রাজশাহীতে কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রয়োজন

প্রকাশিত: মে ২৯, ২০২৩; সময়: ৭:৪২ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীতে কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রয়োজন

মাসুদুর রহমান রিংকু : কৃষিপ্রধান রাজশাহী অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্যের উৎপাদন হয়। এখানে বিঘাপ্রতি ৬০ থেকে ৭০ মণ টমেটোর ফলন হয়। প্রতি মণ ১ হাজার টাকা হিসাবে বিঘাপ্রতি আয় হতে পারে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। ধান বা অন্য ফসল চাষে এই আয় সম্ভব নয়।

রাজশাহী অঞ্চলে টমেটো বেচাকেনাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়। অন্যদিকে, এই জেলায় প্রতিবছর ১ হাজার ৫৬১ কোটি টাকার পান কেনাবেচা হয়। ২০২০-২১ মৌসুমে রাজশাহী জেলায় আম বিক্রি হয়েছিল প্রায় ১০০ কোটি টাকার। এখানে আমসহ কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে উঠলে স্থানীয় কৃষকেরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি এই অঞ্চলে কর্মসংস্থান বাড়বে।

সরকারি প্রণোদনার মাধ্যমে এসব কৃষিপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি ও তা রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। একই সঙ্গে রাজশাহীতে কৃষিভিত্তিক শিল্পকারখানার জন্য আলাদা একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা প্রয়োজন। কৃষিভিত্তিক শিল্পের উন্নয়নের জন্য জেলাভিত্তিক আলাদা বাজেট প্রণয়নসহ কর অবকাশ, স্বল্প সুদে ব্যাংকঋণ ও আলাদা উন্নয়ন পরিকল্পনা করা দরকার বলে মনে করি।

শিল্প স্থাপনে রাজশাহী অঞ্চল এখনো বেশ পিছিয়ে আছে। রাজশাহীর দ্বিতীয় বিসিক শিল্পনগরীতে প্রতি বর্গফুট হিসাবে প্লটের জমির যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তা সারা দেশের ২৩টি শিল্পনগরীর জমির মূল্যের মধ্যে সর্বোচ্চ, প্রায় দ্বিগুণ। ফলে স্থানীয় শিল্প উদ্যোক্তারা এত উচ্চমূল্যে জমি কিনতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সে ক্ষেত্রে জমির মূল্য পুনরায় বিবেচনা করা দরকার।

রাজশাহীতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমে নিচে নেমে যাচ্ছে, ফলে এখানে একধরনের মরুকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির পরিবর্তে ভূ-উপরিস্থিত পানির ব্যবহার নিশ্চিত করে রাজশাহীকে মরুকরণ প্রক্রিয়ার হাত থেকে বাঁচাতে হবে। এ জন্য উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এই এলাকায় খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, যা জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখবে। বাজেটে এ ব্যাপারে বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন বলে মনে করি।

বর্তমানে রাজশাহীতে চাহিদার তুলনায় দ্বিগুণ পরিমাণ কার্প-জাতীয় মাছের উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু এত দিনেও এখানে মাছ প্রক্রিয়াজাত করার কোনো ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। তাই এখানে মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ জোন গড়ে তোলার পাশাপাশি মাছ রপ্তানির জন্য বাজেটে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখার সুপারিশ করছি।

রাজশাহী কৃষিপ্রধান অঞ্চল। সরকার কৃষি খাতে যে ভর্তুকি দেয়, তা অপ্রতুল। এ খাতে আরও ভর্তুকি কৃষি খাতকে শক্তিশালী করবে। সেই সঙ্গে পণ্য পরিবহনে সবচেয়ে কম খরচের মাধ্যম নৌপথ উন্নয়নের লক্ষ্যে পদ্মাসহ সংশ্লিষ্ট নদীগুলোকে ড্রেজিং করার জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন।

পাশাপাশি রাজশাহী থেকে আবদুলপুর পর্যন্ত ট্রেনের লাইন ডুয়েল গেজ, রাজশাহী বিমানবন্দর থেকে কৃষিপণ্য রপ্তানির সুবিধার্থে কার্গো বিমান চালু ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলা এবং রাজশাহী বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন ও কাস্টম হাউস স্থাপন করে এটিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা দরকার।

রাজশাহী সিল্কের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্য বিনা সুদে প্রান্তিক নারী ও কৃষককে তুঁত চাষে উৎসাহিত করা এবং শিল্প স্থাপন ত্বরান্বিত করার জন্য আগামী বাজেটে বিনা সুদে এক হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ এবং ভ্যাট ও কর রেয়াত দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি।

লেখক- মাসুদুর রহমান রিংক, সভাপতি, রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে