এমপি এনামুল হকের প্রচেষ্টায় অন্ধকার বাগমারায় শতভাগ বিদ্যুৎ

প্রকাশিত: মে ২৮, ২০২৩; সময়: ৮:৫৪ অপরাহ্ণ |
এমপি এনামুল হকের প্রচেষ্টায় অন্ধকার বাগমারায় শতভাগ বিদ্যুৎ

শামীম রেজা, বাগমারা : শেখ হাসিনার উদ্যোগ-ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ” এই কথা আর খাতা কলমে সীমাবদ্ধ নেই। শেখ হাসিনার সেই স্লোগান বাস্তবে রুপ পেয়েছে রাজশাহীর বাগমারায়। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ এই কথাটি শতভাগ বাস্তবায়িত হয়েছে বাগমারায়। বর্তমান সরকারের সময়ে ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক এমপির প্রচেষ্টায় বাগমারার প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। বিদ্যুতের এই সফলতার পিছনে রয়েছে অনেক গল্প।

বর্তমান সরকারের আমলে বিদ্যুৎ একটি বড় সাফল্য। ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের নির্বাচনী অঙ্গিকারের মধ্যে ছিল বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান। আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ মেয়াদে এ সমস্যার সমাধান হয়েছে পুরোটাই। এখন দুর্গম এলাকায় পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। বাড়ি বাড়ি জ্বলছে বিদ্যুতের আলো। বড় উপজেলা হওয়ায় শতভাগ বিদ্যুতায়িত করতে সময় একটু বেশি লেগেছে। বাগমারাবাসীর আন্তরিক সহযোগিতায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন করা সম্ভব হয়েছে ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের পক্ষে।

২০২০ সালের ২৭ আগস্ট মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাগমারা উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলায় ঘোষণা প্রদান করেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পূর্বে বাগমারায় বিদ্যুৎ ছিল সোনার হরিণ। বিএনপি-জামাত সরকারের আমলে টাকার বিনিময়ে কিছু কিছু স্থানে বিদ্যুতের পোল পাওয়া গেলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। তারবিহীন পোলগুলোর দিকে চেয়ে বাগমারাবাসীকে পার করতে হয়েছে বিএনপি-জামাত এর দুঃশাসনের পাঁচ বছর। ২০০৮ সালে বর্তমান সরকারের বিজয়ের মধ্যে দিয়ে সেই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে শুরু করে বাগমারাবাসী। অন্ধকারাচ্ছন্ন সেই বাগমারা এখন বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নতির শীর্ষে।

এলাকাবাসীর বিদ্যুৎ চাহিদা নিশ্চিত করতে ভবানীগঞ্জ উপকেন্দ্রের ক্ষমতা ৫ এমভিএ থেকে বাড়িয়ে ২৫ এমভিএ করা হয়েছে। এছাড়া আরো ১০ এমভিএ অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য হাটগাঙ্গোপাড়ায় স্থাপন করা হয়েছে ১৫ মেগাওয়াট এবং তাহেরপুরে ১০ মেগাওয়াট। অন্যদিকে মাদারীগঞ্জ বাজারে এবং ঝিকরা ইউনিয়নে ১০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য কাটাখালিতে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছেন। এর সুফলের বেশিভাগ সুবিধা ভোগ করছেন বাগমারাবাসী। বর্তমানে নাটোর গ্রীড থেকে বাগমারায় সরবরাহ করা হচ্ছে বিদ্যুৎ। সম্প্রতি একটি গ্রীড নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। এটির কাজ শেষ হলে ৬০ কিলোমিটার অতিক্রম করে আর বিদ্যুৎ আনতে হবে না। বাগমারা চলবে বাগমারা গ্রীডের বিদ্যুৎ দিয়ে।

বাগমারায় দীর্ঘ সময় মাত্র ৫৯৮ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন ছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে এসে নতুন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪০২ কিলোমিটার। বর্তমানে বাগমারা উপজেলা জুড়ে ২ হাজার কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। এ থেকে বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় এসেছে ১ লাখ ২১ হাজার পরিবার। বিগত সময়ে উপজেলার ২২ ভাগ পরিবার বিদ্যুতের সুবিধা পেয়েছে। বর্তমান সরকারের সময়ে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে ৭৮ ভাগ পরিবার। সব মিলিয়ে বাগমারায় এখন শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়েছে।

উপজেলার শতভাগ বাড়ি বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় আনতে ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের দিক নির্দেশনায় চালু করা হয়েছিল স্পট মিটারিং এর কাজ। এতে করে ওই সকল গ্রাহকদের ২৪ ঘন্টার মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। বর্তমান সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপের ফলে বাগমারার প্রতিটি পরিবারে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হয়েছে।

সাংসদের নিজস্ব বরাদ্দ থেকে ৬৭০ কিলোমিটার নতুন লাইন স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও সংষ্কার করা হয়েছে অনেক লাইন। পাশাপাশি উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিজ উদ্যোগে লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করেছেন ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক এমপি। ভবানীগঞ্জ, হাটগাঙ্গোপাড়া, শিকদারী, যাত্রাগাছি, গোয়ালকান্দি, মচমইল বাজারসহ ৪৬টি স্থানে লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বাগমারায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে উন্নত হয়েছে জীবনযাত্রার মান। প্রতিটি দেশের উন্নয়নের পূর্বশর্ত বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়নই বলে দেয় বাগমারার বর্তমান অবস্থার কথা। যে বাগমারা এক সময় অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিলো সেই বাগমারা এখন রাতের বেলায় বিদ্যুতের আলো ঝলমল করে। নির্ভয়ে পথ চলতে পারে সবাই। বিদ্যুতের বৌদলতে বৃদ্ধি পেয়েছে শিক্ষার হার। সভ্যতার নিদর্শন হলো বিদ্যুৎ। বিদ্যুতের কারনে উপজেলা জুড়ে ক্রমেই বেড়ে চলেছে বিভিন্ন কল কারখানা। বিদ্যুৎ বিহীন কলকারখানা চালাতে হতো ডিজেল দিয়ে। এতে অনেক ব্যয় হতো মিল মালিকদের।

বাগমারায় বিদ্যুতের সরবরাহ ঠিক থাকায় কম খরচে এবং দ্রুত সময়ে অনেক কিছু করা সম্ভব হচ্ছে। সেচ যন্ত্রে বিদ্যুতের ব্যবহার ঘটিয়ে অধিক ফসল উৎপাদন করছেন কৃষকরা। উপজেলার ১ হাজার ৩শত সেচ যন্ত্র ও ২০০টি মৎস্য খামারে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করে সঠিক সময়ে কৃষি জমিতে সেচ কাজ ও মৎস্য খাতের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। আগে বিদ্যুৎ সম্পর্কে মানুষের তেমন কোন ধারণা না থাকলেও বর্তমান সময়ে বিদ্যুৎ জীবনের একটি অংশে পরিবর্তন হয়েছে।

এ ব্যাপারে নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর বাগমারা জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মিনারুল ইসলাম বলেন, বাগমারা একটি বৃহৎ উপজেলা। এখানে বিদ্যুতের সরবরাহ সঠিক রাখতে ৩টি প্রধান সোর্স লাইন ও ৫০ এমভিএ ক্ষমতা সম্পন্ন ৩টি উপকেন্দ্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হচ্ছে। এর মধ্যে ভবানীগঞ্জ-২৫ এমভিএ, তাহেরপুর-১০ এমভিএ এবং হাট-গাঙ্গোপাড়ায় ১৫ এমভিএ। বর্তমানে বাগমারা উপজেলায় বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৩৪ মেগাওয়াট। সেই সাথে একটি জোনাল অফিস, একটি সাব জোনাল অফিস ও ৪টি অভিযোগ কেন্দ্রের মাধ্যমে বিদ্যুতের সকল প্রকার সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে