বাগমারার সেই আ.লীগ নেতাকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা, চাকরিচ্যুতের নির্দেশ

প্রকাশিত: মে ২১, ২০২৩; সময়: ২:০৬ অপরাহ্ণ |
বাগমারার সেই আ.লীগ নেতাকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা, চাকরিচ্যুতের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বাইগাছা এলাকায় ৫০টি তালগাছ বিনষ্টের প্রেক্ষাপটে উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শাহরিয়ার আলমকে ৪ লাখ টাকা খরচা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ের অনুকূলে তাকে ওই অর্থ জমা দিতে বলা হয়েছে।

বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।

আওয়ামী লীগ নেতা শাহরিয়ার আলম করখণ্ড দাখিল মাদ্রাসার কম্পিউটার শিক্ষকও। একই সঙ্গে শাহরিয়ার আলমকে চাকরিচ্যুত করতে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। মানুষ হিসেবে শাহরিয়ার আলম সমাজে খারাপ নজির স্থাপন করেছেন বলে রায়ের পর্যবেক্ষণে এসেছে। রায় ঘোষণার সময় শাহরিয়ার আলম আদালতে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

রায়ে আদালত বলেছেন, খরচা হিসেবে ৪ লাখ টাকা বাগমারা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ের অনুকূলে ৬০ দিনের মধ্যে প্রদান করতে শাহরিয়ার আলমকে নির্দেশ দেওয়া হলো। এই অর্থ ওই এলাকায় তালগাছ রোপণ, সংরক্ষণ ও উল্লেখিত তালগাছগুলো রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা দিতে ব্যর্থ হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আইন অনুযায়ী টাকা আদায় করবেন।

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বাইগাছা এলাকায় নিজের পুকুরপাড়ে আমগাছ লাগিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা শাহরিয়ার আলম। পুকুরটি মূলত মাথাভাঙ্গা-হাটগাঙ্গোপাড়া সড়কঘেঁষা। ওই সড়কের পাশে আগে থেকেই তালগাছ লাগানো ছিল। এসব তালগাছের ছায়ার কারণে শাহরিয়ারের লাগানো আমগাছগুলো ঠিকমতো বেড়ে উঠছে না।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, নিজের আমগাছগুলো দ্রুত বড় করে তোলার জন্য তালগাছের বাকল তুলে সেখানে কীটনাশক প্রয়োগ করেছেন শাহরিয়ার আলম। এতে সড়কের পাশে থাকা অন্তত ৫০টি তালগাছ আক্রান্ত হয়।

এ নিয়ে গত ২৭ জানুয়ারিতে সংবাদ প্রকাশের পর হাইকোর্টের নজরে আসে। এর পর গত ১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের একই বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন। রুলের ওপর গত ৪ এপ্রিল চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট ১৮ মে রায়ের জন্য দিন রাখেন। এর ধারাবাহিকতায় এই রায় দেওয়া হয়।

আদালতে শাহরিয়ার আলমের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মো. জাহেদুল হক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস-আল-হারুনী এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল উম্মে মাসুমুন নেসা ও মেহেদী হাসান।

এদিকে, পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, স্বীকৃতমতে, তিনি (শাহরিয়ার আলম) একজন শিক্ষক। মানুষ গড়ার কারিগর। যে কারিগরের অন্তরে বিষের খনি- এই বিষের খনি বুকে নিয়ে শিশুদের সামনে গিয়ে দাঁড়ান ও পাঠদান করেন। এই মানুষ গড়ার কারিগরের হাতে শিশুরা নিরাপদ বলে আদালত মনে করেন না। তিনি শিক্ষকতা করার নৈতিক যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছেন।

আদালত বলেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি বলে তিনি (শাহরিয়ার আলম) উল্লেখ করেছেন। যখন কোনো ব্যক্তি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে যান, তখন ওই রাজনীতিবিদ বা কর্মীর আচরণ মানুষ ও সমাজের ওপর গভীর প্রভাব বিস্তার করে। রাজনীতিবিদ ও কর্মী সমাজের শিক্ষক। সংগত কারণে তাদের জবাবদিহি থাকে।

একান্ত ব্যক্তিগত ইস্যুটি রাজনীতির ওপর ভর করে শাহরিয়ার আলম নিজেকে সমৃদ্ধ করায় রাজনীতির ওপর একটি প্রভাব পড়েছে। তার এই কালিমা মানুষ রাজনৈতিক দলের ওপর দিতে শুরু করবে, যা সমাজ ও ওই রাজনৈতিক দলের জন্য বিপজ্জনক। ব্যক্তিগত অপরাধ কখনোই কোনো রাজনৈতিক দল গ্রহণ করতে পারে না। সে কারণে দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হয়।

এই সহসভাপতির (শাহরিয়ার আলম) রাজনৈতিক দলের আদর্শ তালগাছ কাটা নয়, তালগাছ লাগানো-উল্লেখ করে আদালত বলেন, উল্লেখিত (আওয়ামী লীগ) রাজনৈতিক দলের আদর্শের বাইরে তিনি চলে গেছেন। রাজনীতিবিদেরা সমাজের শিক্ষকস্বরূপ। সুতরাং ওই দলের রাজশাহী জেলা কমিটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তাঁর (শাহরিয়ার আলম) পদে থাকাসহ বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মত দেওয়া হলো। সূত্র- প্রথম আলো

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে