প্রক্সি পরীক্ষার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি ‘প্রক্সি হোতার’ই’

প্রকাশিত: মে ৩০, ২০২৩; সময়: ১১:৪১ পূর্বাহ্ণ |
প্রক্সি পরীক্ষার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি ‘প্রক্সি হোতার’ই’

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাবি : গতবছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি পরীক্ষা দিতে এসে বায়েজিদ খান নামে এক সাবেক শিক্ষার্থী আটক হয়েছিলেন।

সে সময় তিনি জানিয়েছিলেন, তাকে প্রক্সি পরীক্ষা দেয়ার কাজ দিয়েছিলেন শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুশফিক তাহমিদ তন্ময়। এর কিছুদিন পরই তন্ময়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্যও উঠে এসেছিল সংবাদমাধ্যমে।

তবে বছর না যেতেই এই ‘প্রক্সি হোতা’ ছাত্রলীগের পরিচয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন, নকল ও প্রক্সি পরীক্ষার মতো অনৈতিক ঘটনা ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নজরদারি বাড়ানোর জন্য দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি ২০২১-২২ সেশনের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতিতে জড়িত চক্রকে গ্রেপ্তারসহ সাত দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন তিনি।

সার্বিক ঘটনার প্রেক্ষিতে গতবছরের ৪ আগস্ট দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তন্ময়কে বহিষ্কার করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ তাকে বহিষ্কার করলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তিনমাস পর অবশ্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগও বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে।

তন্ময়ের এই কর্মকাণ্ড অনেকটা প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ করার সামিল হিসেবে দেখছেন ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতারা। খোদ ছাত্রলীগ নেতারাই বলছে বিষয়টি হাস্যকর।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রোববার (২৮ মে) তন্ময় ও তার অনুসারীরা রাবি উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যদ্বয়, ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টর বরাবরও স্মারকলিপির অনুলিপি দিয়েছেন তারা।

স্মারকলিপির দাবিগুলো হলো, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে মেস মালিকদের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করা, ভর্তি পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অস্থায়ী আবাসনের পর্যাপ্ত আয়োজন করা, ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত রিকশা বা অটোরিকশা ভাড়া ও হোটেলের খাবারের বর্ধিত মূল্য আদায় বন্ধ করা।

এছাড়া ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা যেন কোনো ধরনের র‌্যাগিং ও অশালীন আচরণের শিকার না হয় তা নিশ্চিত করা, ২০২১-২২ সেশনের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতিতে জড়িত চক্রকে গ্রেপ্তার, ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন ভর্তি-ইচ্ছুক ছাত্রীদের রাত্রিকালীন হলে প্রবেশের ক্ষেত্রে যেন জটিলতার সৃষ্টি না হয় সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখা, ভর্তি পরীক্ষায় কোনো ধরনের অসাধু উপায়, নকল ও প্রক্সি পরীক্ষার মতো অনৈতিক ঘটনা যেন না ঘটে সে বিষয়ে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

তন্ময়ের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি শাকিলা খাতুন বলেন, গত বছরের (২০২১-২২ সেশন) ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি হয়েছিল। ওই সময় তদন্ত করতে গিয়ে ছাত্রলীগ নেতারা জড়িত থাকায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেটি এগিয়ে নিতে চায়নি। এই ঘটনার তদন্ত করতে গেলে আরও উপর শ্রেণির নেতারা জড়িত থাকতে পারে, প্রশাসন হয়তো সেটি ফ্ল্যাশ করতে বা দায়িত্ব নিতে চায়নি। তবে যেই ছাত্রলীগ নেতা প্রক্সিকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তিনিই যখন সাংগঠনিক পরিচয়ে প্রশাসন বরাবর স্মারকলিপি দেন, তখন সেটি চ্যালেঞ্জের সামিল হয়ে যায়।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, যে ব্যক্তি প্রক্সিকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে এর আগে প্রমাণ হয়েছে, পরবর্তীতে সেই ব্যক্তিই যখন এমন দাবি জানায়, তখন সেটা হাস্যকর বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীই নয়, আশপাশের কারও যদি কোনো বিষয় নজরে আসে, তাহলে তিনি প্রশাসনকে তথ্য দিতে পারেন। তবে স্মারকলিপি গ্রহণের সময় আমি তাকে বলেছি, তোমরা যে উপদেশগুলো এখন দিচ্ছো, ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেগুলো হাতে নিয়েছে।

মূলহোতা হিসেবে তন্ময়ের নাম উঠে আসলেও কেন তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি সে বিষয়ে তিনি বলেন, যে কেউ যে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারে। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত অভিযোগটি নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কাউকে শাস্তির আওতায় আনা আইন বিরুদ্ধ। তবে গতবার যে নামগুলো পত্র-পত্রিকায় এসেছে তারা আমাদের নজরদারিতে রয়েছে। যদি তারা এ ধরনের কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়, তাহলে এবার আর কেউ তাদের বাঁচাতে পারবে না।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে