নগরীর কাজলায় ভবন নির্মাণে এক বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার হয়রানির শিকার

প্রকাশিত: মে ১৮, ২০২৩; সময়: ৭:৫৩ অপরাহ্ণ |
নগরীর কাজলায় ভবন নির্মাণে এক বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার হয়রানির শিকার

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে বাড়ছে বহুতল ভবনের সংখ্যা। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই নির্মিত হচ্ছে এসব ভবন। এসব ভবনের মালিকদের মনোভাব বেপরোয়া এবং নিয়মনীতি তারা থোড়াই কেয়ার করছেন। ফলে অপরিকল্পিতভাবেই নির্মিত হচ্ছে বেশিরভাগ বহুতল ভবন, বাড়ছে ঝুঁকি।

নগরীর কাজলা এলাকায় এমনই নির্মিতব্য ভবনের কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। এমনকি শব্দ দূষণও বাড়ছে তীব্র গতিতে। অনিরাপত্তা ও শব্দ দূষণ থেকে বাঁচতে এবং বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণের জন্য রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বরাবরে আবেদন করেছেন ওই ভুক্তভোগি পরিবার।

আবেদন থেকে জানা যায়, নগরীর ইসলামপুর দেবিশিংপাড়ায় নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার গোপালপুর পৌর সভার কালুপাড়া গ্রামের তোয়া উদ্দিনের ছেলে মো. গোলাম আজম বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন। ইতোমধ্যে চারতলার কাজ শেষ হয়েছে। তবে তিনি কোন ধরণের বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ করছেন না বলে এই অভিযোগ করা হয়। বহুতল ভবন নির্মাণে প্রশস্ত রাস্তা থাকার দরকার হলেও এখানে রয়েছে মাত্র ছয়ফুট রাস্তা। এছাড়াও ভবনের চারদিকে যতটুকু জায়গা ছেড়ে দিয়ে ভবন নির্মাণ করতে হয়-তাও মানা হয়নি। ভবন নির্মাণকালে ভবন থেকে খুয়া, ইট, বালি, রড-অর্থাৎ নির্মাণ সামগ্রী পড়ে দুর্ঘটনা না ঘটার জন্য নিরাপত্তারও কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এমনকি খুয়া ভাঙানো মেশিনের বিকট শব্দে পরিবেশ দূষণ ঘটেই চলেছে।

এতে করে পাশের মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের বাড়িতে ভবন থেকে ধুলা, বালি, ইট, খুয়া, কাঠের টুকরা সবসময় পড়ছে। যে কোন সময়ে এসব সামগ্রীতে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আতঙ্কের মধ্যে আছেন ভুক্তভোগি ওই মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা এরসাদ আলীর বয়স্ক অসুস্থ স্ত্রী নূরজাহান বেগম খুয়া ভাঙানো মেশিনের বিকট শব্দে আরো অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আর সারাদিনসহ গভীর রাত পর্যন্ত চলছে এই শব্দ দূষণের কাজ। মালিককে বার বার অনুরোধ করলেও শুনছেন না। আবার ওই পরিবারের বাড়ির ওপর দিয়ে ফলে ভূক্তভোগি ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের মাঝে এক অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনিরাপত্তা ও শব্দ দূষণ থেকে বাঁচতে এবং বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণের জন্য রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বরাবরে আবেদন করেছেন ওই ভুক্তভোগি পরিবার।

প্রকৃত অর্থে ওই ভবনটি নির্মাণের সময় বিল্ডিং কোড বা আইনের কোনো ধরনের তোয়াক্কা করেননি মালিক। একেতো প্রশস্ত রাস্তা নেই, অন্যদিকে বহুতল ভবনের চারপাশের কোড মেনে জায়গাও খালি রাখা হয়নি।

এব্যাপারে ভবনের মালিক মো. গোলাম আজম বলেন, ‘বিল্ডিং কোড মেনেই ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এক পাশে ইয়ার্ডও করা হয়েছে। ভবন নির্মাণে খুয়া ভাঙলে শব্দ হবেই। ওই পরিবার থেকে এর আগেও রাসিকে অভিযোগ দেয়া হয়েছিল। রাসিক থেকে ম্যাজিস্ট্রেট এসে পরিদর্শন করেছেন। এছাড়াও আমি অভিযোগকারিদের জমির মধ্যেই তিন ফুট জমি পাব। যার এক ফুট জমি তারা দিয়েছে।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, কিছু লোক অতিরিক্ত লাভের আশায় অনুমোদনের বাইরেও ভবন বর্ধিত করছে। আইন না মেনে তারা ভবন নির্মাণ করছেন। পাঁচতলা অনুমোদন নিয়ে সাত তলা করছেন। তারা না বুঝেই এসব করছেন। আরডিএ নিয়মিত এসব তদারকি করছে। আমাদের অভিযানে অনেকগুলো ভবনের বর্ধিতাংশ ভাঙা হয়েছে। তিনি বলেন, কোনো জায়গায় আইন লংঘনের অভিযোগ পেলে সেখানে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রকৌশলী বলেন, যথাযথ নিয়ম পালন করে অনেক ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে না। একেক জন একেকভাবে নিয়ম ভঙ্গ করছে। আবাসিক এলাকাগুলোতে পর্যন্ত অনুমোদনের বাইরে অনেক কিছু হচ্ছে। এভাবে তো পরিকল্পিত কিছু হয় না। শহর হতে হবে পরিকল্পিত। কোথায় কি থাকবে সেটা ঠিক করাই থাকবে। এখন জরিমানা করা হচ্ছে, জেল হচ্ছে, ভেঙে দেয়া হচ্ছে। এটা তো সমাধান নয়।

জানা যায়, বাংলাদেশ ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ৯৬ এর ১২ নং ধারার (১) উপধারা অনুযায়ি ৮ তলা উচ্চতার বিল্ডিং নির্মাণের ক্ষেত্রে ইমারতের সামনে কমপক্ষে ২৫ ফুট এবং ৬ তলা উচ্চতার বিল্ডিং নির্মাণের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ১৫ ফুট প্রশস্ত রাস্তা থাকা বাধ্যতামূলক। এ বিধিমালার ৮ নং বিধির ৫ উপবিধি অনুয়ায়ি উল্লেখিত ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে নিকটবর্তী সড়কের কেন্দ্র হতে কমপক্ষে ৪.৫ মিটার অথবা সড়ক সংলগ্ন ইটের সীমানা থেকে ১.৫ মিটার দূরে ইমারত নির্মাণ করতে হবে। এ ছাড়া সর্বোচ্চ ৭ তলা ভবন নির্মাণের সময় ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ অধিদপ্তর, গ্যাস, ওয়াসা ও বিদ্যুৎ বিভাগের ছাড়পত্র নেয়া বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি হাইরাইজ ভবনে ফায়ার ডিটেক্টের, স্মোক ডিটেক্টের, উচ্চগতির পানি স্প্রে সিস্টেম ও কার্বনডাইঅক্সাইড নির্গমণ সিস্টেম থাকাও বাধ্যতামূলক।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে