দুর্গাপুরের দাওকান্দি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

প্রকাশিত: জুন ৪, ২০২৩; সময়: ৭:১৮ অপরাহ্ণ |
দুর্গাপুরের দাওকান্দি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, দুর্গাপুর : রাজশাহীর দুর্গাপুরের দাওকান্দি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ সহ কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির পাহাড়সম অভিযোগ উঠেছে। অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক সহ কয়েকজন শিক্ষকের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরে গত ২১ মে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন কয়েকজন এলাকাবাসী।

এছাড়া সরকারি চাকরী বিধিমালাকে বৃধাঙ্গলী দেখিয়ে অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হয়েছেন। অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগ করলেও সরাসরি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থেকে একই সাথে চাকরী এবং রাজনীতি কিভাবে করছেন তা বোধগম্য নয় অভিযোগকারীদের। দাওকান্দি এলাকাবাসীর পক্ষে লিখিত অভিযোগে স্বাক্ষর করেছেন আলমগীর হোসেন, আহাদ আলী, মিজানুর রহমান, সাইফুল ইসলাম ও শামীম রেজা।

এদিকে অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে করা লিখিত অভিযোগটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছেন রাজশাহী-৫ আসনের সংসদ সদস্য এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রফেসর ডা. মো. মনসুর রহমান।

জেলা প্রশাসকের কাছে দেয়া লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর ২০১৬ সালে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দাওকান্দি কলেজকে সরকারি বিশ^বিদ্যালয় কলেজ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে সরকার। বিগত সময়ে কলেজের পাঠদান কার্যক্রম ভালোভাবে পরিচালিত হলেও বর্তমান অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হকের একক আধিপত্যর কারনে শিক্ষার সুষ্ঠ পরিবেশ হারিয়ে গেছে। পাঠদানে মনযোগি হওয়ার চাইতে অধ্যক্ষ সহ কয়েকজন শিক্ষক রাজনীতিতে মনোনিবেশ করেছেন বেশি।

লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, কলেজের বেশ কয়েকটি একাডেমিক ভবন ও নিজস্ব সম্পত্তি রয়েছে। ভবন ভাড়া ও সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত আয়ের টাকা পূর্বে কলেজ ফান্ডে জমা করা হলেও বর্তমানে কলেজ ফান্ডের কোনো হিসাব দেননা অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক। মোজাম্মেল হক অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করার পর থেকেই নানা ভাবে কলেজটিকে অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয়স্থল হিসেবে গড়ে তুলেছেন। এমনকি অধ্যক্ষের মদদে কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারী সরকারি কর্মচারী বিধিমালার তোয়াক্কা না করে অনিয়ম দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েছেন।

অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হকের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নিয়ে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, গত বছরের ২৪ মার্চ দুর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক। অধ্যক্ষের ভাই একই কলেজের শিক্ষক আব্দুল মান্নান জয়নগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য মনোনীত হন। অধ্যক্ষের সহযোগিতায় একই কলেজের শিক্ষক আব্দুল মতিন জয়নগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে থেকে নানা অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে চলেছেন। নিয়মিত কলেজে না আসলেও শুধুমাত্র অধ্যক্ষের আজ্ঞাবহ হওয়ার কারনে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দেখিয়ে নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তলোন করেন তারা।

বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে তিনি দাওকান্দি কলেজ সহ পুরো এলাকায় একক আধিপত্য বিস্তার করেছেন।

সরকারি চাকরী বিধিমালার তোয়াক্কা না করে অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। যার পুরোটাই বিধিবহির্ভূত। কলেজটি সরকারি হওয়ার পর অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক কোনোভাবেই কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের সাথে জড়িত থাকতে পারবেন না। চাকুরী বিধিমালার ২৫ ধারায় বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকলেও বিধিবহির্ভূত ভাবে রাজনীতি এবং শিক্ষকতা একই সাথে করে যাচ্ছেন মোজাম্মেল হক। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কলেজটিকে ঘিরে নিজের রাম-রাজত্বে পরিণত করেছেন। অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগ করলেও সরাসরি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থেকে একই সাথে চাকরী এবং রাজনীতি কিভাবে করছেন তা বোধগম্য নয় অভিযোগকারীদের।

জানতে চাইলে অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক বলেন, অনেক আগেই কলেজটি জাতীয়করণ করা হলেও সরকারিভাবে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছিল না। এ কারণে উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলে আমাকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হয়। সরকারিভাবে বিষয়টি চিঠি দিয়ে আমাকে জানানো হলে এবং দল চাইলে আমি দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি নেব।

রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির লিখিত অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে মোজাম্মেল হক দাবি করেন, একটি মহল রাজনৈতিকভাবে ঈর্ষান্বিত হয়ে মান ক্ষুন্ন করতে তাঁর বিরুদ্ধে নামে বেনামে বিভিন্ন জায়গায় লিখিত অভিযোগ করছেন। কতটুকু অনিয়ম দুর্নীতি করেছেন সেটা তদন্তেই প্রমাণিত হবে বলেও দাবি করেন তিনি।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদের সাথে কথা বলতে সরকারি মুঠোফোনে দু’দিন একাধিকবার কল করে ও হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা দিয়েও তাঁর সাথে বলা সম্ভব হয়নি।

রাজশাহী-৫ আসনের সংসদ সদস্য প্রফেসর ডা. মনসুর রহমান বলেন, অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক তথ্য গোপন করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন হয়েছেন। এমনকি সাংগঠনিক প্রভাব খাটিয়ে কলেজ ফান্ডের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন মর্মে এলাকাবাসী জেলা প্রশাসক সহ তাঁর কাছেও লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তিনি সুপারিশ করেছেন বলেও জানান।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে