উন্নয়ন লক্ষমাত্রা অর্জনে শিল্প-বাণিজ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন লিটন

প্রকাশিত: জুন ৩, ২০২৩; সময়: ৭:৩৭ অপরাহ্ণ |
উন্নয়ন লক্ষমাত্রা অর্জনে শিল্প-বাণিজ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন লিটন

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: কর্মমূখী স্মার্ট নগরী গড়ে তুলতে ছয়টি ক্যাটাগরিতে ৯৯ দফার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। শনিবার ১১ টার দিকে

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষনা করেন তিনি।

ইশতেহার ঘোষনার সংবাদ সম্মেলনে ২০১৮ সালে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর পাঁচ বছরের তার উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরেন খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি আগামীতে নির্বাচিত হলে পুনরায় ব্যাপক কর্মসংস্থান এবং বেকারত্ব হ্রাস ও উদ্যোক্তা সৃষ্টি, অর্থনৈতিক, সামাজিক, মানবিক, শান্তিময় ও সমৃদ্ধ মহানগরী গড়ে তোলাসহ শিল্প-ব্যবসা বাণিজ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামো উন্নয়নের প্রতি জোর দেন তিনি।

তিনি এখাতে উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, রাজশাহী শহরের আন্তঃথানা, আন্তঃজেলা, আন্তঃমহানগর ও বহির্দেশীয় যোগাযোগের ক্ষেত্র সম্প্র্রসারণ করা আমার লক্ষ্য। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নততর না হলে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও সকল প্রকার সামাজিক ব্যবস্থাপনা ব্যাহত হয়। আমি এই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। কারণ কৃষিকেন্দ্রিক এই জনপদে শিল্প, ব্যবসা বাণিজ্য গড়ে না উঠলে উন্নয়ন লক্ষমাত্রা অর্জন বিঘ্নিত হবে। সেই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সম্প্রসারণ করে রাজশাহী মহানগরীর সমৃদ্ধি আনা আমার লক্ষ্য। এই লক্ষ্যে নিম্নোক্ত কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।

১. সোনামসজিদ-রাজশাহী-বনপাড়া-হাটিকুমরোল পর্যন্ত সড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ।
০২. কাশিয়াডাঙ্গা-কাঠালবাড়িয়া হয়ে কোর্টের ঢালান মোড় পর্যন্ত ৪ লেনের রাস্তা দ্রুত সম্পন্ন করা হবে।

৩. রাজশাহী থেকে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত ট্রেন চালুর উদ্যোগ নেয়া হবে। রাজশাহী-আব্দুলপুর রেলপথ ডুয়েল গেজে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়া হবে।

৪. রাজশাহী-খুলনা-মোংলা-পোর্ট সংযোগ গড়ে তুলতে আরো একটি আন্তঃমহানগর যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন চালু করা হবে। যাতে করে বহির্দেশীয় বাণিজ্যে আমদানি-রপ্তানি সহজীকরণ সম্ভব হয়।

৫. রাজশাহী থেকে গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ ঘাট হয়ে ভারতের ধূলিয়ান ও মায়া পর্যন্ত নৌবন্দর চালু করে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য এবং নতুন যোগাযোগ স্থাপন করা হবে।

৬. রাজশাহী টু কলকাতা ট্রেন ও রাজশাহী টু কলকাতা বিমান এবং রাজশাহী টু কলকাতা সরাসরি বাস সার্ভিস চালু করা হবে। এছাড়াও রাজশাহী থেকে রহনপুর হয়ে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল দিয়ে নেপাল পর্যন্ত ট্রেন যোগাযোগের উদ্যোগ নেয়া হবে।

৭. রাজশাহী বিমানবন্দর সম্প্রসারণ কাজ চলমান। রাজশাহী-কক্সবাজার বিমান যোগাযোগ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। প্রয়োজনে সাপ্তাহিক ট্রিপ বৃদ্ধি করা হবে।

৮. রাজশাহী বিমানবন্দর থেকে কার্গো বিমান চালুর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যান্য দেশে রাজশাহী অঞ্চলের কৃষিজাতপণ্য, শিল্পজাতপণ্য রপ্তানির ব্যবস্থা করা হবে। এর জন্য কনটেইনার অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। রাত্রিকালীন বিমান ওঠানামার জন্য বিমানবন্দরের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ ও আলোকায়নের ব্যবস্থা করা হবে।

