হাজারো একর জমি ভুমিদস্যুদের কবলে শিবগঞ্জে নদীর বুকজুড়ে সোনালী ধান

প্রকাশিত: মে ২৭, ২০২৩; সময়: ৯:১৯ অপরাহ্ণ |
হাজারো একর জমি ভুমিদস্যুদের কবলে শিবগঞ্জে নদীর বুকজুড়ে সোনালী ধান

নিজস্ব প্রতিবেদক, শিবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের এক সময়ের প্রবল খরস্রোতা চকের নদী এখন কেবল কালের স্বাক্ষী। নদীর বুকজুড়ে এখন ধানসহ বিভিন্ন ধরণের ফসলের সমারোহ। জানা গেছে- শুধু নদীর নমুনা বহন করে কিন্তু নদী নেই। এ নদীটি ছিল উপজেলার মনাকষা, বিনোদপুর, দূর্লভপুর ইউনিয়নজুড়ে।

বর্তমানে শুধু ফসল আর ফসল। নদীর তীরবর্তী এলাকার বৃদ্ধ কয়েকজন ব্যক্তির সাথে আলোচনা করে জানা গেছে- এ নদীটি প্রায় দু’শত বছর আগের। এ নদীটি ঘিরে বিনোদপুর ইউনিয়নের চৌকা বিওপি, মনাকষা ইউনিয়নের মনাকষা হাট, হুমায়ুন রেজা উচ্চ বিদ্যালয়, মনাকষা শশ্মান, আদিনা সরকারী কলেজ, মনাকষা বিওপি, দাদনচক হাট, দাদনচক পিটিআই, নীলকুঠির কারখানা, দূর্লভপুর ইউনিয়নের হিন্দু সম্প্রদায়ের জেলার বৃহত্তম তর্তিপুর মহাশ্মশান, তর্তিপুর মেলা ও তর্তিপুর ঘাটসহ ছোট বড় বিভিন্ন ধরণের শতাধিক স্থাপনা গড়ে উঠেছে।

এ নদীর তীরে ঘেঁষে মনাকষা ইউনিয়নের খড়িয়ার ও পারচৌকা গ্রামের সামনে বৃটিশ সরকার এক সময় বিরাট এলাকা জুড়ে নীলকুঠি তৈরী করে এলাকার হাজারো কৃষককে বিনা পারিশ্রমিকে নীল চাষে বাধ্য করেছিল। নীল চাষে কৃষকরা অনাগ্রহ দেখালে সহ্য করতে হতো কঠিন নির্যাতন। সরজমিনে ঘুরে এলাকার অনেকজন বৃদ্ধ জানায়, এ চকের নদী দিয়ে আগে বড় বড় নৌকায় ছিল একমাত্র যানবাহন। ৫’শ মনী নৌকা যোগে দূরদূরান্ত থেকে ব্যবসা করতে আসতো বিভিন্ন ধরণের ব্যবসায়ী। এ চকের নদীর তীর ঘেঁষে হিন্দুদের তীর্থস্থান গঙ্গাস্নান ও তর্তীপুর ঘাট। এখানে প্রতিবছরই উত্তরবঙ্গের হাজারো হিন্দু ধর্মাবম্বীরা গঙ্গাস্নান করতে আসে। সেদিন বড় ধরণের মেলাও বসে এখানে। এলাকাবাসী জানায়, প্রায় ৩০ কিলোমিটর দীর্ঘ এ নদীটি চৌকা বিওপির অধীনস্থ সীমান্ত এলাকা হয়ে ভারত থেকে বয়ে এসে তর্তিপুর ঘাট পার হয়ে মহান্দা নদীতে মিশেছে। এ নদীর উপর দিয়ে বর্তমানে ৫-৬টি ব্রীজ রয়েছে।

যে ব্রীজগুলোর তলা জুড়ে এখন ভূমিদস্যুরা দখল করে ফসল উৎপাদন করছে। প্রবীণ জেলেদের ভাষ্য- এ নদী যখন প্রবাহমান ছিল, তখন হাজারো জেলে নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতো। অনেকে শুধু নৌকা বেয়েই জীবন জীবিকা নির্বাহ করতো। এখন এগুলো শুধু কাল্পনিক কাহিনী। কারণ বর্তমানে নদীর নমুনা কিছুই নেই। জানা যায়, দেশ স্বাধীনের পর পরই ১৯৭২ সালে ভূমি রের্কডের সময় এ নদীর হাজার হাজার একর জমি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে স্বাধীনতার বিরোধীরই নিজ নামে রের্কড করিয়ে নেই এবং ধীরে ধীরে দখল করে কিছু হস্তান্তর করে।

পাশাপাশি কিছু নিজের নামে রেখে আবাদ করে খাচ্ছে। এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভুমি) জুবায়ের হোসেন বলেন, বর্তমানে খাস ও নদীর জমি দখল মুক্ত করার কাজ চলছে। বেশ কিছু খাস জমি উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযান অব্যহত আছে। তদন্ত সাপেক্ষে সকল খাস জমি ও নদীর জমি দখল মুক্ত করে সরকারের নিয়ন্ত্রণে এনে জনস্বার্থে ব্যবহার করা হবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে