বাড়ির ছাদে শত প্রজাতির শাপলা ও পদ্মফুল

প্রকাশিত: জুন ৩, ২০২৩; সময়: ১২:৫৬ অপরাহ্ণ |
বাড়ির ছাদে শত প্রজাতির শাপলা ও পদ্মফুল

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বাসার ছাদে দেশ-বিদেশের ৪০ প্রজাতির শাপলা ও ৫০ প্রজাতির পদ্মফুল চাষ করে তাক লাগিয়েছেন মেহেরপুরের সাইফুজ্জামান রিজন।

এই ছাদ বাগানে চাষ করা লাল, সাদা, বেগুনি ও সবুজসহ বাহারি রংয়ের পদ্ম ও শাপলা ফুল বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা আয় করছেন তিনি। আগামীতে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের কথা জানালেন এই উদ্যমী যুবক।

মেহেরপুর শহর থেকে ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে ভারতীয় সীমান্তের কোল ঘেঁষে অবস্থিত ষোলমারি গ্রাম। প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুল শিক্ষক আবুল হাশেমের ছেলে সাইদুজ্জামান রিজন সবেমাত্র কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন।

ছোটবেলা থেকেই জলজ ফুলের প্রতি ভালোবাসা ছিল তার। সেই ভালোবাসা থেকেই বছর তিনেক আগে শখের বসে বদ্ধ জলাশয় ও খাল বিল থেকে কয়েক জাতের শাপলা ও পদ্মফুল নিয়ে বাড়ির ছাদে সংরক্ষণ শুরু করেন।

তখন থেকেই বিলুপ্ত প্রজাতির শাপলা ও পদ্মফুলের চারা সংগ্রহের কাজ শুরু করেন। বর্তমানে তার ছাদ বাগানে ৪০ প্রজাতির শাপলা ও ৫০ প্রজাতির পদ্মফুলের গাছ রয়েছে।

শুধু বাড়ির ছাদই নয়, উঠানেও টবে রয়েছেন শাপলা ও পদ্মফুলের সমাহার। টবের পানিতে মশক নিধনের জন্য একই সঙ্গে চাষ করছেন বাহারি প্রজাতির মাছও।

তরুণ উদ্যোক্তা সাইফুজ্জামান রিজন জানান, তার বাগানে মালিকান,তান্জা নাইট, ব্রেটি লাউ, সিয়াম পিংক, কাওসিকাওরান, বুলস আই, পাপল জয়, প্রিন্সেস টম, হেলোভোলা, স্ট্রভেন স্ট্রনসহ মোট ৪০ প্রজাতির শাপলা ও ৫০ প্রজাতির পদ্মফুল সংগ্রহ করা হয়েছে।

লাল, সাদা, বেগুনি, সবুজসহ বাহারি রংয়ের শাপলা ও পদ্মফুল ফুটেছে তার ছাদ বাগানে। রিজন জানান, বাকি আরও জাতের সন্ধান করা হচ্ছে।

প্রকৃতপক্ষে আরও কত প্রজাতির পদ্ম বা শাপলা ফুল রয়েছে তা খুঁজে বের করে ছাদ বাগান ও বড়ির আঙ্গিনা সাজানোর কথাও জানান তিনি। শখের বসে চাষ করা শাপলা ও পদ্মফুল বিক্রি করে প্রতি বছর তিনি আয় করছেন লাখ টাকা।

রিজনের ছাদ বাগানের টবে পানি দেওয়া,গাছের পরিচর্যাসহ নানা ধরনের সহযোগিতা করেন তার মা ও স্কুল পড়ুয়া ছোটবোন।

ষোলমারি গ্রামের স্কুলছাত্র রাকিবুজ্জামান বলেন, আমাদের এলাকায় বদ্ধ জলাশয় ও খালে বিলে পানি না থাকায় শাপলা ও পদ্মফুল বিলুপ্ত হয়ে পড়েছে। সাইফুজ্জামান রিজনের বাগানে নানা প্রজাতির শাপলা দেখে মুগ্ধ হই।

তিনি এতোগুলো শাপলা আর পদ্মফুলের সংগ্রহ না করলে হয়তো জানতেই পারতাম না আমাদের দেশের প্রকৃতিতে এতো সুন্দর ও বাহারি রংয়ের শাপলা ও পদ্মফুল জন্মে।

একই গ্রামের স্কুলছাত্র লিমন আহাম্মেদ বলেন, পদ্মফুলের চাকি থেকে এক ধরনের ফল পাওয়া যায় যা খেতে খুবই সুস্বাদু। এগুলো বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি হলেও আমরা বাগানে গিয়ে বিনামূল্যে খেতে পারি। রিজনের দেখাদেখি আমি আমার ছাদে বাগান করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই।

ষোরমারি গ্রামের ফকির মুহাম্মদ জানান, রিজন লেখাপড়ার পাশাপাশি দেখি বিভিন্ন জায়গা থেকে এসব নিয়ে আসে। আমরা ভাবি কি জানি কি করে সে। এখন দেখি রিজন ভিন্ন কিছু করেছে।

সে শুধু তার বাড়ির উঠান আর ঘরের ছাদের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিই করেনি, বরং আয়ের উৎস খুজে পেয়েছে। সেই সঙ্গে আমাদের গ্রামটিকেই ফুলে ফুলে সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে।

মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, ষোলমারি একটি প্রত্যন্ত গ্রাম। এটি সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম। তবুও রিজন এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে। এই তরুণ উদ্যোক্তার কাছ থেকে আসলে অনেক কিছুই জানার আছে।

তার ছাদ বাগানে ৪০ প্রজাতির শাপলা আর ৫০ প্রজাতির পদ্মফুল রয়েছে তা দেখার মতো। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তার ছাদ বাগানে কয়েকবার গিয়েছি। আমাদের পরামর্শ, সাহায্য ও সহযোগিতা তার জন্য অব্যাহত থাকবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে