পাশে আছি জানান দিতে রাশিয়া-বেলারুশে চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : টানা ৫০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালাচ্ছে রাশিয়া। আর রুশ এই আগ্রাসনে সম্পূর্ণরূপে সমর্থন জানিয়ে রেখেছে মস্কোর ঘনিষ্ঠ মিত্র বেলারুশ। এর জেরে বিশ্ব মঞ্চ থেকে একে অপরের ঘনিষ্ঠ মিত্র এই দেশ দু’টিকে একঘরে করে ফেলতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো।
এই পরিস্থিতিতে রাশিয়া ও বেলারুশ সফরে গেছেন চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। মূলত পশ্চিমা দেশগুলোর চাপের মুখে এই দুই দেশের প্রতি বেইজিংয়ের সমর্থনের কথা জানান দিতেই এই সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
সোমবার (১৪ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি শাংফু রাশিয়া ও বেলারুশ সফরে গেছেন। পশ্চিমা দেশগুলো মস্কোর ইউক্রেনে আগ্রাসন নিয়ে রাশিয়া ও বেলারুশকে যখন বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করছে তখন এই দুই মিত্রের প্রতি সমর্থন প্রদর্শনে সেখানে সফরে গেছেন তিনি।
চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে মুখপাত্র কর্নেল উ কিয়ানের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, সোমবার ছয় দিনের সফরে রওনা হয়েছেন চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি শাংফু।
এই সময়ে তিনি মস্কোতে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিষয়ক সম্মেলনে ভাষণ দেবেন এবং রাশিয়া ও অন্যান্য দেশের প্রতিরক্ষা বিষয়ক নেতাদের সঙ্গে দেখা করবেন।
রাশিয়ার সরকারি বার্তাসংস্থা তাস জানিয়েছে, ‘একটি নতুন ধরনের বহুপাক্ষিক ব্যবস্থাকে’ শক্তিশালী করাসহ পশ্চিমা পদ্ধতির বাইরে নতুন ব্যবস্থা বিকাশে ‘বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর’ অনুসন্ধানের বিষয়ে সম্মেলনে বক্তৃতা করবেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ।
এতে প্রায় ১০০টি দেশ এবং আটটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলেও জানিয়েছে তাস।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের বরাত দিয়ে তাস বলেছে, সম্মেলনে অংশ নেওয়া এসব প্রতিনিধিরা ‘একটি বহুমুখী বিশ্বব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য নিরাপত্তার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করবেন।’
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেছেন, চীন ও রাশিয়ার নেতারা ‘বিভিন্ন ইস্যুতে বিভিন্ন উপায়ে কৌশলগত যোগাযোগ বজায় রেখেছেন’।
দৈনিক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা এবং অভিন্ন উদ্বেগের বিষয়সহ বিস্তৃত বিষয়ে সুশৃঙ্খলভাবে উচ্চ পর্যায়ের মতামত বিনিময় হয়েছে।’
ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, ‘দুই দেশ চীন-রাশিয়ার ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক এই অংশীদারিত্বকে নতুন যুগে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আক্রমণের কয়েকদিন আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে দেখা করার জন্য বেইজিং সফর করেছিলেন। তবে ঠিক সেই সময়ই রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর ট্যাংকগুলো ইউক্রেনের সীমান্তে জড়ো হচ্ছিল।
উভয় নেতা সেসময় চীন-রাশিয়ার অংশীদারিত্বে ‘কোনও সীমা’ না রাখার ব্যাপারে সম্মত হন। এছাড়া ইউক্রেন আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়ার সঙ্গে চীনের অর্থনৈতিক সম্পর্কও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
অবশ্য চীন এখন পর্যন্ত রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে নিজেকে নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করে এসেছে এবং পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর থেকে সেটির নিন্দাও জানায়নি বেইজিং। এমনকি রাশিয়ার আগ্রাসনকে ‘আক্রমণ’ বলা থেকেও বিরত রয়েছে চীন।
এই পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং গত মার্চ মাসে মস্কো সফর করেছিলেন। সেসময় পশ্চিমা নেতাদের কাছে তিনি যে বার্তা দিয়েছিলেন তা ছিল- ইউক্রেনে লড়াইয়ের জন্য মস্কোকে বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।