৯. সিটি অ্যাপস চালু করে নগর পরিসেবা সংক্রান্ত বিষয়ে নগরবাসীর পরামর্শ ও মতামত গ্রহণ করার উদ্যোগ নেয়া হবে।

১০. নগরীতে ২টি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। নতুন আরো ৫টি নির্মাণ করা হবে।
১১. রাজশাহী বিসিক-২ এ শিল্প কলকারখানা স্থাপন ও দ্রুত চালু করার উদ্যোগ নেয়া হবে।
১২. ট্যানারি শিল্প ও লেদার ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক স্থাপন করা হবে।

১৩. রাজশাহীতে মাঝারি, কুটিরশিল্প ও ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে স্থায়ী পণ্যমেলা প্রাঙ্গণ চালু করা হবে।

১৪. আম ও অন্যান্য ফলমূলসহ উৎপাদিত কৃষিজাত পণ্য সংরক্ষণ ও বিপণনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হবে।

১৫. ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প ক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নেয়া হবে।
১৬. ব্যবসাবান্ধব নিরাপদ পরিবেশ বা নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হবে। যেন বিদেশি বিনিয়োগকারীগণও বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ হন।

১৭. বাজার ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যবসায়ী, জনগণ ও প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের ব্যবস্থা করা হবে। এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারী ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করা হবে।
১৮. মহানগরীর সকল বাজারের পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে।

১৯. মহানগরীর বাজার ও অন্যান্য ভবনে অগ্নিনির্বাপণের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বহুতল ভবনে অগ্নিনির্বাপণের জন্য ল্যাডার মেশিনসহ রাজশাহী ফায়ার সার্ভিসের অন্যান্য সক্ষমতা বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নেয়া হবে।

২০.পিপিপির-আওতায় বহুতল বাজারের নির্মাণকাজ দ্রুত সমাপ্ত করা এবং সাহেব বাজার, তালাইমারি, বিনোদপুর, লক্ষীপুর, কোটর্, নওদাপাড়া, শালবাগান, ভদ্রা ও অন্যান্য সমস্ত বাণিজ্যিক এলাকায় নতুন বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে।

২১. নওদাপাড়ার সন্নিকটে একটি পাইকারি সবজি ও মৎস্য বাজার গড়ে তোলা হবে।
২২. সরকারি সহায়তায় স্বল্প আয়ের মানুষের আবাসন সমস্যা নিরসনের জন্য ৫০০/৬০০ বর্গফুটের বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে।

২৩ নগরীর বিভিন্ন মৌজায় খাসজমি চিহ্নিত করণ ও তালিকা তৈরি করা হবে।
২৪. রাজশাহীর পর্যটন মোটেলকে স্টার মানে উন্নীত করা হবে। নতুন নতুন স্টার মানের হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে সমন্বয়ের মাধ্যমে স্থাপন করা হবে।

২৫. প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নগরীতে একটি কেন্দ্রীয় স্লটার হাউজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে। এছাড়াও নগরীর শহরতলীতে ছোট ছোট স্লটার হাউজ স্থাপন করা হবে।
২৬. সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট, বরেন্দ্র মিউজিয়াম, ফায়ারব্রিগেড, সদর হাসপাতাল, ঘোষপাড়া, চৌদ্দপাই মোড় প্রশস্তকরণের উদ্যোগ নেয়া হবে।

২৭. একটি জিলেটিন ফ্যাক্টরি তৈরি করার উদ্যোগ নেয়া হবে।
২৮. অটোরিক্সা স্ট্যান্ড নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে।
২৯. প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হবে।

ইশতেহার ঘোষণার সময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্ঠা পরিষদের সদস্য প্রফেসর আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বিএমডিএর চেয়ারম্যান আক্তার জাহান, নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল, জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল কুমার সরকার, মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি লিয়াকত আলী লিকুসহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের নেতৃত্ববৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে