয়ে বাড়তি আয় করছেন।’

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে